লালমনিরহাটে জামালের ‘সেলুন লাইব্রেরি’

৩০টি গ্রাম বাজারের ৩০টি সেলুন লাইব্রেরি পরিচালনা করছেন কলেজছাত্র জামাল হোসেন। ছবি: এস দিলীপ রায়

লালমনিরহাট সদর ও আদিতমারী উপজেলার ৩০টি গ্রাম বাজারের ৩০টি সেলুন লাইব্রেরি পরিচালনা করছেন কলেজছাত্র জামাল হোসেন। গত এক বছর ধরে জ্ঞানের প্রসারে এই কাজ করছেন জামাল।

প্রতিটি সেলুন লাইব্রেরিতে প্রতি সপ্তাহে নানা বিষয়ের ১০টি বই সরবরাহ করেন তিনি। ব্যক্তিগত আগ্রহ থেকেই বিনামূল্যে এসব সেলুন লাইব্রেরি পরিচালনা করছেন জামাল। বইয়ের পরিমাণ বাড়ানোরও পরিকল্পনা আছে তার। তবে, আর্থিক সঙ্কটের কারণে এই মুহূর্তে তা করতে পারছেন না।

আদিতমারী উপজেলার টিপার বাজার এলাকার একটি সেলুনের মালিক সুকুমার চন্দ্র শর্মা। তিনি বলেন, ‘জামাল আমার সেলুনটি লাইব্রেরিতে পরিণত করেছেন। এখানে নিয়মিত জামাল হোসেনের দেওয়া বই রাখা হচ্ছে। সেলুনে লাইব্রেরি করায় আমি বেশ উপকৃত হচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগে আমার দোকানের গ্রাহকরা ধূমপান করতেন। তবে এখন তারা ধূমপান করেন না। তারা বই পড়ে সময় ব্যয় করেন। আমি নিজেও কাজের অবসর সময়ে বই পড়ে সময় কাটাই। সেলুন লাইব্রেরিতে আরও বইয়ের চাহিদা আছে।’

একই এলাকার আরেক সেলুনের মালিক সঞ্জয় কুমার শর্মা বলেন, ‘আমার সেলুনের গ্রাহকরা বই পড়ার সুযোগ পেয়ে খুশি। সেলুন লাইব্রেরি তাকে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান করছে।’

লালমনিরহাট শহরের কলেজ রোডে একটি সেলুনের মালিক নন্দ কুমার শীল বলেন, ‘সেলুন লাইব্রেরি আমার এবং গ্রাহকদের জন্য একটি ভালো উদ্যোগ। এখন আমর অবসর সময়কে সঠিক কাজে লাগাচ্ছি। সেলুনে যারা আসেন তারাও এখানে রাখা বই পড়নে।’

প্রতি সপ্তাহে নানা বিষয়ের ১০টি বই সরবরাহ করেন জামাল। ছবি: এস দিলীপ রায়

‘সেুলন লাইব্রেরি মানুষের অবসর সময়কে কাজে লাগাতে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। বই পড়ে জ্ঞানার্জন করার সুযোগ করে দিচ্ছে। সমাজের মঙ্গলে এমন উদ্যোগের দরকার আছে,’ বলেন সেলুনে আসা ব্যবসায়ী নেহের আলী।

আদিতমারী উপজেলার ভাদাই গ্রামের স্কুলশিক্ষক নূর ইসলাম বলেন, ‘সেলুন লাইব্রেরিতে অনেক ধরনের পাওয়া যাচ্ছে। এতে সবাই উপকৃত হচ্ছি। সাধারণত সেলুনে গিয়ে একটু অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় বিরক্তও হতে হয়। কিন্তু, এখন এই অপেক্ষার সময়টুকু বই পড়ে কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে।’

টিপার বাজার গ্রামের কলেজছাত্র দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘শুরু থেকে আমি ও অন্যান্য বন্ধুরা জামালকে সেলুন লাইব্রেরি চালাতে সহায়তা করছি।’

সেলুন লাইব্রেরির উদ্যোক্তা কলেজছাত্র জামাল হোসেন লালমনিরহাট সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও আদিতমারী উপজেলার টিপার বাজার গ্রামের কৃষক আবদুস সাত্তার ও সাহেরবানু বেগমের ছেলে।

জামাল হোসেন বলেন, ‘জেলার পাঁচটি উপজেলায় কমপক্ষে ১০০টি সেলুন লাইব্রেরি পরিচালনা করার পরিকল্পনা আছে আমার। পর্যায়ক্রমে এটি বাস্তবায়ন করবো। আমি টিউশন থেকে যা উপার্জন করছি সেই টাকা ও কিছু বন্ধু সহায়তায় সেলুন লাইব্রেরি পরিচালনা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি দেখেছি মানুষ সেলুনে এসে অহেতুক সময় নষ্ট করে। অনেকে আবার ধূমপার করে সময় কাটায়। তাই আমি সেলুন লাইব্রেরি গড়ে তোলোর উদ্যোগ গ্রহণ করি। আমি মনে করি এতে মানুষ জ্ঞানচর্চার সুযোগ পাবে।’

সেলুনে আসা গ্রাহকরা অপেক্ষার সময় কাটাতে বই পড়ছেন। ছবি: এস দিলীপ রায়

‘সেলুন লাইব্রেরিতে বইয়ের পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে। তবে আর্থিক সঙ্কটের কারণে দ্রুত করতে পারছি না,’ বলেন জামাল হোসেন।

আদিতমারীর সারপুকুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম টিপার বাজার। ওই গ্রামে জামাল হোসেন গড়ে তুলেছেন সারপুকুর যুব ফোরাম পাঠাগার। তার গড়ে তোলা এই পাঠাগারও গ্রামে জ্ঞানের আলো জ্বালিয়েছে। এখন এটি শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের বন্ধন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এমনকি সাধারণ মানুষও এখানে বই পড়তে আসেন।

জামাল হোসেন ২০১৪ সালে এই গ্রন্থাগারটি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরু করেছিলেন মাত্র দশটি বই দিয়ে। তবে, এখন সেখানে আছে ছয় হাজার বইয়ের সংগ্রহ। বইয়ের পাশাপাশি দুটি জাতীয় দৈনিক, একটি আঞ্চলিক দৈনিক এবং একটি চাকরি সংক্রান্ত পত্রিকাও এখানে নিয়মিত রাখা হয়।

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

12h ago