আসছে ইয়াবা, ফিরেছে চিহ্নিত চোরাকারবারিরা

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় মাদক চোরাকারবারি সিরাজুল মোস্তফা চৌধুরী লালুর নাম ৭৬৪ নম্বরে।
yaba
মাদক ইয়াবা। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় মাদক চোরাকারবারি সিরাজুল মোস্তফা চৌধুরী লালুর নাম ৭৬৪ নম্বরে।

টেকনাফ উপজেলার ওয়াইখ্যাং ইউনিয়নের তুলাতুলি এলাকার বাসিন্দা লালু সাতটি মামলার আসামি। ২০১৮ সালের মে মাসে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকেই তিনি আত্মগোপনে।

তবে তার আত্মগোপন পর্ব শেষ। তিনি ফিরেছেন তার মাদক চোরাচালানের কাজে।

ফিরেছেন আরেক মাদক চোরাচালানকারী সায়েদ আলমও। ওয়াইখ্যাংয়ের মাজারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা তিনি। অভিযুক্ত তিনটি মাদক মামলায়। কয়েক মাস আগে গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি বর্তমানে বরখাস্ত টেকনাফের ওসি প্রদীপ কুমার দাসের সঙ্গে একটি সমঝোতা করেন এবং আত্মগোপনে যান।

সম্প্রতি টেকনাফে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে সায়েদকে।

এই দুই জনের মতো টেকনাফের এক ডজনেরও বেশি তালিকাভুক্ত মাদক চোরাচালানকারী মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর আত্মগোপনে যায়। তারা ফিরে এসেছেন, পুনরায় শুরু করেছেন তাদের মাদক চোরাচালান।

২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি অস্ত্র ও মাদক মামলায় পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন ১০২ জন গডফাদার এবং মাদক চোরাচালানকারী। তারাও জামিনে বের হয়ে আসার চেষ্টা করছেন।

তাদের মধ্যে অন্তত ১০ জন অস্ত্র মামলায় জামিন পেয়েছেন। এখন তারা মাদক মামলায় জামিন পাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে কারাগার সূত্রে জানা গেছে।

২০১৯ সালের এপ্রিলে দ্য ডেইলি স্টার তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, এই ১০২ জনের আত্মসমর্পণ এবং আরও অনেককে গ্রেপ্তারও ইয়াবা চোরাকারবারে বাধা তৈরি করতে পারেননি। তাদের পরিবারের সদস্য এবং এজেন্টরা তাদের পক্ষে এই কাজ অব্যাহত রাখে।

সূত্র মতে, সিনহা হত্যা মামলায় ওসি প্রদীপকে গ্রেপ্তারের পর মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান বন্ধ থাকায় টেকনাফে মাদক চোরাচালান সম্প্রতি নতুন গতি পেয়েছে।

৩১ জুলাই থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলা পুলিশ মাদকের বিরুদ্ধে তেমন কোনো অভিযান পরিচালনা করেনি। যেখানে ইয়াবা উদ্ধারে বড় সাফল্য দেখিয়েছে র‌্যাব ও বিজিবি।

এ বিষয়ে জেলা পুলিশের কাছ থেকে মন্তব্য জানার চেষ্টা করে দ্য ডেইলি স্টার। তবে, কেই এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক মো. আনোয়ার হোসেন গত ১৩ সেপ্টেম্বর জানান, কক্সবাজারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছুই তারা করছেন।

৩১ জুলাই থেকে জেলা পুলিশের শুধু রুটিন দায়িত্ব পালনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিয়মিত কাজে বিঘ্ন না ঘটিয়ে কর্মকর্তাদের আমি সবসময় সজাগ থাকারও নির্দেশ দিয়েছি।’

আবার সক্রিয় তারা

ইয়াবা চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর মোহাম্মদ আলমকে গ্রেপ্তার করে টেকনাফ পুলিশ।

তবে, আদালতে দেখানো হয় ২০১৯ সালের ২ জানুয়ারি তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকের দুটি মামলা করা হয়।

সূত্রের দাবি, আলমকে ১৭ দিন রাখা হয়েছিল ওসি প্রদীপের টর্চার সেলে। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল।

এক বছরের মধ্যেই জামিন পেয়ে যান আলম। জামিন পেয়েই তিনি আত্মগোপনে চলে যান। সম্প্রতি তিনি ফিরে এসেছেন। আলমের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ফিরে এসেছেন আত্মগোপনে থাকা শাহ আলম, মো. ইউসুফ, সামবানু, মো. সিরাজ ও আবদুল আজিজও।

সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক চোরাচালানকারী টেকনাফের জলিয়াপাড়া এলাকার আব্দুল গাফফারের ছেলে মোজা আলমকেও টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে।

যোগাযোগ করা হলে পুলিশের তালিকায় থাকা শাহ আলম জানান, মাদক চোরাচালানকারীদের তালিকায় তার নাম ভুলভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তার দাবি, তিনি কোনো ধরনের অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নন।

মাদক চোরাকারবারের অভিযোগ রয়েছে এমন আরও বেশ কয়েকজন সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে দ্য ডেইলি স্টার। কিন্তু, তাদের মোবাইল বন্ধ থাকায় তা সম্ভব হয়নি।

Comments