গাজীপুরে অগ্রণী ব্যাংকে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ, ৩ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত

গাজীপুরে অগ্রণী ব্যাংকের শ্রীপুর শাখায় গ্রাহকের প্রায় দেড় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংকের তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

তারা হলেন- শ্রীপুর শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার নজরুল ইসলাম, ক্যাশ অফিসার বদরুল হাসান সনি ও ক্যাশ অফিসার দোলোয়ার হোসেন।

অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের গাজীপুর জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক শামীম আরা সুলতানা গণি আজ বুধবার জানান, শ্রীপুর শাখায় গ্রাহকদের ব্যাংক হিসাবে সঞ্চিত টাকার গড়মিলের তথ্য জানার পর অডিট টিম গঠন করে তদন্ত শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায় এবং তিন জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়ে শাখার ব্যবস্থাপক আব্দুল হালিমকে অগ্রণী ব্যাংকের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

অগ্রণী ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন জানান, সবশেষ গ্রাহকরা গত ৩১ আগস্ট ব্যাংকের একাউন্টে জমা করা টাকার গড়মিলের তথ্য ও অভিযোগ নিয়ে আসেন। ৩০ আগস্ট পর্যন্ত এক কোটি ৩০ লাখ টাকা উদ্ধার করে গ্রাহকের একাউন্টে জমা করা সম্ভব হয়েছে। যার সবই ক্যাশ অফিসার বদরুল হাসান সনি দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘অভিযোগকারীরা যেভাবে অভিযোগ করেছেন সেভাবে কারও একার পক্ষে এতগুলো টাকা আত্মসাৎ করা সম্ভব নয়। এ নিয়ে নিরীক্ষা চলছে।’

অগ্রণী ব্যাংকের ওই শাখার কয়েকজন গ্রাহক সাংবাদিকদের কাছে তাদের অভিযোগ তুলে ধরেন।

গ্রাহক আফতাব উদ্দিন জানান, তিনি তার হিসাবে গত ৪ জুন তিন লাখ টাকা জমা করেন। ব্যাংক ব্যবস্থাপক ২২ আগস্ট তাকে জমা ও চেক বইসহ কাগজপত্র নিয়ে তাকে ব্যাংকে যাওয়ার জন্য ফোন করেন। ব্যাংকে যাওয়ার পর জানতে পারেন তার একাউন্টে তিন লাখ টাকা কম আছে। এ ব্যাপারে তিনি ব্যবস্থাপকের কাছে অভিযোগ জানালে পরদিন ব্যাংকের ক্যাশ অফিসার বদরুল হাসান সনি তার একাউন্টে ওই পরিমাণ টাকা জমা করেন।

ব্যাংকের আরেক গ্রাহক জুয়েনা বেগম জানান, তার স্বামী ও ছেলে সৌদি আরব প্রবাসী। সৌদি আরব থেকে তারা নিয়মিত টাকা পাঠান। গত জুলাই মাসে ব্যাংক হিসাব জানতে গিয়ে দেখেন ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা কম। পরে বিষয়টি ব্যাংক ব্যবস্থাপককে জানান। ১৪ জুলাই ৫ লাখ এবং ১৫ জুলাই ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা তার একাউন্টে জমা করা হয়। বদরুল হাসান সনির বিরুদ্ধে ওই টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠলে দুই ধাপে ওই টাকা তার হিসাবে জমা করা হয়।

এ বিষয়ে ব্যাংকের সাময়িক বরখাস্তকৃত প্রিন্সিপাল অফিসার নজরুল ইসলাম দাবি করেন, ক্যাশ অফিসার বদরুল নিজেই গ্রাহকের সই নকল করে চেক বই উত্তোলন করেছেন। পরে চেকে নিজেই গ্রাহকের সই দিয়ে টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন। ওইসব চেক এন্ট্রি করার সময় চেকের নম্বর এন্ট্রি না করেই টাকা তুলে নিয়ে গেছেন। এ ঘটনা ধরা পড়ার পর ব্যবস্থাপক সনিকে একবার সতর্ক করেছেন।

তিনি বলেন, অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি তার কাছে ধরা পড়ার পরই তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। পরে কর্তৃপক্ষ এ ব্যাংকে অডিট কল করে।

গ্রাহকের টাকা তুলে নেয়ার কথা স্বীকার করে বদরুল হাসান সনি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি একা কিছু করেননি। ‘ব্যাংকের টাকা আমার পক্ষে তুলে নেয়া সম্ভব নয়। টাকা তুলে নিতে চার জনের সই তথা ভেরিফিকেশন লাগবে।’

অগ্রণী ব্যাংকের গাজীপুর জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক শামীম আরা সুলতানা গণি জানিয়েছেন, ‘ব্যাংকের ওই শাখার গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের হিসাবে ব্যালেন্স কনফার্ম করা হচ্ছে। আমরা গ্রাহক এবং এ প্রতিষ্ঠানের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় তার জন্য সব পদক্ষেপ নিয়েছি। গ্রাহকের টাকা রিফান্ড করার চেষ্টা করছি।’

Comments

The Daily Star  | English

Sohag’s murder exposes a society numbed by fear and brutality

It was a murder that stunned the nation, not only for its barbarity, but for what it revealed about the society we have become.

13m ago