মুক্তিপণ আদায়ে কিশোর হত্যার দায়ে যুবলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ৪

সাভারের আশুলিয়ায় মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে এক মাদ্রাসা ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় যুবলীগ নেতা আবুল হোসেন আপনসহ চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

সাভারের আশুলিয়ায় মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে এক মাদ্রাসা ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় যুবলীগ নেতা আবুল হোসেন আপনসহ চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শনিবার দুপুরে সাভার মডেল থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- আশুলিয়ার কন্ডা এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে আবুল হোসেন (৩০), পবনারটেক এলাকার আদিল (২০), শ্রীপুর এলাকার কামরুল ইসলাম (২১) এবং জিরানী এলাকার রুবেল ইসলাম (২১)। এদের মধ্যে আবুল হোসেন আপন থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।

নিহত সবুজ (১৬) লালমনিরহাট সদর উপজেলার কাজী কলোনি গ্রামের মিছির আলীর ছেলে। বাবা-মায়ের সঙ্গে রাগ করে বন্ধু জাহিদুল ইসলামকে (১৪) নিয়ে গত সোমবার সে আশুলিয়ার পাবনারটেক এলাকায় বোনের বাসায় যাচ্ছিলেন।

আশুলিয়া থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সবুজ ও জাহিদুল লালমনিরহাট থেকে বাসে করে সোমবার রাত দেড়টার দিকে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ডিইপিজেড) বাস স্ট্যান্ডে নামেন। এরপর বোনের বাসায় যাওয়ার রাস্তাটি হারিয়ে ফেলেন। পথে কামরুলের সঙ্গে তাদের দেখা হয়। কামরুল তাদের পরিচয় ও কোথায় যাচ্ছে জানতে চান। সব শুনে কামরুল তাদের সমবেদনা দেখিয়ে রাতটুকু হোটেলে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এ কথা বলে কামরুল তাদের শ্রীপুর মোজার মিল এলাকায় নির্জন ডোবার পাড়ে নিয়ে যান।

এরপর কামরুল মুঠোফোনে কল করে আবুল হোসেনসহ অন্তত ১৩ জনকে ডোবার পাড়ে ডেকে নেন। তারা ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ চেয়ে সবুজের মায়ের কাছে কল করেন। বিকাশের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে টাকা না পাঠানোর কারণে তারা সবুজ ও জাহিদুলকে মারধর করতে থাকেন। একপর্যায়ে মঙ্গলবার সকালে সবুজ মারা যায়। জাহিদুল অচেতন হয়ে পড়ে। দুর্বৃত্তরা মৃত ভেবে দুজনকে ডোবার পাড়ে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান বলেন, ‘সবুজের বোন বিউটি আক্তার গত বুধবার অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে আশুলিয়া থানায় মামলা করেন। প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে গত শুক্রবার রাতে আশুলিয়ার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

আবুল হোসেন দীর্ঘদিন ধরে কিশোর গ্যাং পরিচালনা করে আসছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে অনেক অপকর্মের তথ্য পাওয়া গেছে বলেও জানান ওসি।

যোগাযোগ করা হলে আশুলিয়া থানার পরিদর্শক(তদন্ত) জিয়াউল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত চার জনকে সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে ঢাকার মুখ্য বিচারিক আদালতে পাঠানো হলে আদালত যুবলীগ নেতা আবুল হোসেনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।’ 

এলাকাবাসীর অভিযোগ, যুবলীগ নেতা ও তার দুই ভাই জাকির মণ্ডলের এবং বাবুলের হাতে এলাকার লোকজন জিম্মি হয়ে পড়েছে। তাদের নামে আশুলিয়া ও আশপাশের বিভিন্ন থানায় পুলিশ সদস্য কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা, গুলি করে হত্যা, চাঁদাবাজি, নির্যাতনসহ ডজন খানেক মামলা আছে। এলাকায় বিভিন্ন যানবাহন থেকে চাঁদাবাজীসহ সব ধরনের অপকর্ম জাকির বাহিনীর লোকজন পরিচালনা করে থাকে। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেও সাহস পায় না।

এ ব্যাপারে ঢাকা  জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জিএস মিজান দ্যা ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ঘটনা শোনার পর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’

Comments

The Daily Star  | English
economic challenges for interim government

The steep economic challenges that the interim government faces

It is crucial for the interim government to focus on setting a strong foundation for future changes.

12h ago