করোনার মধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ের ১০ আশ্রয়কেন্দ্রে বানভাসিদের গাদাগাদি জীবন

টানা তিন দিনের বর্ষণ ও উজানের পানিতে ঘর তলিয়ে যাওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ের তিনটি উপজেলার ১০টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় এক হাজার একশ বন্যার্ত পরিবারের আনুমানিক সাড়ে তিন হাজার মানুষ ঠাঁই নিয়েছেন। করোনাভাইরাসের ঝুঁকি উপেক্ষা করে মানবেতর দিনযাপন করতে হচ্ছে তাদের।
Thakurgaon-1.jpg
ঠাকুরগাঁওয়ের তিনটি উপজেলার ১০টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় এক হাজার একশ বন্যার্ত পরিবারের আনুমানিক সাড়ে তিন হাজার মানুষ ঠাঁই নিয়েছেন। ছবি: স্টার

টানা তিন দিনের বর্ষণ ও উজানের পানিতে ঘর তলিয়ে যাওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ের তিনটি উপজেলার ১০টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় এক হাজার একশ বন্যার্ত পরিবারের আনুমানিক সাড়ে তিন হাজার মানুষ ঠাঁই নিয়েছেন। করোনাভাইরাসের ঝুঁকি উপেক্ষা করে মানবেতর দিনযাপন করতে হচ্ছে তাদের।   

তবে অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে না এসে উঠেছেন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে।

জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুসারে, ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ছয়টি কেন্দ্র ও সদর উপজেলার ঢোলার হাট ইউনিয়নের খড়িবাড়ি কাচারীপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দেবীপুর ইউনিয়নের কমিউনিটি সেন্টার কেন্দ্রে প্রায় সাতশ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

রানীশংকৈল উপজেলার একটি আশ্রয়কেন্দ্রে তিনশ পরিবার এবং বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার একটি আশ্রয়কেন্দ্রে একশ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় নেওয়া প্রত্যেক পরিবারকে দশ কেজি করে চাল সহায়তা হিসেবে দেওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় হতে প্রাপ্ত ত্রাণ তহবিল থেকে এসব খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।

গতকাল রাতে ঠাকুরগাঁও শহরের বেশ কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করে দেখা গেছে, করোনা সংক্রমণের চূড়ান্ত এই সময়ে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে মানবেতর দিন অতিবাহিত করতে হচ্ছে বানভাসি মানুষগুলোকে।

ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজে আশ্রয় নেওয়া বিমল মারডি (৬০) বলেন, ‘ঘরে জল ঢুকে পড়েছে, তাই পরিবারের পাঁচ সদস্য নিয়ে এখানে উঠেছি। এক বর্ষাতেই তিনবার বাড়ি ছেড়ে আসতে হল, এত দুর্দশা যাচ্ছে এইবার, যা বলার ভাষা নেই।’

জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আশ্রয় নেওয়া টাঙ্গন নদী সংলগ্ন ডিসি বস্তি এলাকার জমিলা খাতুন (৫৫) বলেন, ‘প্রবল বর্ষণে পানি বাড়তে বাড়তে এমন অবস্থা হল যে, মূল রাস্তার সংযোগ সড়ক ভেঙে যাওয়ায় প্রায় তিন-চারশ পরিবারের সদস্যরা পানির তোড়ে বাড়ি ছেড়ে উঠে আসতে পারছিল না। পরে জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে দমকল বাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় এই মানুষগুলোকে উদ্ধার করে এখানে নিয়ে আসে।’

শহরের বুলবুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রিভারভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, পৌরসভা এলাকার নিম্নাঞ্চলের পরিবারসমূহ সেই কেন্দ্র দুটিতে আশ্রয় নিয়েছে। পর্যাপ্ত জায়গা সংকুলান না হওয়ায় গাদাগাদি করে কোনোভাবে দিন অতিক্রম করছেন তারা।

Thakurgaon-2.jpg
জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আশ্রয় নেওয়া বানভাসি পরিবার। ছবি: স্টার

বুলবুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে খালপাড়ার বাসিন্দা সুন্দর আলী (৪৯) বলেন, ‘স্ত্রী ও দুই কন্যা সন্তানের সঙ্গে একটি গরু ও একটি ছাগল নিয়ে এসেছি।

করোনা সংক্রমণ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘থাকারই যেখানে সমস্যা, সেখানে ভাইরাসের আক্রমণ নিয়ে ভাবার সময় কি আছে? কিছু হলে হবে, আমাদের তো আর অন্য কোনো উপায় নেই।’

একই অবস্থা প্রায় সবগুলো আশ্রয়কেন্দ্রে।

যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘পৌরসভার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে চাল বিতরণের পাশাপাশি খাবার রান্না করে তা পরিবেশনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যেহেতু শহরের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে রান্না করাটা বেশ কঠিন।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তাদের পাশে থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার প্রস্তুতি জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় প্রশাসনকে নিতে বলা হয়েছে।’ 

অতি বর্ষণের ফলে আমন ধানসহ শীতকালীন সবজি চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। মৎস্য চাষিদের দাবি, ভারী বর্ষণে পুকুর, জলাশয় তলিয়ে যাওয়ায় তাদের সব মাছ ভেসে গেছে।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তারা ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে কাজ করছেন বলে জানান। 

Comments

The Daily Star  | English
economic challenges for interim government

The steep economic challenges that the interim government faces

It is crucial for the interim government to focus on setting a strong foundation for future changes.

14h ago