সরকারি ক্রয়ে রাজনৈতিক প্রভাব, ই-জিপির সুফল মিলছে না: টিআইবি

সরকারি ক্রয়ে ই-জিপি (ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট) প্রবর্তনের ফলে ক্রয় প্রক্রিয়া সহজ হলেও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাজের মানন্নোয়নে এর কোনো প্রভাব পড়েনি বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। কার্যাদেশ পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব, যোগসাজশ, সিন্ডিকেট এখনো কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করছে।

আজ বুধবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ‘সরকারি ক্রয়ে সুশাসন: বাংলাদেশে ই-জিপি’র কার্যকরতা পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে একথা জানায় প্রতিষ্ঠানটি।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'ই-জিপি ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং কার্যকরতার মতো তিনটি মৌলিক ক্ষেত্রেই অবস্থান উদ্বেগজনক। সার্বিকভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঘাটতি রয়েছে। এর পেছনে মূলত রাজনৈতিক প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।'

টিআইবি জানায়, রাজনৈতিকভাবে কাজের নিয়ন্ত্রণ ও ঠিকাদারদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার অভিযোগ আছে। কিছু কিছু এলাকায় কোনো বিশেষ কাজে কারা টেন্ডার সাবমিট করবে সেটা রাজনৈতিক নেতা বিশেষ করে স্থানীয় সংসদ সদস্য ঠিক করে দেন। অনেক ক্ষেত্রে একটি বড় লাইসেন্সের অধীনে কাজ নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা তার কর্মীদের মধ্যে বণ্টন করে দেন।

এছাড়াও, দরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহেলা, নিজেরা কাজ না করে কম্পিউটার অপারেটরদের মাধ্যমে মূল্যায়ন রিপোর্ট তৈরি করানো, নম্বর বাড়িয়ে-কমিয়ে আনুকূল্য দেওয়ার অভিযোগ আছে। টিআইবি জানায়, অফিস কর্মকর্তাদের ঠিকাদারদের রেট শিডিউল জানিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। লিমিটেড টেন্ডার মেথড (এলটিএম)-এ কার্যাদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ঘুষ আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এছাড়া কাজ তদারকি, অগ্রগতি প্রতিবেদনে ভুল তথ্য দেওয়া, কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর বিল তুলতে ঘুষ আদায় করার অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে টিআইবি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গবেষণায় ২০১৯ এর জুলাই থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তথ্য সংগ্রহে ই-জিপি বাস্তবায়নকারী প্রথম দিকের চারটি প্রতিষ্ঠান-স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ), বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) কে বাছাই করা হয়।

টিআইবি জানায়, ই-জিপি গাইডলাইন অনুযায়ী ই-জিপি পরিচালনা করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রতিষ্ঠানভেদে সর্বনিম্ন ২০ শতাংশ থেকে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত ক্রয় ই-জিপিতে হয় না। সামরিক বাহিনীর দ্বারা সম্পাদিত কাজের ক্ষেত্রে ই-জিপি অনুসরণ করা হয় না। এছাড়া, কোনো প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা দেওয়া হয় না।

গবেষণায় দেখা যায়, সওজ ছাড়া আর কোনো প্রতিষ্ঠানে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে দরপত্র মূল্যায়ন করা হয় না। কোনো কোনো সময় টেন্ডার ইভ্যালুয়েশন কমিটি (টিইসি) র সদস্যদের পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার অপারেটররা তাদের পক্ষে লগ-ইন করে দরপত্র খোলেন। দরপত্র খোলার আগে ঠিকাদারদের পরিচয় গোপন থাকার নিয়ম থাকলেও কোনো প্রতিষ্ঠানেই এটি গোপন থাকে না। উপরন্তু, কোনো কোনো কার্যালয়ের অফিসের কম্পিউটার অপারেটররাই টাকার বিনিময়ে ঠিকাদারদের হয়ে দরপত্র দাখিল করে। কোনো প্রতিষ্ঠানই প্রাক-টেন্ডার মিটিং করে না।

টিআইবির ১৩ দফা সুপারিশ

বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা উত্তরণ এবং ই-জিপির কার্যকর সুফল পেতে ১৩টি সুপারিশ করেছে টিআইবি। যার মধ্যে রয়েছে--ই-জিপি’কে রাজনৈতিক প্রভাব, যোগসাজশ ও সিন্ডিকেটের দুষ্টচক্র থেকে মুক্ত করা, প্রত্যেক ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের ক্রয় ই-জিপি’র মাধ্যমে করা, প্রাক-দরপত্র মিটিং নিশ্চিত করা, ঠিকাদারদের অনলাইন ডাটাবেইজ তৈরি করা, ই-জিপির সাথে জড়িত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিজস্ব ও পরিবারের অন্য সদস্যদের আয় ও সম্পদের বিবরণী প্রতিবছর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া ও প্রকাশ করা।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান।

Comments

The Daily Star  | English

‘Job scam’: 33 Bangladeshis sue Malaysian firm, govt for Tk 4.8cr

The case was filed with the High Court in the Malaysian city of Shah Alam

8h ago