আরশাদ দম্পতির ‘বিড়াল-বাড়ি’

আরশাদ হাসান ও আনজুম দম্পতির দুই সন্তানসহ চারজন মিরপুর ১১ নং সেকশনের বিহারি ক্যাম্পে একটি ১০০ বর্গফুটের দ্বিতীয় তলা বাড়িতে বসবাস করেন ৩০টির বেশি বিড়ালসহ।

সম্প্রতি, ওই বাড়িতে গেলে দেখা যায়, বাড়ির ভেতরে বুটিকের কাজ করার জন্য একটি টেবিল বিছানো আছে সেখানে আরশাদ বসে কাজ করছে। তাকে ঘিরে আছে অনেকগুলো বিড়াল। এর মধ্যে কয়েকটি তার শরীরের ওপর উঠে বসে আছে।

কয়েকটিকে দেখা গেল টেবিলের নিচে, টেবিলের পাশেই কয়েকটি আবার দুটি প্লেটে ভাত-মাছ খাচ্ছিল।

ঘরের এক কোণায় ইট দিয়ে একটু উঁচু করা ছোট একটি টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে কয়েকটি বিড়াল বসে ছিল। ঘরের আরেক কোণায় দেখা যায় সাজানো ওষুধের বোতল। এগুলো কিসের ওষুধ জানতে চাইলে আরশাদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বিড়ালগুলো অসুস্থ হয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য এই ওষুধগুলো ব্যবহার করি। কোনো বিড়ালের জ্বর হলে তাকে জ্বরের ওষুধ দেওয়া হয়, ঠান্ডা লাগলে দেওয়া হয় ঠাণ্ডার ওষুধ।’

‘যদি কোনো বিড়ালের জ্বর-ঠাণ্ডা ভালো না হয় তাহলে এখানে অ্যান্টিবায়োটিক আছে, তা দেওয়া হয়,’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘তারপরও যদি কোনো বিড়াল সুস্থ না হয় তাহলে ওই অসুস্থ বিড়ালকে গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া পশু হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।’

‘এভাবে মাসের দুই-একদিন আমরা অসুস্থ বিড়াল নিয়ে ফুলবাড়িয়া পশু হাসপাতাল যাই,’ বলেও জানান তিনি।

বিড়ালদের জন্যে খাবার প্রস্তুত করছেন আরশাদ হাসান। ছবি: স্টার

আরশাদ হাসানের মেয়ে আনজুম খুশবু। তার কাছে জানতে চাই— ‘আপনারা বিড়ালগুলোকে কিভাবে সংগ্রহ করেন?’ তিনি বলেন, ‘রাস্তাঘাটে অসুস্থ বিড়াল পড়ে থাকলে আমরা সেখান থেকে নিয়ে আসি।’

‘আশেপাশের লোকজন সংবাদ দেন যে এক জায়গায় একটা বিড়ালের বাচ্চা পড়ে আছে। তখন আমরা সেটাকে নিয়ে আসি। এরপর ওই বিড়ালকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেই, যত্ন নিই।’

‘বিড়ালগুলোর লালন-পালনে প্রতিদিন ৩০০ টাকার মতো খরচ হয়। প্রতিদিন দুই কেজি চিকন চালের ভাত ও দেড় কেজি মাছ রান্না করে বিড়ালগুলোকে ছয় বেলা খাওয়ানো হয়।’

খুশবু আরও জানান, গত চার বছর আগে দুটো বিড়াল তাদের ছিল সেখান থেকে ধীরে ধীরে এখন ২৫টি হয়েছে। তবে কেউ যদি দত্তক হিসেবে তাদের কাছে বিড়াল চায় তাহলে তারা তাদের নাম-ঠিকানা-পরিচয় ভালোভাবে যাচাই করে বিড়াল দত্তক দেন।

গত এক বছর ধরে তারা বিভিন্নভাবে বিড়ালগুলোকে দত্তক হিসেবে দিয়েছেন বলেও জানান খুশবু। ২০১৭ সালে অনার্স পাশ করার পর আর্থিক অনটনের কারণে মাস্টার্স পড়তে পারেনি তিনি। তবে বিড়ালগুলোর প্রতি তার এতো মায়া জন্মেছে যে তাদের ফেলতে পারছেন না। তাদের পিছনে টাকা খরচ করছেন।

তিনি আরও জানান, এই বিড়ালগুলো নিয়ে তাদের বর্তমানে নানামুখী সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। বলেন, ‘বিড়ালগুলোর জন্য এলাকার দুই-একজন বাসিন্দার কাছ থেকে আমাদের নিয়মিত বকাঝকা, হুমকি-ধমকি খেতে হয়।’

‘কিছুদিন আগে মা ও আমাকে মারধর করা হয়েছে। অনেকেই হুমকি দিয়ে বলেছেন— বিড়ালগুলো থাকলে আমরা এখানে থাকতে পারবো না। বিড়ালগুলো নিয়ে আমাদেরকে চলে যেতে হবে। কিছুদিন আগে আমাদের বাড়ির পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। এই ঘটনার প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় বিহারি ক্যাম্পের নেতাদের কাছে নালিশ করেছিলাম। কোনা প্রতিকার পায়নি।’

‘প্রতিকার না পেয়ে পল্লবী থানায় জিডি করেছি। পুলিশের তরফ থেকেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’

খুশবু আরও জানান, পুলিশ বলেছে স্থানীয় বিহারি নেতাদের সঙ্গে বসে বিষয়টি মীমাংসা করে নিতে।

যে কোনো সময় প্রতিবেশীরা ক্ষতি হতে পারে বলেও তারা আতঙ্কে আছেন।

আরশাদ হাসানের প্রতিবেশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা ডেইলি স্টারকে জানান, মাঝে-মাঝে ঘর থেকে কয়েকটি বিড়াল বাইরে চলে আসে। প্রতিবেশীদের ঘরের সামনে ঘোরাঘুরি করে। তবে বিড়ালের মালিকরা যদি ডাক দেয় তাহলে বিড়ালগুলো আবার ঘরে বলে চলে যায়।

কাজের সময়ও বিড়ালের প্রতি আরশাদ হাসানের ভালোবাসার কমতি হয় না। ছবি: স্টার

‘সেভাবে আমাদের কোনো ডিস্টার্ব করে না,’ বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন এক প্রতিবেশী।

এই ঘটনায় যার বিরুদ্ধে থানায় জিডি করা হয়েছে সেই অভিযুক্ত প্রতিবেশী শাহানা ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে পরে কথা বলবো।’

বিহারি নেতা সাদাকাত খান ফাককু ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি ঘটনাটি শুনেছি। আমরা চেষ্টা করছি যাতে এই পরিবারটাকে কেউ ডিস্টার্ব না করে।’

বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে খুশবু বলেন, ‘দেশে করোনাভাইরাস আসার পর এলাকার কিছু মানুষ আমাদের চাপ দিতে থাকে। তারা বলে, আমরা কিছুতেই বিড়ালগুলো রাখতে পারবে না। তাদের অভিযোগ, বিড়াল থেকে করোনার উৎপত্তি।’

‘এরমধ্যে আমাদের দুটি বিড়ালকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে’ উল্লেখ করে খুশবু বলেন, ‘সে সময় আশেপাশের অনেকেই ভয়ে তাদের বাসা থেকে পালিত বিড়ালগুলো বের করে দিয়েছিলেন।’

‘রাস্তা থেকে কয়েকটি বিড়াল আমরা সংগ্রহ করি। এখন নতুন-পুরনো মিলিয়ে ৩০টির বেশি বিড়াল আছে।’

‘মানুষের শত বাধার মধ্যেও বিড়ালের প্রতি ভালোবাসা থেকে পিছপা হইনি,’ যোগ করেন বিড়ালপ্রেমি খুশবু।

Comments

The Daily Star  | English
CAAB pilot licence irregularities Bangladesh

Regulator repeatedly ignored red flags

Time after time, the internal safety department of the Civil Aviation Authority of Bangladesh uncovered irregularities in pilot licencing and raised concerns about aviation safety, only to be overridden by the civil aviation’s higher authorities.

11h ago