প্লাজমা দান ও প্লাজমার প্রয়োজনে ২৪ ঘণ্টা খোলা গণস্বাস্থ্য

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদেরকে প্লাজমা দেওয়ার জন্য করোনা থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের প্রতি রক্তদানের আহ্বান জানিয়েছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। একইসঙ্গে যাদের প্লাজমা প্রয়োজন, তাদেরকেও রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের ‘গণস্বাস্থ্য প্লাজমা সেন্টার’ এ যোগাযোগের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল। ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদেরকে প্লাজমা দেওয়ার জন্য করোনা থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের প্রতি রক্তদানের আহ্বান জানিয়েছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। একইসঙ্গে যাদের প্লাজমা প্রয়োজন, তাদেরকেও রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের ‘গণস্বাস্থ্য প্লাজমা সেন্টার’ এ যোগাযোগের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

আজ শুক্রবার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে এই আহ্বানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা ৫০ লাখ টাকা খরচ করে অত্যাধুনিক প্লাজমা সেন্টার তৈরি করেছি। সেখানে একটি মেশিন বসানো হয়েছে এবং বিদেশ থেকে আরও একটি মেশিন অল্প সময়ের মধ্যেই চলে আসবে। সেখানে আরও ৫০ লাখ টাকা খরচ হবে। মোট এক কোটি টাকা ব্যয় হবে আমাদের প্লাজমা সেন্টারের জন্য। প্লাজমা সেন্টার তৈরির কারণ, করোনার চিকিৎসায় প্লাজমা অত্যন্ত কার্যকরী একটি পদ্ধতি। বাংলাদেশে এর সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত আমি নিজে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে আমাকে তিন বার প্লাজমা দেওয়ার কারণে আমি পুনরুজ্জীবন লাভ করেছি।’

‘এখন পৃথিবীতে প্রমাণিত যে, প্লাজমা করোনায় আক্রান্ত রোগীকে পুনরায় জীবন দান করে। ইতোপূর্বে যারা প্লাজমা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিল, যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর এমন বহু দেশ এখন সেই প্রক্রিয়ায় আছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আমাদের বিজ্ঞানীরা শুরু থেকেই প্লাজমার কথা বলছিলেন। তারা যখন থেকে প্লাজমার কথা বলছিলেন, তখন পৃথিবীর বহু দেশ প্লাজমার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু, আজকে যখন আমরা দেখছি, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশেই প্লাজমা স্বীকৃতি পেয়েছে, তখন বোঝা যায় আমাদের বিজ্ঞানীরা বহু ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে। প্লাজমার মাধ্যমে আবারও এর প্রমাণ হলো’, বলেন তিনি।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘আমাদের এখন করোনা থেকে সুস্থ হয়ে যাওয়া রোগীদের রক্ত দরকার। আশানুরূপ রক্ত আমরা পাচ্ছি না। যতটা পাওয়া দরকার, পাচ্ছি না। আমরা বাংলাদেশের সব মানুষকে আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন, তারা গণস্বাস্থ্যের প্লাজমা সেন্টারে আসেন, রক্তদান করেন। আপনাদের দেওয়া প্লাজমা দিয়ে আমরা করোনা থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে পারব। এর জন্য আমরা ২৪ ঘণ্টা প্লাজমা সেন্টার খোলা রাখছি। বাংলাদেশে যেভাবে রক্তদানকে উৎসাহিত করা হয়েছিল, ঠিক একইভাবে প্লাজমা দেওয়ার ক্ষেত্রেও রক্তদানকে উৎসাহিত করা দরকার এবং জনমানুষের সাড়া দরকার।’

‘আমাদের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা করোনা থেকে সুস্থ হয়ে নিজ উদ্যোগে আমাদের এখানে এসে প্লাজমা দান করে গেছেন। আমরা তাকে অভিনন্দন জানাই। একইসঙ্গে সরকারের বড় কর্মকর্তা ও এমপিরা যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাদেরকেও আহ্বান জানাই, আপনারা প্লাজমা দান করুন। আপনাদের সংবাদে দেশের সাধারণ জনগণও উৎসাহিত হবে। করোনা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আমাদের ভ্যাকসিন যেমন দরকার, এই মুহূর্তে প্লাজমা তার চেয়েও বেশি দরকার। তাই করোনা থেকে সুস্থ হওয়া রোগীরা প্লাজমা দান করুন’, যোগ করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

কে প্লাজমা দিতে পারবেন, এ বিষয়ে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালের প্রধান বিজ্ঞানী ও ‘জিআর কোভিড-১৯ র‍্যাপিড টেস্ট’ কিটের উদ্ভাবক ড. বিজন কুমার শীল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘যিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তিনি সুস্থ হওয়ার ২১-২৫ দিন পরে যদি রক্তদান করেন এবং তার শরীরে যদি নিউট্রালাইজড অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে থাকে, তাহলে সেই প্লাজমা সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়। অর্থাৎ করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার ২১-২৫ দিন পরে রক্ত দিলে সেটা বেশি কার্যকর হয়।’

‘আমরা প্লাজমার কথা বলছিলাম ফেব্রুয়ারি থেকে। কিন্তু, তখন ইউরোপ-আমেরিকা এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। আমরা তখন যা বলেছিলাম, এখন তারাও সেই একই কথা বলছে। তবে, আমরা যদি আমাদের উদ্ভাবিত কিট দিয়ে অ্যান্টিবডি টেস্ট করতে পারতাম, তাহলে বাংলাদেশে প্লাজমা সংগ্রহ করা অনেক সহজ হতো এবং অনেক দ্রুত সময়ে অধিক পরিমাণ প্লাজমা সংগ্রহ করা যেতো। সেটা যখন পারছিনা, তখন নানা প্রতিকূলতার মধ্যেই দেশের মানুষের জন্য আমাদের কাজ করে যেতে হচ্ছে’, বলেন ড. বিজন কুমার শীল।

প্লাজমা দেওয়ার বিষয়ে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মহিবুল্লাহ খন্দকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এখানে দুইটা কাজ। প্রথমে প্লাজমা সংগ্রহ করা, দ্বিতীয়ত করোনা রোগীদের প্লাজমা দেওয়া। প্রথমে কেউ রক্তদান করলে আমরা সেই রক্ত থেকে প্লাজমা সেপারেট করি। এর জন্য আমাদের গণস্বাস্থ্যের অত্যাধুনিক সরঞ্জামসহ ব্লাড ট্রান্সমিশন সেন্টার রয়েছে। প্লাজমা সেপারেট করে সেটি সংরক্ষণের জন্য আমাদের প্লাজমা ব্যাংকও রয়েছে। দ্বিতীয়ত, যার প্রয়োজন তাকে আমরা প্লাজমা দেই।’

প্লাজমা নেওয়ার ফির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে যিনি প্লাজমার জন্য রক্তদান করবেন, তার বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। আবার যিনি প্লাজমা নেবেন, তারও বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। সেক্ষেত্রে যিনি রক্তদান করবেন, তার ক্ষেত্রে কোনো ফি নেই। বিনা মূল্যে তিনি রক্তদান করতে পারবেন। যিনি প্লাজমা নেবেন তার কাছে থেকে উভয়ের পরীক্ষা বাবদ পাঁচ হাজার টাকা ফি নেওয়া হবে। অর্থাৎ, যিনি রক্তদান করলেন তার পরীক্ষা এবং যিনি নেবেন তার পরীক্ষার খরচ বাবদ এই পাঁচ হাজার টাকা।’

‘আমরা আহ্বান করছি, যারা করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন, তারা যেন আমাদের প্লাজমা সেন্টারে এসে রক্ত দিয়ে যান। প্লাজমা নিতে অনেক আগ্রহী রোগীরা আমাদের এখানে যোগাযোগ করেছেন। আমরা রোগীদের কাছ থেকে বেশ সাড়া পাচ্ছি। তাই আমাদের অনেক প্লাজমা ডোনার দরকার। এ ছাড়া, যাদের প্লাজমা প্রয়োজন, তারাও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। ২৪ ঘণ্টাই আমাদের প্লাজমা সেন্টার খোলা আছে। যেকোনো সময় এসে যোগাযোগ করা যাবে’, যোগ করেন ডা. মহিবুল্লাহ খন্দকার।

গণস্বাস্থ্য প্লাজমা সেন্টারে যোগাযোগের ঠিকানা— গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতল, বাড়ি নম্বর— ১৪/ই, সড়ক— ৬, ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৫। ফোন: ০২ ৯৬৭০০৭১-৫, ০১৭০৯৬৬৩৯৯৪, ০১৫৫২৪৬০৭৮০, ০১৭৪৭১৬২২৯৮।

আরও পড়ুন:

গণস্বাস্থ্যের প্লাজমা সেন্টার চালু

প্রমাণ করেছি যে, মানসিকভাবে আমরা উন্নত না: ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

আমরা প্লাজমা সেন্টার চালু করতে যাচ্ছি: ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ভূতের প্রবেশ ঘটেছে’

আমাদেরই সবার আগে এই কিট বিশ্ববাসীর সামনে আনার সুযোগ ছিল: ড. বিজন

গণস্বাস্থ্যের কিট, বিজ্ঞানের বিশ্লেষণে দেশীয় রাজনীতি

২৫ দিনে ৩০১ শয্যার করোনা হাসপাতালের জন্ম অথবা অপমৃত্যু!

মুক্তিযুদ্ধ, গণস্বাস্থ্য, ডা. জাফরুল্লাহ ও মাছ চোর

Comments

The Daily Star  | English

Over 5,500 held in one week

At least 738 more people were arrested in the capital and several other districts in 36 hours till 6:00pm yesterday in connection with the recent violence across the country.

14h ago