পটুয়াখালীতে মাদরাসার ২ শিক্ষকসহ সভাপতির বিরুদ্ধে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার সাজির হাওলা আকবরিয়া দাখিল মাদরাসার শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মাদরাসার একজন জমিদাতা ও সাত শিক্ষার্থীর অভিভাবক এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির সুপার, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ তিন জনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজারকে নির্দেশ দিয়েছেন ইউএনও।
অভিযুক্তরা হলেন- মাদরাসার সুপার মওলানা সুলতানুর রহমান, সহকারী আরবি শিক্ষক কবির উদ্দিন ও প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি মওলানা আবুল কালাম।
জমিদাতা মো. জাকির হোসেনের লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, সরকার শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা বিকাশ অ্যাপসের মাধ্যমে অভিভাবকদের মোবাইলে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেও, অভিযুক্তরা পরস্পর যোগসাজশে বিকাশে নিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মোবাইল সিমটি নিজেদের কাছে অবৈধভাবে জমা রাখেন। ওই বিকাশ অ্যাপসে টাকা আসলে তারা কৌশলে তা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। এভাবে তারা চলতি বছরে প্রথম কিস্তির (জানুয়ারি-জুন) প্রায় পাঁচ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন এবং অভিযুক্তরা ২০১৭ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটির উপবৃত্তির তালিকাভুক্ত শিক্ষার্থীদের আট লাখেরও অধিক টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অভিভাবকরা বিষয়টি টের পেয়ে অভিযুক্তদের চাপ দিলে গত ৯ আগস্ট স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় কিছু টাকা ফেরত দেওয়া হয়।
জাকির হোসেন ছাড়াও সাত জন অভিভাবক গত ১৭ আগস্ট ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার অনাদি কুমার বাহাদুরকে তদন্তের নির্দেশ দেন ইউএনও।
অভিভাবক মনির মুন্সি জানান, নবম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের উপবৃত্তি বাবদ ৬ হাজার ৩৮০ টাকা তার বিকাশ অ্যাকাউন্টে জমা হয়। কিন্তু সিমটি অভিযুক্তদের কাছে থাকায় তারা সব টাকা তুলে নেন। পরে সিমটি ফেরত পাওয়ার পর বিকাশ অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করে ওই টাকা আত্মসাতের বিষয়টি জানতে পারেন তিনি।
অপর অভিভাবক মনির খান জানান, তার ছেলেও নবম শ্রেণিতে পড়ে এবং তার উপবৃত্তির টাকা একইভাবে আত্মসাৎ করে খালি সিমটি ফেরত দেওয়া হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের সাবেক সভাপতি আবু হানিফ জানান, অভিযুক্ত সভাপতি, সুপার ও শিক্ষক একত্রিত হয়ে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতসহ নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। এসব অনিয়মের বিচার হওয়া উচিত।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সহকারী আরবি শিক্ষক কবির উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মাদরাসার সুপার মওলানা সুলতানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে কয়েকজন শিক্ষার্থীর টাকা উত্তোলন করা হয়েছে এবং সেই টাকা তাদেরকে দেওয়া হচ্ছে।’
মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মওলানা আবুল কালাম বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং এ পর্যন্ত উপবৃত্তির চার লাখ টাকা মাদরাসার সহকারী আরবি শিক্ষক কবির উদ্দিন নিয়েছেন বলে নিশ্চিত হয়েছি। এদের মধ্যে ১৯ জন ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে বিধায় তাদের টাকা উত্তোলন করা হলেও, ওইসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে বণ্টন করা যায়নি।’
বিবাহিতা শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির আওতায় রাখা বিধিসম্মত কি না? জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব দেননি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার অনাদি কুমার বাহাদুর বলেন, ‘আমি গত ২০ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে অভিযোগের তদন্ত করেছি, অভিযোগকারীদের বক্তব্য শুনেছি। ওই প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৯৮ জন উপবৃত্তির তালিকাভুক্ত। শিগগির ইউএনওর কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।’
ইউএনও মাশফাকুর রহমান বলেন, ‘উপবৃত্তি আত্মসাতের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
Comments