প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা থেকে সরে আসা নির্বাচন কমিশনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত: টিআইবি

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, প্রার্থিতা বাতিলের সরাসরি একক ক্ষমতা থেকে সরে আসা নির্বাচন কমিশনের একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, প্রার্থিতা বাতিলের সরাসরি একক ক্ষমতা থেকে সরে আসা নির্বাচন কমিশনের একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

আজ বৃহস্পতিবার টিআইবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ কথা বলেন তিনি।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর ৯১ই ধারার ১ ও ২ উপধারা অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে, তা তদন্ত করে দেখা এবং তদন্তে তা প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করার সরাসরি ক্ষমতা আছে নির্বাচন কমিশনের হাতে। সেটি কী যুক্তিতে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে তার যে ব্যাখ্যাই কমিশন দিক না কেন, এটি যে ভালো কোনো উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে না বরং কমিশনকে সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর করে দেওয়ার হীন চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই না।’

নিজেরা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এই ধারা প্রয়োগ করার সৎসাহস রাখেন না তাই মাথাব্যথার কারণে মাথা কেটে ফেলার অপপ্রয়াস এই উদ্যোগ কী-না এই প্রশ্ন ওঠাও স্বাভাবিক, বলছে টিআইবি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘জনপ্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটিয়ে নির্বাচন কমিশনের যেখানে সাংবিধানিক মর্যাদা ও সুনাম পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট থাকা উচিত, সেখানে সম্ভবত জেনেবুঝেই তারা রাজনৈতিক ক্ষমতার কাছে নিজেদেরকে আত্মদানমূলক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এ জাতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর মতো একটি ঐতিহাসিক দলিল, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার অনন্য স্মারক, কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়া তার পরিবর্তন কেন দরকার পড়ছে, তা আমারা বুঝতে পারছি না। নির্বাচন কমিশন হয়তো ভুলতে বসেছে যে, এটা একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়ার কথা, কারো আজ্ঞাবহ নয়। দেশ ও জাতির স্বার্থে বর্তমান কমিশনের সুমতি যত দ্রুত ফিরবে ততই মঙ্গল।’

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদ ও পদবীর পরিবর্তন নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার বহির্ভূত এবং কর্তব্যের বাইরে গিয়ে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন পরিচালনা আইনের সংস্কার করে সম্পূর্ণ নতুন ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচন আইন, ২০২০’ নামে বিলের যে খসড়া নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত করেছে, এজন্য তাদের সামর্থ্য ও নৈতিকভিত্তি কতটুকু আছে তা সততার সঙ্গে আরও একবার ভেবে দেখার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ইতোপূর্বে কমিশনের অধীনে যেসব জাতীয় ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে ভোটারের উপস্থিতি, নির্বাচনী পরিবেশ, সর্বোপরি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তার গুণগত কোনো পরিবর্তন কী ঘটবে এই নতুন আইনের মাধ্যমে? যদি না-ই ঘটে তাহলে এ জাতীয় নতুন আইনের যৌক্তিকতা কোথায়, তা আমার কাছে পরিষ্কার নয়। নির্বাচন কমিশনের উচিত ‘নির্বাচন কমিশন’ নামটিকে আর কলঙ্কিত না করে ইতোমধ্যে জনসাধারণের মাঝে তাদের প্রতি যে আস্থার সংকটের সৃষ্টি হয়েছে, তা উপলব্ধি করে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ানো।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্যমান আইনে তিনটি শর্তের যে কোনো একটি পূরণ সাপেক্ষে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের বিধান থেকে সরে এসে স্বতন্ত্র আইনের খসড়ায় দুইটি শর্ত পূরণের বাধ্যবাধকতাসহ বেশ কিছু পরোক্ষ শর্ত পূরণের যে প্রস্তাব রাখা হয়েছে তার যৌক্তিকতা প্রশ্নবিদ্ধ এবং পক্ষপাতদুষ্ট। সার্বিক বিবেচনায় নির্বাচন কমিশন বাস্তবে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটের অধিকার নয় বরং বিশেষ কোনো দলীয় রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে নিজেকে ব্যবহৃত হতে তৎপর আছে। যা একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই কমিশনের জন্য অভূতপূর্ব মাত্রায় বিব্রতকর।’

যদি আলাদাভাবে ‘রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন’ করতেই হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট খাতে বিশেষজ্ঞসহ সকল অংশীজনের মতামতের পর্যাপ্ত গুরুত্ব প্রদান সাপেক্ষে করা অপরিহার্য বলে মনে করে টিআইবি।

Comments

The Daily Star  | English
World Bank’s senior official speaks on lending culture in Bangladesh

Banks mostly gave loans to their owners rather than creditworthy borrowers

Bangladesh’s banking sector was not well-managed in recent years. Banks mostly gave loans to their owners, rather than to creditworthy entities. Consequently, several banks are now in difficulty.

11h ago