মানিকগঞ্জে বালু-মাটি উত্তোলন: বসতবাড়ি-রাস্তা-জমি নদীগর্ভে বিলীন

কালীগঙ্গা নদীর পাড়ে বাড়ছে ভাঙন-ঝুঁকি
বালু উত্তেলনের কারণে নদীপাড়ে বাড়ছে ভাঙন-ঝুঁকি। ছবি: জাহাঙ্গীর শাহ

মানিকগঞ্জের ঘিওরের কালীগঙ্গা নদীতে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। সে কারণে চলতি বর্ষা মৌসুমে ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের দুই শতাধিক বাড়িঘর, কয়েক শ বিঘা আবাদি জমি, এক কিলোমিটার রাস্তা, একটি ব্রিজ ও মসজিদ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে নদীপাড়ের অসংখ্য বাড়িঘর, জমিসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা।

অবৈধভাবে নদী থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন বন্ধ করে ভাঙনের হাত থেকে রেহাই পেতে স্থানীয় প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু, কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

সরেজমিনে দেখা যায়, কালীগঙ্গা নদীর উত্তর তরা এলাকায় বেশ কয়েকটি ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। নদীর পাড়ের বহু ঘরবাড়ি ও ফসলি জমির অংশবিশেষ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বাকি অংশও ভাঙনের মুখে। 

কেল্লা গ্রামের জসিম উদ্দিন বলেন, ‘নদীতে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। সে কারণে কেল্লা, নকিববাড়ি ও উত্তর তরা গ্রামের দুই শতাধিক বাড়িঘর, কয়েকশত বিঘা ফসলি জমি, এক কিলোমিটার রাস্তা, একটি ব্রিজ, একটি মসজিদ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে নদীপাড়ের অসংখ্য বাড়িঘর, জমিসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা। আমরা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু, কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

একই গ্রামের মহিদুর রহমান বলেন, ‘নদীতে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে গত কয়েক বছরে আমার ১০ বিঘা জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। এবার বর্ষা মৌসুমেও দুই বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। বাড়িটাও হুমকির মুখে। প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না।’

ওই গ্রামের মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার নয় বিঘা ফসলি জমি নদীতে গেছে। বাড়িটাও ভাঙনের মুখে। নদী থেকে ড্রেজার না সরালে আমাদের বাড়িঘর ও জমিজমা সবই নদীতে যাবে। এখান থেকে ড্রেজারগুলো সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’

বালু-মাটি উত্তেলনের কারণে তিনটি গ্রামের দুই শতাধিক বাড়িঘর, কয়েক শ বিঘা আবাদি জমি, এক কিলোমিটার রাস্তা, একটি ব্রিজ ও মসজিদ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ছবি: জাহাঙ্গীর শাহ

আব্দুল আলিম বলেন, ‘দুই মাস আগে আমার বাড়ি নদীতে গেছে। আমি এখন যেখানে বাড়ি করেছি, সেটাও ভাঙনের মুখে পড়েছে। বাঁচার জন্য বহু যায়গায় ঘুরছি। কেউ কোনো ব্যবস্থা নিলো না। এখন আমাদের মরা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।’

উত্তর তরা গ্রামের গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘এবার বর্ষা মৌসুমে নকিববাড়ি গ্রামের দেড় শতাধিক এবং কেল্লা গ্রামের ৫০টি বসতবাড়ি ও কয়েকশত বিঘা ফসলি জমি নদীতে চলে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে অসংখ্য বাড়িঘর, জমিজমাসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা।’

একই গ্রামের সামসুদ্দিন সামসু বলেন, ‘নদী থেকে ড্রেজার সরানোর জন্য প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। কোনো লাভ হয় নাই। এখন রাস্তায় নেমে দাবি আদায় করতে হবে।’

সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা প্রশাসনকে জানিয়ে কোনো ফল না পেয়ে দাবি পূরণের আশায় শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধনও করেছি। কিন্তু, তাতেও কোনো কিছু হচ্ছে না। আমরা এখন হতাশ।’

নদীতে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু, মাটি উত্তোলন বন্ধের দাবিতে গতকাল শুক্রবার মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন নদী ভাঙনকবলিত কেল্লা, উত্তর তরা ও নকিববাড়ি গ্রামের বাসিন্দারা। কোটাই বাজারে এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেন ওই তিন গ্রাম এবং আশপাশের এলাকার শতাধিক মানুষ। যাথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে কালীগঙ্গা নদীতে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে মাটি ও বালু উত্তোলন বন্ধ এবং মাটি-বালু খেকোদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আইরিন আক্তার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তরা আবেদন করার পর তদন্ত করা হয়েছে। সেখানে ইজারাদাররা বুলগেট বসিয়ে নদী থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করছেন। কিন্তু, রাতের আধাঁরে ইজারাভুক্ত এলাকার বাইরে বালু বা মাটি উত্তোলনের অভিযোগটিও ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে কেউ যাতে নদী থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করতে না পারে এবং এর ফলে যাতে নদীভাঙন সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে আমরা নজর রাখছি।’

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

47m ago