তানভীরের সংগ্রহে ৫০০ প্রজাতির বিদেশি ফুল গাছ
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন বয়সী মানুষ আসেন তানভীর আহমেদের নার্সারির খোঁজে। তার নার্সারিতে আছে পাঁচ শ প্রজাতির বিদেশি ফুল। দেশি ফল ও ফুল মিলিয়ে ৭১৩ প্রজাতির গাছ আছে তার সংগ্রহে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে গড়ে তোলেন নার্সারি। তানভীরের মূল আগ্রহ বিদেশি প্রজাতির গাছ সংগ্রহে। তার নার্সারিতে ৫৭৩ প্রজাতির ফুল গাছের মধ্যে পাঁচ শটি বিদেশি এবং ১৪০ প্রজাতির ফল গাছের মধ্যে বেশিরভাগই বিদেশি প্রজাতির।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে নার্সারিতে গিয়ে দেখা যায়, তানভীরসহ আরও কয়েক জন গাছের পরিচর্যা করছেন। তানভীর আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমার মা বাগান ভালোবাসতেন। তার কাছ থেকে মূলত অনুপ্রাণিত হই। ১৯৯৬ সালে মা মারা যান। ২০০৯ সালে বাবাও চলে যান। ২০১৪ সালে আমি বাড়ির আঙ্গিনায় ছোট পরিসরে একটি বাগান করি। ২০১৮ সালে বাণিজ্যিকভাবে নার্সারি করার সিদ্ধান্ত নিই। ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রতিবেশীর কাছ থেকে পাঁচ বছরের জন্য ২৪ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে বাগানটি করি। এরপর যুক্তরাষ্ট্র, চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতসহ বিশ্বের ২৫টি দেশ এবং আমাদের দেশীয় ৭১৩ প্রজাতির ফুল ও ফল গাছ সংগ্রহ করি।’
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি আগ্রহের জায়গা থেকে তানভীর সব সময় কৃষি বিষয়ে পড়ালেখা করেছেন। তিনি বলেন, ‘গাছের প্রতি ভালোলাগা, ভালোবাসা থেকে বাগান করেছি। এই কাজে থাইল্যান্ড ও আমেরিকার কয়েক জন বন্ধু আমাকে নানাভাবে সহায়তা করেছে।’
‘আমার বাগানে এখন ১০৭ প্রজাতির শাপলা, ৫৬ প্রজাতির পদ্ম ও ২০ প্রজাতির অন্যান্য জলজ ফুল গাছ আছে। এ ছাড়া রয়েছে এক শ প্রজাতির জবা, ৬০ প্রজাতির গোলাপ, ৪০ প্রজাতির কাঠ গোলাপ, এক শ প্রজাতির মরু গোলাপ, ৪০ প্রজাতির সুগন্ধি ফুল ও ৫০ প্রজাতির লতানো ফুল গাছ। আরও রয়েছে ৫০ প্রজাতির ফল গাছ, ২০ প্রজাতির ইন্ডোর প্লান্ট, ২০ প্রজাতির বনজ ও ৫০ প্রজাতির অন্যান্য গাছ। ৫৭৩ প্রজাতির ফুল গাছের মধ্যে পাঁচ শটি বিদেশি এবং ১৪০ প্রজাতির ফলজ ও বনজ গাছের মধ্যে এক শটি বিদেশি প্রজাতির। এঞ্জেল ট্রাম্পেট, গ্লিরিসিডিয়া, কানাইডিংগা, ক্যানাঙ্গা, বিভিন্ন রঙের দোলন চাঁপা, ডম্বিয়া, স্থলপদ্ম, জল গোলাপ, নীল মনি, শ্বেত মনি, গোলাপি সহস্র বেলি, পার্সিয়ান জুঁই, সরস্বতী চাঁপা, ব্ল্যাক প্রিন্সেস, হাজার পাপড়ির পদ্ম, আফ্রিকান বাওবাব, হলুদ শিমুল, রাজ অশোক উল্লেখযোগ্যসহ ৭১৩ প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ আছে। এর মধ্যে জল গোলাপ নামটি আমার দেওয়া। গাছটি জলে হয়। দেখতে খুব সুন্দর, সাদা গোলাপের মতো। তাই ইংরেজি নাম না দিয়ে নাম রেখেছি জল গোলাপ। ক্রেতাদের আমি এই নাম বলেছি, তারাও এই নাম প্রচার করেছে’— বলেন তানভীর।
তানভীর বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ আমার নার্সারির গাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। রাজশাহী সিটি করপোরেশন, গাজীপুরের বিভিন্ন রিসোর্টের মালিক এখান থেকে গাছ কেনেন। রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে নিয়মিত ক্রেতা আসে। বর্তমানে আমার বাগানে ৩০ লাখ টাকা মূল্যের গাছ আছে। তবে, এবারের বন্যায় দেড় শতাধিক প্রজাতির জবা গাছ মারা গেছে।’
হরিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল গফফার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘তানভীর আহমেদের করা বাগানটি আলাদা। দেশি-বিদেশি বিরল প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ রয়েছে তার সংগ্রহে। এসব ফুল ও ফল গাছের বেশ চাহিদা রয়েছে। শিক্ষাজীবন শেষ করে গতানুগতিক চাকরি না খুঁজে তার মতো উদ্যোগ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব। আমি নিয়মিত বাগানের খোঁজ-খবর রাখছি। যদি কেউ বাগান কিংবা স্বতন্ত্র ও প্রচলিত কৃষি উদ্যোগ নিতে আগ্রহী হন, তাকে আমি সাধ্যমতো সহযোগিতা দেবো।’
Comments