টানা বৃষ্টিতে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ে জনজীবন বিপর্যস্ত, ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা

ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ে তিন দিনের ভারি বর্ষণের ফলে জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধ হয়ে দুর্দশায় আছে দুই জেলার কমপক্ষে দুই হাজার পরিবার। বৃষ্টিপাতের ফলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আমন খেতসহ আগাম শীতকালীন সবজির।
ছবি: মো. কামরুল ইসলাম রুবাইয়াত

ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ে তিন দিনের ভারি বর্ষণের ফলে জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধ হয়ে দুর্দশায় আছে দুই জেলার কমপক্ষে দুই হাজার পরিবার। বৃষ্টিপাতের ফলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আমন খেতসহ আগাম শীতকালীন সবজির।

আজ শনিবার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, গতকাল বিকেলে সেখানে ১১৫ দশমিক পাঁচ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আর, আজ সকাল এগারটায় রেকর্ড করা হয়েছে ১১০ দশমিক পাঁচ মিমি।

ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘জেলার টাঙ্গন, নাগর ও বুজরুক নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম না করলেও, কাছাকাছি দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এভাবে বর্ষণ চলতে থাকলে যে কোন সময় তা বিপৎসীমা অতিক্রম করবে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আফতাব আহমেদ জানান, গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত জেলায় গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৪৬ দশমিক আট মিমি। আর, আজ শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত জেলায় গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৬৫ দশমিক পাঁচ মিমি। তবে, জেলা সদরে ৮৬ মিমি ও বালিয়াডাঙ্গীতে ৭০ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘টানা বৃষ্টিপাত ও মেঘলা আবহাওয়ার কারণে চলতি আমন মৌসুমে খেতে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। তবে, তা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছায়নি।

যাদের ক্ষেতে পোকার আক্রমণ দেখা দিচ্ছে তাদের দ্রুত কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সিস্টেমেটিক ইন্সেক্টিসাইড কীটনাশক স্প্রে করে পোকা ও বিভিন্ন রোগের আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

আবহাওয়ার উন্নতির সঙ্গে পাতা মোড়ানো রোগ, মাজরা পোকা, গোঁড়া পচা ইত্যাদি রোগ স্বাভাবিকভাবে কমে যাবে বলে তিনি আশা করেন।

বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে টানা বর্ষণের ফলে আগাম শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ফাড়াবাড়ী গ্রামের মেহেদুল ইসলাম (৪০) জানান, তিনি প্রায় ১৪০ শতক জমিতে এ পর্যন্ত ৮৩ হাজার টাকা ব্যয় করে বেগুনের আবাদ করেছেন। বৃষ্টির কারণে অধিকাংশ গাছ মরে গেছে।

একই এলাকার বাবু (৩৫) প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ করে করলার আবাদ করেছেন। অতিবৃষ্টির কারণে গাছ বাঁচিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে বলে তিনি জানান।

ঠাকুরগাঁওয়ে বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- ঠাকুরগাঁও পৌর এলাকার খালপাড়া, ডিসি বস্তি, মুন্সিপাড়া, কলেজপাড়া, নয়াবস্তি, শেনুয়াপাড়া এবং সদর উপজেলার সালন্দর, বরুনাগাঁও এবং কুমারপাড়া।

এ ছাড়াও, রানীশংকৈল, পীরগঞ্জ ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বেশ কয়েকটি গ্রামও বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়।

যোগাযোগ করা হলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বন্যা কবলিত অঞ্চলে জলাবদ্ধ পরিবারের তালিকা করতে বলা হয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যানদের প্লাবিত অঞ্চল ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসমূহের তথ্য প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে।’

প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় আজ বিকেল তিনটার দিকে বজ্রপাতে দশ বছরের এক শিশুসহ দুজন মারা গেছেন এবং আরও এক যুবক গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানান রানীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম জাহিদ ইকবাল।

নিহতরা হলেন- উপজেলার দূর্লভপুর গ্রামের নাসিরুল ইসলামের ছেলে রনি (১০) ও একই গ্রামের আবুল কালামের  ছেলে আলিম (২০)। গুরুতর আহত আব্দুর রউফ (২৫) বর্তমানে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানান রাণীশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফিরোজ আলম।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago