কুকুরের প্রতি নির্মম সিটি করপোরেশন
শহর থেকে কুকুর সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এই সিদ্ধান্তকে বেআইনি মনে করছে প্রাণীপ্রেমী সংগঠনগুলো। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গতকাল বুধবার নগর ভবনের সামনে তারা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
কেয়ার ফর পস, অভয়ারণ্য, স্টেলা, প ফাউন্ডেশন, উই আর নেচার এবং একবেলার খাবার বোবা প্রাণীদের জন্য এই কর্মসূচির আয়োজন করে। মানববন্ধন থেকে তারা অপসারণ করে ঢাকা শহরে কুকুর কমানোর পরিবর্তে বন্ধ্যাত্বকরণ কর্মসূচি চালুর দাবি জানান।
অভয়ারণ্য-এর প্রতিষ্ঠাতা রুবাইয়া আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় দক্ষিণের তুলনায় বেশি কুকুর আছে। তারা বন্ধ্যাত্বকরণ কর্মসূচিতে সহায়তা করছে কিন্তু দক্ষিণ সিটি করপোরেশন করছে না। আইন অনুযায়ী, কুকুর নিধন এবং অপসারণ বেআইনি। আমরা সিটি করপোরেশনকে আইন মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি।’
প ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান রাকিবুল হক এমিল বলেন, ‘মাতুয়াইলে অপসারণ করা হলে কুকুরগুলোর জীবনধারা ব্যহত হবে। এটা প্রাণী কল্যাণ আইন, ২০১৯ এর পরিপন্থী। ঢাকার ৭০ শতাংশ কুকুর সরকারের বন্ধ্যাত্বকরণ কর্মসূচির আওতায় আছে। তাই শহর থেকে অপসারণের কোনো প্রয়োজন নেই।’
এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। সৈয়দা গাফফার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। তিনি বলেন, ‘কুকুর হত্যা কোনো সমাধান বয়ে আনবে না। বরং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করবে।’
আইনের বিষয়ে উদাসীন ডিএসসিসি
যোগাযোগ করা হলে সিটি করপোরেশনের ভেটেরিনারি কর্মকর্তা এসএম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইতোমধ্যে ১৫টি কুকুর মাতুয়াইলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা আমাদের বলেছিলেন, যে কারণে প্রাথমিকভাবে কিছু কুকুর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে এতে কাজ হবে না, কুকুরগুলো আবার ফিরে আসবে। এটা কোনো অফিসিয়াল সিদ্ধান্ত না। এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।’
কুকুর নিধন ও অপসারণ বেআইনি— এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কুকুর নিধন বেআইনি আমি শুধু সেটা জানি।’
ভবিষ্যতে কুকুর বন্ধ্যাত্বকরণ কর্মসূচি হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা আমি এখনো জানি না।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রাণী কল্যাণ আইন অনুযায়ী, কুকুর নিধন ও অপসারণ বেআইনি। সরকারি কোনো সংস্থা এটি করে থাকলে সাংবিধানিক অধিকার বলে যে কেউ উচ্চ আদালতে রিট করতে পারেন। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ এ রকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনায় বসা উচিত বলে আমি মনে করি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফিরোজ জামান বলেন, ‘যে কোনো সিদ্ধান্ত বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ভিত্তিতে নেওয়া উচিত। পথ কুকুর আবর্জনা খুঁটে খায়, এরা বাস্তুসংস্থানের উপকার করে। আবার সমস্যার কারণও হতে পারে। যদি কুকুরের বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণের দরকার হয়, জরিপ চালিয়ে এবং বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিকোণ থেকে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।’
Comments