সৌদিগামী কোনো যাত্রী ফ্লাইট মিস করেননি

সপ্তাহব্যাপী দুর্ভোগ-দুশ্চিন্তার অবসান

ছুটিতে এসে সাত মাস বাড়িতে আটকে থাকার পর ফের সৌদি আরবে যেতে পারবেন শুনে যতোটা খুশি হয়েছিলেন মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, টিকেট করতে ঢাকায় এসে মহাদুর্ভোগে সেই খুশি উবে যায় অনেকটাই, ভর করে দুশ্চিন্তা। চারদিন পর টিকেটে পেলেও করোনা পরীক্ষা নিয়ে শুরু নয় নতুন দুশ্চিন্তা। শুক্রবার রাতে ফ্লাইট ছাড়ার আগে সেই সনদ পেয়ে আকাশে উড়েছেন তিনি। বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সবার সঙ্গে দেখা করতে না পারার আফসোসটা থাকলেও, আপাতত দুর্ভোগ ও দুশ্চিন্তার অবসান হওয়াতেই খুশি তিনি।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ফাইল ছবি

ছুটিতে এসে সাত মাস বাড়িতে আটকে থাকার পর ফের সৌদি আরবে যেতে পারবেন শুনে যতোটা খুশি হয়েছিলেন মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, টিকেট করতে ঢাকায় এসে মহাদুর্ভোগে সেই খুশি উবে যায় অনেকটাই, ভর করে দুশ্চিন্তা। চারদিন পর টিকেটে পেলেও করোনা পরীক্ষা নিয়ে শুরু নয় নতুন দুশ্চিন্তা। শুক্রবার রাতে ফ্লাইট ছাড়ার আগে সেই সনদ পেয়ে আকাশে উড়েছেন তিনি। বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সবার সঙ্গে দেখা করতে না পারার আফসোসটা থাকলেও, আপাতত দুর্ভোগ ও দুশ্চিন্তার অবসান হওয়াতেই খুশি তিনি।

শুধু শহিদুল্লাহ নন, করোনা সনদ পাওয়া নিয়ে দিনভর উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা থাকলেও শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সব বাংলাদেশি প্রবাসী কর্মীই শুক্রবার রাতে সৌদি আরব যেতে পেরেছেন। এর আগে তাদের প্রত্যেকের করোনা সনদ বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক থেকে প্রিন্ট করে দেওয়া হয়। এর ফলে কিছুটা বিলম্ব হয়।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, রাত সাড়ে ১২টায় সৌদি এয়ারলাইনসের এসভি-৮০২ ফ্লাইটটি ছাড়ার কথা ছিল। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ছয় মিনিট দেরিতে ১২টা ৩৬ মিনিটে ৩০২ জন যাত্রী নিয়ে ফ্লাইটটি ছেড়ে যায়।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ-উল আহসান  আজ শনিবার সকালে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বিমানবন্দরের সব কর্তৃপক্ষের আগে থেকে সব প্রস্তুতি ছিল, যাতে কোনো যাত্রীর বিমানবন্দরে ঢোকা থেকে শুরু করে কোনো কাজে কোনো দেরি না হয়। তবে যাত্রীরা কেউ যেহেতু করোনা পরীক্ষার সনদ প্রিন্ট নিয়ে আসতে পারেননি, কাজেই বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক থেকে প্রত্যেকের সনদ প্রিন্ট দিতে হয়েছে। এরপর তারা বোর্ডিং ও ইমিগ্রেশনের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।’

স্বাস্থ্যবিধির বাধ্যবাধকতায় ছয় শতাধিক আসনের সব ফ্লাইটে সর্বোচ্চ ২৬০ জন যাত্রী পরিবহনের কথা। তবে গতকালের ফ্লাইটে ৩০২ জন যাত্রী গেছেন। এর ব্যাখ্যা জানতে চাইলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক এ এইচ এম তৌহিদ-উল আহসান বলেন, ‘মূলত কমার্শিয়াল ফ্লাইটে সাধারণ যাত্রী নিয়ে যখন ফ্লাইট হবে, তখন ২৬০ জন যাত্রী নিয়ে যাবে। তবে বিশেষ বিমানে এই বাধ্যবাধকতা নেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে এভাবে বিশেষ ফ্লাইট চালানো যাবে। কাল রাতের ফ্লাইটটি বিশেষ ফ্লাইট ছিল। আরও কয়েকটি বিশেষ ফ্লাইট যাবে।’

এর আগে, প্রচণ্ড দুশ্চিন্তা নিয়ে ঢাকার বিভিন্নস্থান থেকে বিমানবন্দরে আসতে থাকেন যাত্রীরা। ফ্লাইট ছাড়ার আগে সৌদিগামী একাধিক প্রবাসী জানান, বিমানবন্দরে প্রবেশ করা থেকে শুরু করে ফরম পূরণ, ইমিগ্রেশনসহ সব কাজে তারা সবার সহযোগিতা পেয়েছেন। এজন্য তারা সব কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

বিমান ছাড়ার আগে আরিফ হোসেন নামের এক প্রবাসী সব কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ আমাদের ওপর দিয়ে যে ঝড় গেল, কাউকে বোঝানো যাবে না। টিকেট পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা, টিকেট পাওয়ার পর করোনা পরীক্ষা, দিনভর অপেক্ষা করেও পরীক্ষার ফল না পাওয়া, রাতে মোবাইলে মেসেজ আসা, সব মিলে আমার খুব যন্ত্রণায় ছিলাম। আমাদের এই যন্ত্রণা কমানো জন্য সবাইকে অনুরোধ করছি।’

প্রবাসী এই বাংলাদেশিরা জানান, সৌদি এয়ারলাইনসের এসভি-৮০২ ফ্লাইটটি শুক্রবার রাতে ছাড়ার কথা থাকলেও, শুক্রবার রাত ৮টা বেজে গেলেও তারা কেউ করোনা পরীক্ষার মেসেজ পাননি। ফলে সবাই দুশ্চিন্তায় ছিলেন। তবে রাত ৮টার পর থেকেই অনেকেই মেসেজ পেতে থাকেন। তাদের বলা হয়, মহাখালী গিয়ে কাউকে প্রিন্ট কপি আনেতে হবে না। বিমানবন্দরে গেলে সেখান থেকেই প্রিন্ট দেওয়া হবে।

বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেটে করোনাভাইরাস নমুনা পরীক্ষা কেন্দ্রের সমন্বয়ক চিকিৎসক সমীর কান্তি সরকার গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা রাত ৮টার পর থেকে সবাইকে মেসেজ দেওয়া শুরু করেছি। যাদের হোয়াটস অ্যাপ আছে সেখানেও মেসেজ দেওয়া হয়েছে। মহাখালীতে প্রিন্ট নিতে আসলে বিমানবন্দরে পৌঁছানো অসম্ভব হয়ে যাবে বলে সৌদি আরবগামী প্রত্যেককে আমরা বিমানবন্দরে চলে যেতে বলি। প্রয়োজনে সেখান থেকেই প্রিন্ট কপি দেওয়া হবে। আমরা চাইছি না একজনও ফ্লাইট মিস করুক।’

গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর অনুমতি দেয় সৌদি সরকার। এরপর সৌদি এয়ারলাইনসকে সপ্তাহে দুটি ফ্লাইট চালানোর অনুমতি দেয় বাংলাদেশ। এই টিকিট পাওয়া নিয়ে শুরু হয় যুদ্ধ।

প্রবাসীরা বলছেন, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে না যেতে পারলে তাদের চাকরি থাকবে না, ভিসায়ও জটিলতা হবে। ফলে গত সপ্তাহ পুরোটাই রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সোনারগাঁও হোটেল সংলগ্ন সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইনসের টিকিট বুকিং অফিসের সামনে প্রবাসীরা বিক্ষোভ করেন। এরপর বহু কষ্টে টিকিট পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই তারা ছুটতে থাকেন মহাখালীর করোনা পরীক্ষা কেন্দ্রে। অনেকেই বিকালের আগে নমুনা দিতে পারলেও, নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাতে পারেননি অনেকে। ফলে শুক্রবার ভোর থেকে আবার এই প্রবাসীরা লাইনে দাঁড়ান।

রাজধানীর মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেটে করোনাভাইরাস নমুনা পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, ২৬, ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বরের সৌদি এয়ারলাইনস ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের টিকিট যারা হাতে পেয়েছেন, তারা সবাই করোনা পরীক্ষার জন্য এসেছেন। ফলে শুক্রবার সকাল থেকেই ছিল প্রচণ্ড ভিড়। এর মধ্যে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় আরও সমস্যা তৈরি হয়।

নমুনা পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক সমীর কান্তি সরকার বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকাল ৪-৫টায় অনেকে টিকিট পেয়েছেন। আমাদের অনুরোধ, যাদেরকে টিকিট দেওয়া হচ্ছে, তাদের যেন দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে টিকিট দিয়ে দেওয়া হয়, যাতে দ্রুত এসে ওইদিনই তারা নমুনা দিতে পারেন। এই পুরো কাজের যথাযথ সমন্বয় দরকার।’

সৌদি আরবগামী প্রায় সব যাত্রীই দুর্ভোগ-দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ নামের এক যাত্রী বলেন, ‘আমরা অনেকেই গত পাঁচ-ছয়দিন ধরে এক কাপড়ে আছি। অনেকে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। আমি যেমন ঢাকাতেই আছি। পরে আমার স্ত্রীকে বলি আমার পক্ষে বাড়ি যাওয়া সম্ভব নয়। এরপর শুক্রবার তারা নোয়াখালী থেকে ঢাকায় চলে আসে আমার ব্যাগ গুছিয়ে। বিমানবন্দরেই আমাদের সবার সঙ্গে দেখা হয়েছে। আমাদের অবস্থা একটু ভাবুন। ছুটিতে বাংলাদেশে এসে যারা আটকে পড়েছেন তারা সবাই যেন কাজে যোগ দিতে পারেন, সে বাপারে সব ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আর টিকেটের দাম কমানো জরুরি। এক থেকে দেড় লাখ টাকা টিকিট মানে একেকজন সাত-আটমাসের বেতন।’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম রাতে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানে সরকারের আন্তরিকতা বা উদ্যোগের কোনো ঘাটতি নেই। একটি বিষয় সবাইকে বুঝতে হবে, পৃথিবীর অনেক কিছু এখন জটিল হয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে হয়ত এমন অনেক ঘটনা ঘটবে, যেটি আমরা আগে কখনো দেখিনি। সৌদি আরব কিন্তু অনেক দেশ থেকে এখনো কর্মী নেওয়া শুরু করেনি। বাংলাদেশ থেকে কর্মীরা যেতে পারছেন। আমাদের অনুরোধে তারা আকামার মেয়াদ বাড়িয়েছে। সবাই যেন নির্ধারিত সময়ে যেতে পারেন, সেজন্য আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি।’

শরিফুল হাসান, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Fashion brands face criticism for failure to protect labour rights in Bangladesh

Fashion brands, including H&M and Zara, are facing criticism over their lack of action to protect workers' basic rights in Bangladesh, according to Clean Clothes Campaign (CCC)..One year after a violent crackdown by state actors and employers against Bangladeshi garment workers protesting

6m ago