মুরগির খামারে হামলা, গণজমায়েত সৃষ্টি

জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যানকে সতর্ক করে চিঠি

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় একটি মুরগির খামারে হামলা এবং করোনা পরিস্থিতিতে গণজমায়েত সৃষ্টি করায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ মোঈদকে সতর্ক করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। প্রশাসনিক তদন্ত শেষে সম্প্রতি সরকার বিভাগ থেকে পাঠানো একটি চিঠিতে এ তথ্যটি জানানো হয়। তবে, তদন্তের পর অন্যান্য অভিযোগ থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন।
হামলা-ভাঙচুরের পর খামারটি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ছবি: স্টার

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় একটি মুরগির খামারে হামলা এবং করোনা পরিস্থিতিতে গণজমায়েত সৃষ্টি করায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ মোঈদকে সতর্ক করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। প্রশাসনিক তদন্ত শেষে সম্প্রতি সরকার বিভাগ থেকে পাঠানো একটি চিঠিতে এ তথ্যটি জানানো হয়। তবে, তদন্তের পর অন্যান্য অভিযোগ থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন।

স্থানীয় সরকার বিভাগ, প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম আমতৈল গ্রামে ‘বন্ধু পোলট্রি ফার্ম’ নামের যৌথ মালিকানাধীন একটি মুরগির খামারে গত ১ মে রাতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। সে সময় খামারটির পাশে থাকা সরকারি ভর্তুকিমূল্যে দেওয়া ধান কাটা ও মাড়াই কাজে ব্যবহৃত একটি ‘কম্বাইন্ড হারভেস্টার’ যন্ত্রও ভাঙচুর করা হয়। এ ব্যাপারে মৌলভীবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন ৪ মে স্থানীয় সরকার বিভাগে একটি চিঠি পাঠান। চিঠিতে উপজেলা চেয়ারম্যান এমএ মোঈদের নেতৃত্বে বেআইনিভাবে মুরগির খামারে হামলা, করোনা পরিস্থিতিতে গণজমায়েত সৃষ্টি ও সরকারি ভর্তুকিমূল্যে দেওয়া ধান কাটার যন্ত্র ভাঙচুরের অভিযোগ তুলে ধরা হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে পরের দিন ৫ মে স্থানীয় সরকার বিভাগ উপজেলা চেয়ারম্যানকে ১৫ দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে চিঠি দেয়। চেয়ারম্যান চিঠির জবাব পাঠালেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তা সন্তোষজনক হয়নি। এ অবস্থায় ১৮ মে স্থানীয় সরকার বিভাগ বিষয়টি তদন্তের জন্য সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারকে চিঠি দেওয়া হয়। ২ জুলাই বিভাগীয় কমিশনার মো. মশিউর রহমান সরেজমিনে তদন্ত করেন। পরে তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিবেদন পাঠান।

১৭ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা-২ শাখার উপ-সচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘জুড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে অজ্ঞাত কিছু লোকজনের মাধ্যমে পোলট্রি ফার্মে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট এবং ফার্মের পক্ষ ও বিপক্ষের লোকজন দ্বারা গণজমায়েত করার কারণে করোনা (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের সংকটময় মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ায় ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে তাকে (উপজেলা চেয়ারম্যান) নির্দেশক্রমে সতর্ক করা হলো। এ ছাড়া, তাকে অন্যান্য অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।’

গত ২৭ আগস্ট স্থানীয় সরকারের বিভাগের চিঠিটি উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে পৌঁছায়। আজ মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা-২ শাখার উপসচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

চিঠি পাওয়ার পর উপজেলা চেয়ারম্যান এমএ মোঈদ স্থানীয় একটি গণমাধ্যমের ফেসবুক লাইভে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগকে ‘মিথ্যা’ বলে উল্লেখ করেন। এ কারণে এসব অভিযোগ থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন বলে দাবি করেন।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সূত্র জানায়, খামারে হামলা-ভাঙচুরের পর ক্ষতিগ্রস্ত মালিকদের পক্ষ থেকে স্থানীয় বাসিন্দা দীনবন্ধু সেন বাদী হয়ে ২ মে উপজেলা চেয়ারম্যান এমএ মোঈদসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ থেকে ২০ জনের বিরুদ্ধে জুড়ী থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে ৩১ মে রাতে দুর্বৃত্তরা মুরগির খামারটিতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এ ব্যাপারেও দীনবন্ধু বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় আরেকটি মামলা করেন। পরে পুলিশ দুটি মামলা পিবিআইয়ের মৌলভীবাজার কার্যালয়ে স্থানান্তর করে।

পিবিআইয়ের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জামাল উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে।’

Comments