মেসির বার্সেলোনা ছাড়তে চাওয়ার ৭ কারণ

lionel messi
ছবি: এএফপি

সিনিয়র দলেই দীর্ঘ ১৬ বছরের সম্পর্ক। সবমিলিয়ে দুই দশক। এত বছর যে দলটিকে নিজের বাড়ি মনে করে আসছিলেন, সেই দলটিই ছাড়তে উদগ্রীব লিওনেল মেসি। হঠাৎ করে কেন এমন সিদ্ধান্ত নিতে গেলেন বার্সা অধিনায়ক? ব্যাপারটা আসলে হুট করে হয়নি। বহুদিনের ক্ষোভ জমে জমেই আজকের এ বিস্ফোরণ।

ভক্তদের মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, কি সেই কারণ? দ্য ডেইলি স্টারের পাঠকদের জন্য যে কারণগুলো কাজ করেছে তা নিম্নে তুলে ধরা হলো-

নেইমারকে ফিরিয়ে না আনা

খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নেইমারের সঙ্গে দারুণ বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল মেসির। তার সুফল এক মৌসুম যেতেই ২০১৪-১৫’তে পেয়েছিল বার্সেলোনা। কিন্তু ২০১৭ সালে কাতালান ক্লাব ছেড়ে ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইতে যোগ দেন নেইমার। এক মৌসুম যেতেই অবশ্য ভুল বুঝতে পারেন এ ব্রাজিলিয়ান। আবার বার্সায় ফেরার ইচ্ছা পোষণ করেন। বন্ধুকে হয়তো কথাও দিয়েছিলেন মেসি। ফিরিয়ে আনবেন কাতালুনিয়ায়। কিন্তু বার্সা বোর্ড ছিল নিমরাজি। কেবল মেসিকে সন্তুষ্ট করার জন্যই কয়েক দফা চেষ্টা চালায় তারা। টাকা না দিয়ে খেলোয়াড় বিনিময় করে নেইমারকে ফেরাতে চেয়েছিল বার্সা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কাড়ি কাড়ি টাকা ঢেলে নেইমারকে এনে কেন বিনা লাভে ফিরিয়ে দেবে পিএসজি? দেয়ও-নি। ক্রয় মূল্যের এক পয়সায় ছাড় দিতে চায়নি তারা। যে কারণে নেইমারেরও বার্সায় ফেরার স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তখন থেকেই অসন্তুষ্ট মেসি। নেইমারকে ফেরাতে পর্যাপ্ত চেষ্টা করা হয়নি বলেই অভিযোগ করেছিলেন তিনি। স্প্যানিশ গণমাধ্যমে এ নিয়ে নানা সংবাদও উঠে আসে।

গ্রিজমান ইস্যু

২০১৮ সালে না পারলেও ২০১৯ সালে চাইলেই নেইমারকে ফেরাতে পারত বার্সা। কিন্তু এবার মৌসুম শুরুর আগেই অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ থেকে আতোঁয়ান গ্রিজমানকে কিনে আনে তারা। ফলে আর্থিক ঘাটতিতে পড়ে দলটি। শুরুতে কিছু না বললেও পরে যখন নেইমারকে কেনার চেষ্টায় আর্থিক ঘাটতির কথা উল্লেখ করে বার্সা, তখন ব্যাপারটি পছন্দ হয়নি মেসির। পরীক্ষিত নেইমারের জায়গায় নতুন গ্রিজমানকে দলে নেওয়াটা মানতে পারেননি তিনি। তারপরও লা লিগায় পরীক্ষিত থাকায় মৌসুম চালিয়ে যান মেসি। কিন্তু গত মৌসুমে গ্রিজমানের বিবর্ণ পারফরম্যান্সে ব্যাপারটা আরও গুরুতর হয়ে ওঠে।

ভালভার্দেকে বরখাস্ত করা

রোমা ট্র্যাজেডির পর অ্যানফিল্ড ট্র্যাজেডি। বার্সেলোনা কোচ আরনেস্তো ভালভার্দের উপর তখন বেশ ক্ষেপে ছিল বার্সা বোর্ড। কিন্তু এ কোচের উপর মেসির আস্থা ছিল অগাধ। হারের জন্য নিজেদেরই দায়ী করেছিলেন এ আর্জেন্টাইন। কিন্তু পরে সৌদি আরবের রিয়াদে সুপার কাপের সেমি-ফাইনালে অ্যাতলেতিকোর কাছে হারের পর ভালভার্দেকে বরখাস্ত করে বার্সা বোর্ড। এ বিষয়টিও ভালো লাগেনি মেসির। কারণ হিসেবে মেসিকে জানানো হয়, অ্যানফিল্ড ট্র্যাজেডির পরই তাকে ছাঁটাই করার ইচ্ছা ছিল কর্তৃপক্ষের। কিন্তু একটি বাড়তি সুযোগ দিয়েছিলেন তারা। তৃতীয় দফায় এ সুযোগ আর দিতে চান না তারা। তার উপর বড় ক্লাবে অনভিজ্ঞ কিকে সেতিয়েনকে কোচ বানানোও পছন্দ হয়নি মেসিদের।

আবিদালকে বার্সা বোর্ডের সমর্থন

টানা দুইটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে অস্বাভাবিকভাবে বার্সেলোনার বিদায় নেওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তিতে ছিলেন খেলোয়াড়রা। তার উপর হঠাৎ করে চলতি বছরের শুরুতে খেলোয়াড়দের উপর তোপ দাগিয়ে বসেন ক্লাবটির তৎকালীন স্পোর্টিং ডিরেক্টর এরিক আবিদাল। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দায়িত্বহীন খেলার কারণেই দলকে হারতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তাতেই ক্ষেপে যান মেসি। পরে এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে উল্টো তোপ দাগিয়ে এমনটা বলার কারণ জানতে চান মেসি। এমনকি যে সকল খেলোয়াড় ইচ্ছাকৃতভাবে খারাপ খেলেছেন বলে মনে করেন আবিদাল, তাদের নাম প্রকাশ করার দাবিও জানান। কিন্তু আবিদালের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ আমলে নেয়নি বার্সা বোর্ড। ক্ষোভটা তখন আরও বাড়ে মেসির।

বার্তোমেউসহ অনেক পরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ

হঠাৎ করেই সামাজিক মাধ্যমগুলোতে মেসি-সুয়ারেজ-পিকেদের নামে নানা ধরণের কুৎসা রটাতে থাকে একটি বিশেষ মহল। পরে দেখা যায়, একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে এ ধরণের কুৎসা ছড়িয়ে যাচ্ছে। এ সময়ে কাতালুনিয়ান রেডিও কাদেনা সার একটি প্রতিবেদনে জানায়, আইথ্রি ভেঞ্চার নামের এক প্রতিষ্ঠানের একাধিক অঙ্গ-প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ক্লাবের বর্তমান ও সাবেক খেলোয়াড়দের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপদস্থ করার জন্য প্রচুর অর্থ ঢেলেছেন বর্তমান বার্সা সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ। যদিও পরে এ অভিযোগ থেকে মুক্তি মিলে বার্সেলোনার। কিন্তু মেসিদের ক্ষোভটা তাতে কমেনি।

সুয়ারেজকে বিদায় জানিয়ে দেওয়া

লিসবনে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই পরিবর্তন চেয়েছিল ক্লাবটি। মেসিদের চাওয়ায় যে কয়জন কোচ ছিল, তাতে ছিল না রোনাল্ড কোমানের নাম। পরে তাকে যখন কোচ বানানো হয়, তখন থেকেই মেসির দল ছাড়ার গুঞ্জন চড়া। নতুন কোচ এসেই প্রথমে সিনিয়র খেলোয়াড়দের উপর তোপ দাগান। মেসির দীর্ঘদিনের সতীর্থ ও বন্ধু লুইস সুয়ারেজকে মাত্র ৬০ সেকেন্ডের একটি ফোন কলে তাকে বিদায়ের কথা জানান কোমান। নতুন ক্লাব খুঁজে নেওয়ার কথা বলেন। অথচ সুয়ারেজ আগেই জানিয়েছিলেন, ক্লাব তাকে সরাসরি যেতে বললে তা খুশি মনে মেনে নিবেন। এমনটা বলার পরও ১ মিনিটের কলে ক্লাবের ইতিহাসের তৃতীয় সেরা গোলদাতাকে বিদায় বলে দেওয়াটা এক প্রকার অপমানই বটে। এ বিষয়টিও ভালোভাবে নিতে পারেননি মেসি। 

মেসির সঙ্গে কোমানের দুর্ব্যবহার

ক্লাবে যোগ দিয়ে অন্যসব সিনিয়রদের নিয়ে ভিন্ন কথা বললেও মেসিকে নিজের পরিকল্পনায় রেখেছেন বলে জানান কোমান। বার্সা অধিনায়কের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিবেন বলেও জানান তিনি। কিন্তু মেসির সঙ্গে আলোচনায় দেখা যায় ভিন্ন চেহারার কোমানকে। শুরুতেই তাকে বলে দেন, সিনিয়র খেলোয়াড় হিসেবে এত দিন ক্লাব থেকে যে সকল বাড়তি সুবিধা পেতেন তিনি, তা আর দেওয়া হবে না তাকে। এ বিষয়টি হজম করতে পারেননি মেসি। তার উপর মুখের উপর এভাবে বলাও পছন্দ করেননি। তা-ও চুপ করেই ছিলেন। কিন্তু পরে বিষয়গুলো গণমাধ্যমে চলে আসায় আরও চটে যান রেকর্ড ছয় বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী এ তারকা। এরপর ক্লাব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা খুব কঠিন হয়নি মেসির।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago