রোহিঙ্গা শিবিরে অপরাধের সংখ্যা বাড়ছেই
কক্সবাজারের বিশ্বের বৃহত্তম রোহিঙ্গা শিবিরে গত তিন বছরে বেড়ে গেছে হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজি এবং মাদক চোরাকারবারের মতো অপরাধ।
২০১৭ সালের আগস্টে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এরপর থেকেই বেড়ে গেছে অপরাধের সংখ্যাও। সে বছরের শেষ প্রান্তিকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অন্তত ৭৬টি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
২০১৮ সালে এই মামলার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২০৮ এবং ২০১৯ সালে ২৬৩টি। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসের মধ্যেই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা ১৭৮টি।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, এই মামলার সংখ্যা রোহিঙ্গা শিবিরে ঘটে যাওয়া অপরাধের একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। সেখানে প্রচুর পরিমাণে হত্যা, অপহরণ এবং যৌন হয়রানিসহ নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। কিন্তু, এর জন্য কোনো মামলা করছে না ভুক্তভোগীরা।
আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়নের (এপিবিএন-১৬) কমান্ডিং অফিসার মো. হেমায়েতুল ইসলাম বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিবিরে প্রতিদিন আমরা হত্যাসহ গড়ে ১০ থেকে ১২টি অভিযোগ পাই। কিন্তু, রোহিঙ্গারা কোনো মামলা করতে আগ্রহী হয় না বলে আমরাও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না।’
হেমায়েতুল ইসলাম জানান, গত সপ্তাহে তারা অভিযোগ পান যে একজন তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে। কিন্তু, ভুক্তভোগীর পরিবার মামলা দায়ের করতে চায়নি। ফলে, পুলিশও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই সরকারিভাবে শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃত নয়। যার অর্থ এই দেশে তাদের কোনো আইনগত অধিকার নেই। এ কারণেই মামলা দায়ের করার প্রতি তাদের ভীতি কাজ করতে পারে।
হেমায়েতুল ইসলাম গত সপ্তাহে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘তারা মাঝিদের (শিবিরে শৃঙ্খলা রক্ষায় নিযুক্ত রোহিঙ্গা নেতা) নিয়ে নিজেরা বৈঠক করে মরদেহ দাফন করে দিয়েছে।’
মাঝিদের নেতৃত্বে শালিসের মতো অনানুষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থা তারা তৈরি করে নিয়েছে। যার কারণে অনেক ঘটনা পুলিশ বা ক্যাম্প ইনচার্জের কাছেও পৌঁছায় না।
গত ২১ আগস্ট হঠাৎ করেই একটি রোহিঙ্গা ‘অপরাধী গোষ্ঠী’ পাহাড় থেকে বেরিয়ে আনচিপ্রাং ক্যাম্প ২২-এ গুলি চালাতে শুরু করে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শিবিরে একত্রিত হতে থাকলে সেই ‘অপরাধী গোষ্ঠী’ ১৫ থেকে ২০ রাউন্ড গুলি চালিয়ে আত্মগোপনে চলে যায় বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
এই গুলির ঘটনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্লক সি-এর বাসিন্দা শুকুর (২০) এবং নুর হোসেন (৪৫) গুলিবিদ্ধ হন এবং তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে এ ঘটনায় থানায় এখনও কোনো মামলা হয়নি।
গত মঙ্গলবার টেকনাফের একটি রোহিঙ্গা শিবিরে অভিযান চালিয়ে ছয় জন রোহিঙ্গাকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- নূর হোসেন, মোহাম্মদ আলম, আব্দুর রহমান, আবু সাদেক, মো. আমিন ও জাফর আলম। এদের সকলেই উইকং পুথিবোনিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে বাস করেন।
তাদের গ্রেপ্তারের সময় দুটি পিস্তল, সাতটি গুলি ও ম্যাচলেট উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান এপিবিএনের শিবির ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন।
আতঙ্ক তৈরির জন্য তারা শিবিরের ভেতরে ফাঁকা গুলি চালিয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিছু রোহিঙ্গা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে শিবিরে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছিল।’
এ ব্যাপারে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় টেকনাফ ও উখিয়ায় বসবাসকারী স্থানীয়রা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী গত বৃহস্পতিবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘রোহিঙ্গারা সংগঠিত হওয়ায় আমরা ভয়ে আছি। তারা ধীরে ধীরে জেলার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। মাঝে মাঝেই দেখি হাজার হাজার রোহিঙ্গা শিবিরের বাইরে ঘোরাফেরা করছে। তারা যদি আমাদের আক্রমণ করে বসে, তাহলে তাদের হাত থেকে আমাদের কে বাঁচাবে?’
রোহিঙ্গাদের শিবিরের বাইরে অবাধে চলাচল করার অনুমতি দেয়নি সরকার। কয়েক বছর ধরে এটি চলে আসলেও সম্প্রতি এই বিধিনিষেধে আরও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, শিবিরগুলোর আইন-শৃঙ্খলা তদারকির জন্য তাদের দুটি বিশেষ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন-১৪ এবং এপিবিএন-১৬) রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা কেবল থানায় দায়েরকৃত মামলার তদন্ত করি। তবুও, আমরা সজাগ থাকি এবং আমাদের কাছে কোনো বিষয়ে তথ্য আসলে ব্যবস্থা নেই।’
সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে মূল প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে Refugee camps in Cox’s Bazar: Rohingyas tangled up in crimes
Comments