ঢাবি থেকে জিনিয়াকে অপহরণ ও বহুরূপি লুপা

তার ছদ্মবেশের শেষ নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে নয় বছরের শিশু জিনিয়াকে অপহরণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া নূর নাজমা আক্তার ওরফে লুপা তালুকদার (৪২) দাবি করতেন, তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাংবাদিকতা করেছেন।
নূর নাজমা আক্তার ওরফে লুপা তালুকদার। ছবি: সংগৃহীত

তার ছদ্মবেশের শেষ নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে নয় বছরের শিশু জিনিয়াকে অপহরণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া নূর নাজমা আক্তার ওরফে লুপা তালুকদার (৪২) দাবি করতেন, তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাংবাদিকতা করেছেন।

তার ফেসবুক প্রোফাইল বলছে, তিনি একজন রাজনৈতিক নেতা, উদীয়মান কবি এবং একটি এনজিওতে চাকরি করেন। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে তোলা তার কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায়।

অপহরণ ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, তিনি জিনিয়াকে অপহরণ করেছিলেন টাকার লোভ দেখিয়ে। কোনো পাচারকারী চক্রের সঙ্গে লুপার যোগাযোগ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গত রোববার রাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে জিনিয়াকে উদ্ধার করে পুলিশ এবং নগরীর ফতুল্লার আমতলা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় লুপাকে। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় দায়ের করা অপহরণ মামলায় লুপা এখন দুই দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।

পুলিশের রমনা ডিভিশনের এডিসি মিশু বিশ্বাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, লুপার ক্রিমিনাল রেকর্ড রয়েছে। ‘একবার তাকে ট্রিপল মার্ডার কেসে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। এছাড়া তার বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগও ছিল।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় ফুল বিক্রি করত জিনিয়া। তাকে গত ১ সেপ্টেম্বর অপহরণ করা হয়।

জিনিয়া তার মা এবং দুই ভাই-বোনের সঙ্গে টিএসসি এলাকায় থাকে। জিনিয়া নিখোঁজ হওয়ার পর তার মা সেনুরা বেগম গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, তিনি সর্বশেষ তার মেয়েকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কাছে দুই নারীর সঙ্গে কথা বলতে দেখেছিলেন।

লুপার ফেসবুক প্রোফাইলে উল্লেখ রয়েছে, তিনি অগ্নি টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ আওয়ামী পেশাজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক।

দাবি করতেন যে তিনি বিভিন্ন সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল এবং টিভি চ্যানেলে সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার ছিলেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের এবং ঢাকা ইউনিয়নের সদস্য বলেও পরিচয় দিতেন।

তার ফেসবুক প্রোফাইলে দেখা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে সাইক্লোন প্রস্তুতি প্রোগ্রাম (সিপিপি) পুরষ্কার ২০১৯ গ্রহণ করছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই ক্ষমতাসীন দল এবং সাংবাদিক সমিতির সঙ্গে তার সংযোগের সমালোচনা করেছেন।

পুলিশ জানিয়েছে যে লুপা এখনও তার পেশা সম্পর্কে যা বলেছেন তার সত্যতা প্রমাণ করতে পারেননি।

এডিসি মিশু বিশ্বাস বলেন, ‘তিনি দাবি করেছেন যে তিনি প্রেসক্লাবের সদস্য, কিন্তু কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি। তিনি শুধুমাত্র মোহনা টিভির একটি বিজনেস কার্ড দিয়েছেন। তার দাবি, মোহনা টিভিতে তিনি একবার কাজ করেছেন। এছাড়া তিনি আর কিছুই দেখাতে পারেননি।’

তিনি আরও জানান, লুপা তদন্ত কর্মকর্তাদের বলেছিলেন যে তিনি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এবং বর্তমানে পেশাজীবী লীগে আছেন।

অপহরণ সম্পর্কে কর্মকর্তাদের লুপা বলেছেন, জিনিয়ার প্রতি সহানুভূতি তৈরি হওয়ায় তাকে বাড়িতে নিয়ে গেছিলেন তিনি। তবে পুলিশের ধারণা, তার আসল উদ্দেশ্য ভিন্ন কিছু হতে পারে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তার সঙ্গে শিশু পাচারকারীদের যোগসূত্র আছে কিনা তা কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখছেন।

লুপা যে ফেসবুক পেজে ক্ষমতাসীন দলের নেতা, মন্ত্রী এবং তার কবিতার সঙ্গে নিজের ছবি পোস্ট করেছেন, সেখানে তার অনুসারী রয়েছে ১০ হাজার।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

5h ago