‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাটাকে আমরা বায়বীয় করে ফেলেছি’
• ৭১ সালে যে উদ্দেশ্য নিয়ে সংগ্রাম হয়েছে, সেটা অর্জিত হয়নি
• একটা জাতি যদি তাদের ইতিহাস না জানে, তাহলে তো অ্যামনেশিয়ায় ভুগবে
• আমাদের সংগ্রামটা তো ১৬ ডিসেম্বরে শেষ হয়ে যায়নি
• শিক্ষা-সংস্কৃতির অভাব দেখা দিয়েছে বলে আমরা আবর্জনা ভালোবাসতে শুরু করেছি
• মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে আমি মনে করি অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, ঔপনিবেশিক চিন্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা
বাংলাদেশের জন্মের পেছনে যাদের অবদান, যারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশটা স্বাধীন করলেন, তাদের নিয়ে বিশেষ দিবস ছাড়া তেমন কোনো আলোচনা হয় না বললেই চলে। মৃত্যু অথবা কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে তারা আলোচনায় আসেন। সেক্টর কমান্ডার সি আর দত্ত বীর উত্তম মারা যাওয়ার আগে কয়জন জানতেন যে তিনি কোথায় আছেন, শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন কি না? আরেকজন সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরী কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে সিএমএইচে ভর্তির আগে জানা ছিল না তিনি কেমন আছেন, কোথায় আছেন।
বাংলাদেশের জন্মের পেছনে যাদের সর্বোচ্চ অবদান, তাদের বিষয়টি সামনে আসছে না কেন? বর্তমান সময়ে তাদের নীতি-নৈতিকতা, আদর্শ, ত্যাগ— এগুলো নতুন প্রজন্মের সামনে আনা প্রয়োজন কি না কিংবা কতটা প্রয়োজন? তাদের অবদানের কথা ইতিহাসে তো আছে। কিন্তু, সামনে তুলে আনার জন্য কী করা দরকার?— এসব বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এবং শিক্ষাবিদ ও লেখক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছে দ্য ডেইলি স্টার।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘সমস্যাটা হলো— বাংলাদেশ যে অবজেকটিভগুলো (উদ্দেশ্য) নিয়ে স্ট্রাগলটা (সংগ্রাম) করেছে, তারাও করেছেন, সেটাতো অর্জিত হয়নি। রাজনৈতিকভাবে আমরা একটা নতুন রাষ্ট্র পেয়েছি। কিন্তু, এই রাষ্ট্র যে মানুষের জন্য হওয়ার কথা ছিল, সেটি হয়নি। মানুষের স্বাধীনতাটা হয়নি। মুক্তিযোদ্ধারা তো স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধটা করেছিলেন। এই সংগ্রামটা তো কেবল পাকিস্তানিদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য ছিল না। একটা নতুন সমাজ এবং সেই সমাজের ওপর ভিত্তি করে একটা রাষ্ট্র তৈরি করার জন্য লড়াইটা হয়েছিল। কিন্তু, এটা অর্জিত হয়নি। সেজন্য যারা এই সংগ্রামের মধ্যে ছিলেন, তাদেরকে আমরা সেভাবে স্মরণও করি না, তাদেরকে সম্মানও করি না।’
‘এখানে আরেকটা বিষয় হলো— ইতিহাসের যে চর্চা, সেটা আমাদের দেশে এখন নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা পাবলিক স্পেসেও নেই। ইতিহাসটা জানার যে বিষয়টা, এই যে সংগ্রামটা, এটা কেবল ৭১ এ শুরু হয়েছে তা নয়, সংগ্রামটা অনেক দিনের পুরনো। সেই ব্রিটিশ পিরিয়ড থেকে সংগ্রামটা। সেই ইতিহাসটা আমাদের সামনে নেই এখন। সেই ইতিহাসটাকে আমরা নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরি না। আমরা বর্তমানটা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছি। এর কারণও রয়েছে। বর্তমানে আমাদের ইনডিভিজুয়ালি প্রত্যেকেরই এত সমস্যা যে আমরা এর বাইরে আর কিছু দেখতে পারি না। আমাদেরকে ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা পেশাগত ইস্যুগুলো নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। যে কারণে জাতীয় ইস্যুগুলো সেভাবে খেয়াল করি না’, বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সংগ্রামটা তো ১৬ ডিসেম্বরে শেষ হয়ে যায়নি। ওইদিন আমরা পাকিস্তানিদের তাড়িয়ে দিলাম, ঠিক আছে। কিন্তু, স্বাধীনতা তো অর্জিত হয়নি। স্বাধীনতা তো অপেক্ষা করছিল, যে একটা নতুন সমাজ গড়ে তোলা, যেখানে সঠিক গণতান্ত্রিক ধারা থাকবে, যেখানে সমঅধিকার থাকবে, যেখানে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীভূত হবে, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা থাকবে। কিন্তু, সেটা তো আমরা অর্জন করতে পারি নি। কাজেই এই ব্যর্থতার সঙ্গেও তো ইতিহাস চর্চা না করার সম্পৃক্ততা রয়েছে।’
তরুণ প্রজন্মের জন্য মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বা মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা জানাটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বা মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথাগুলো জানা নতুন প্রজন্মের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা একটা জাতি যদি তাদের ইতিহাস না জানে, তাহলে তো অ্যামনেশিয়ায় ভুগবে। এটা তো একটা রোগ যে, ইতিহাস ভুলে যাওয়া, অতীত ভুলে যাওয়া। ইতিহাস না জানলে তো আমরা বর্তমানকেও ব্যাখ্যা করতে পারব না, আবার ভবিষ্যৎকেও দেখতে পারব না। তাই অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা নতুন প্রজন্মের সামনে আনা প্রয়োজন। এটা আনতে হবে।’
মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা ইতিহাসে তো আছে। কিন্তু, সামনে তুলে আনার জন্য কী করা দরকার বলে আপনি মনে করেন? তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের যে স্বপ্ন, যে সচেতনতা, যারা রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিকভাবে এগুলো ধারণ করেন, তাদেরকে সংগ্রামটা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে শেষ হয়ে যায়নি। যারা ক্ষমতা পেয়েছে তাদের বিষয়টি আলাদা। কিন্তু, যারা মনে করেন সমাজে পরিবর্তন দরকার, তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়গুলো সামনে আনার জন্য কাজ করতে হবে। এটা কারো একার কাজ নয়। এটা সমন্বিত কাজ। এজন্য ধারাবাহিক কার্যক্রম প্রয়োজন। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। রাষ্ট্র তো তার নিজের মতো চলছে। এটা মানুষের দায়িত্ব। কারণ, আমাদের মুক্তিযুদ্ধটা ছিল মানুষের যুদ্ধ। কোনো গতানুগতিক যুদ্ধ ছিল না। এটা ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য হয়নি। হয়েছে স্বাধীনতার জন্য। যারা রাষ্ট্রের ক্ষমতায় আছে, তারা তো রাষ্ট্রের কোনো পরিবর্তন চায় না। তারা চায়, রাষ্ট্র যেরকম আছে, সেরকম থাকুক। তারা সুযোগ-সুবিধাগুলো নিতে থাকবে। কিন্তু, সাধারণ মানুষের স্বপ্নটাতো অর্জিত হয়নি। এজন্য মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের বিষয়টি সামনে তুলে ধরাটাও মানুষের দায়িত্ব।’
‘এক্ষেত্রে গণমাধ্যম একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। শুধু বিশেষ কোনো দিবসে নয়, ধারাবাহিকভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের বিষয়গুলো সামনে আনতে পারে। এগুলো নিয়ে তারা কাজ করতে পারে। যাতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বা মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথাগুলো সাধারণ মানুষ ও নতুন প্রজন্মের সামনে আসে’, যোগ করেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
এ বিষয়ে অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, দেশের জন্য অকাতরে প্রাণ দিয়েছেন কিংবা যারা এখনও বেঁচে আছেন, তারাই তো আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস। কিন্তু, দুঃখের বিষয় পাঠ্যপুস্তকে আমরা সেরকমভাবে তাদের স্থান দেইনি। তাদের সম্পর্কে আমাদের কৌতুহলও সেরকম নেই। মেসি কোন ক্লাবে যাবে, এটা নিয়ে আমাদের গণমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড়। তারপর একেকটা ব্যাড নিউজ চলতেই থাকে দিনের পর দিন। এখানে আমাদের গণমাধ্যমের একটা সমস্যা হচ্ছে, তারা ব্যাড নিউজে অনেক ফোকাসড। বর্তমানে আমাদের মনোযোগের সব কেন্দ্র হয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। সেখানে যেসব ট্রল, মেমে ঘুরে বেড়ায়, সেগুলো আমরা দেখছি বড় গণমাধ্যমেও স্থান পায়। আর স্ক্যান্ডাল পেলে মানুষজন লাফিয়ে পড়ে।’
‘এটা হচ্ছে, আমাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতির অভাবের কারণে। শিক্ষা-সংস্কৃতির অভাব দেখা দিয়েছে বলে আমরা আবর্জনা ভালোবাসতে শুরু করেছি। আমি যুক্তি দিয়ে বলছি, দায়িত্ব নিয়ে বলছি যে, আমরা আবর্জনা ভালোবাসতে শুরু করেছি। এই করোনাকালে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী বা পুলিশ যে মারা গেলেন, সেটা তো আমাদের গণমাধ্যমে ফোকাস করে নিউজ হয় না। একটা দুর্বৃত্ত ধরা পড়লে বা একটা ঘুষখোর ধরা পড়লে সেটা বিরাট নিউজ হয়। এখানে মূল সমস্যা আমাদের সামাজিক নিরুৎসাহ, শিক্ষা-সংস্কৃতির অধঃপতন। যে কারণে আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে হারিয়ে ফেলছি। কোনো দিকে কোনো উৎসাহ তৈরি করতে পারছি না। যে কারণে এই অগ্নি পুরুষ বা নারীদেরও হারিয়ে ফেলছি।’
এক্ষেত্রে গণমাধ্যমেরও উদাসীনতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয়ত গণমাধ্যমে যদি তাদেরকে নিয়ে ক্রমাগত কয়েকটা অনুষ্ঠান করে, তখন মানুষ নড়েচড়ে বসবে। মানুষের মধ্যে প্রভাবটা পড়বে। কারণ, মানুষ গণমাধ্যমকে বিশ্বাস করে। তৃতীয়ত, আমাদের ৭১ সালে যারা ছিলেন, ৭৫ এর পর থেকেই তো পট পরিবর্তন হতে লাগল, তারপর থেকে স্বাধীনতাবিরোধীরাই জেঁকে বসল। তারা আস্তে আস্তে মুক্তিযোদ্ধাদের নিষ্ক্রিয় করে ফেললো, স্মৃতি থেকে হারিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হলো। মনগড়া কিছু কাহিনি তুলে ধরা হলো। এই যে স্মৃতি হারিয়ে ফেলার চেষ্টা, সত্য ধ্বংস করে দেওয়া, এর পেছনে কিছু মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন। এসব কারণে ৭৫ এর পরের ২১ বছর আমাদের বহু ইতিহাস হারিয়ে গেছে। যার মধ্য দিয়ে যারা ৭১ এ অবদান রাখলেন, তারা হারিয়ে গেছেন।’
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ-অবদানের বিষয়গুলো জানার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমত মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা চিরস্থায়ী রাখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাটাকে আমরা বায়বীয় করে ফেলেছি। সে সময় যা হয়েছিল, সবাই এক হয়ে কাজ করেছেন, গ্রামের মানুষ তাদের বাড়ির দরজা শহরের মানুষের জন্য খুলে দিয়েছিল। নিজেরা গোয়াল ঘরে থেকে মূল বাড়িটা শহরের মানুষের জন্য ছেড়ে দিয়েছিল। এই বিষয়টা তো এখন আমাদের খুব প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে আমি মনে করি অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, ঔপনিবেশিক চিন্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, অনেকগুলো বিষয় আছে। যারা মুক্তিযুদ্ধকে পছন্দ করে না, তারা ওই চেতনা চেতনা করতে করতে এগুলোকে নষ্ট করে ফেলছে। আর যারা এগুলো নিয়ে ব্যবসা করে, সরকারি দলের অনেকে আছে, যারা এগুলো নিয়ে ব্যবসা করে, তাদেরকে চেতনা-ব্যবসায়ী বলা হয়, এই দুই পক্ষই সমান দায়ী। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাগুলোকে বায়বীয় করে ফেলেছে। আর আমাদের সাহিত্যিকরাও ধীরে ধীরে সাম্প্রদায়িকতায় ঝুঁকছে এবং সেখান থেকে আমাদের পাঠক্রমে পরিষ্কার চিন্তার সংস্কৃতি নির্বাসিত হচ্ছে।’
‘এই যে সি আর দত্ত, তার মতো মানুষ, তাকে তো আমাদের মনে রাখা উচিত। সাকিব আল হাসান কোনদিন দেশে আসবেন, এসে পৌঁছাবেন, টেলিভিশনে স্ক্রল যাচ্ছে। এগুলো কী? এটা কি দেশের জন্য সবচেয়ে বড় চিন্তা? মিডিয়া কেন এটার পেছনে ছুটবে? মেসি টাকা নিয়ে খেলছে। তিনি বার্সায় যাবেন না কোথায় যাবেন, এটা নিয়ে আমাদের এত সময় নষ্ট করতে হচ্ছে কেন? আমাদের গণমাধ্যমকে আমি দোষ দেই। কারণ তারা একটা অবসেশনে ভোগে। যে নিউজটা বেশি বিক্রি হবে, সেগুলোর পেছনে ছোটে। কিন্তু, মুক্তিযোদ্ধাদের গল্পগুলো যদি আমরা তুলে আনতে পারতাম, তাহলে দেখা যেত সেগুলোই মানুষ গ্রহণ করছে। এটা না করলে আমরা আবর্জনাতেই জড়িয়ে যাব। সামাজিক মাধ্যমে মানুষকে নিয়ে নোংরা কথা হবে, সেখানে সবাই লাফিয়ে পড়বে, ৪০ লাখ মানুষ সেটা দেখবে। আর ভালো একটা মানুষের কথা বললে চার জনও দেখবে না। এই অবস্থা আমরা তৈরি করেছি। এর জন্য আমাদেরকে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে যেতে হবে’, বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘এক্ষেত্রে আরেকটা বিষয়। যারা সেক্টর কমান্ডার তাদের বিষয়গুলো তো আমরা তাও কিছুটা জানি। কিন্তু, একজন কৃষক, যিনি দেশের প্রয়োজনে একটা বন্দুক নিয়ে যুদ্ধে গিয়েছিলেন, তার খবরটা তো আমরা কোনোদিন পাই না। তাদের গল্প কেন তুলে ধরছি না আমরা? শুধু মার্চ কিংবা ডিসেম্বর এলে এত হইচই। এর জন্য আমাদের অ্যাকাডেমিকরা যেমন দায়ী, আমাদের শিক্ষিত ও তথাকথিত সুশীল সমাজও দায়ী, আমি নিজেকেও দায়ী করছি। তবে, আমি একটা চেষ্টা করছি, গ্রামে গ্রামে ঘুরে মুক্তিযোদ্ধাদের গল্পগুলো সংগ্রহের চেষ্টা করছি। এই গল্পগুলো পড়ে এক শ বছর পরেও মানুষ জানবে যে, গ্রামের খুব সাধারণ একজনও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। কারণ এগুলো জানাটা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এগুলো সামনে আনতে হবে, তাদের গল্প তুলে ধরতে হবে।’
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান সামনে আনার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমটা কাজে লাগানো যেতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা নির্ভর করছে লেখক-প্রকাশকদের ওপর। তারা যদি গল্পগুলো সব স্থানে ছড়িয়ে দিতে পারেন, তাহলে মানুষ এগুলো নেবে।’
এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের প্রয়োজন আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে আমি রাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করি না। সরকার আসে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়, সরকার চলে যায় ক্ষমতার পরিবর্তন হয়। তাই এক্ষেত্রে আমি রাষ্ট্র নিয়ে চিন্তা করি না, প্রতিষ্ঠান নিয়ে করি। বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক চর্চা করা উচিত। সুশীল সমাজের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। গণমাধ্যমের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। তবে, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ থাকবে, যেমন: এসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে অর্থ দিতে বাধ্য করতে হবে। কিন্তু, অর্থটা স্বচ্ছতার সঙ্গে খরচ করতে হবে।’
‘পাশাপাশি আমি মনে করি মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ-অবদানের গল্পগুলো সামনে আনার ক্ষেত্রে নাগরিকদের দায়িত্ব আছে, লেখক-প্রকাশকদের দায়িত্ব আছে, শিক্ষিত সমাজের দায়িত্ব আছে। এটা একটা সমন্বিত কাজ। শুধু একটা পক্ষ পারবে না। একেবারে তৃণমূল থেকে চিন্তা করতে হবে। গ্রামের স্কুলগুলোতে যদি আমরা বই পৌঁছে দেই, প্রথম বছর দুই শ, পরের বছর চার শ, এরপর আরও বাড়তে থাকবে। এভাবেই তো কাজ শুরু করতে হবে’, যোগ করেন অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
Comments