‘নদী রক্ষার সঙ্গে জড়িত মন্ত্রণালয়গুলোর সদিচ্ছার অভাব আছে’
নদী রক্ষার সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সদিচ্ছার অভাব আছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মজিবুর রহমান হাওলাদার।
তিনি সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়কে সদিচ্ছা ও সহযোগিতার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে এসে একসঙ্গে কাজ করার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে উন্নয়ন কার্যক্রমের পাশাপাশি নদী দখল-দূষণও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। আদালতের রায় বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের। নদী রক্ষার সঙ্গে যে মন্ত্রণালয়গুলো জড়িত তাদের সদিচ্ছার অভাব আছে। আমরা তাদের সহযোগিতা কামনা করছি। নদী শুধু খনন করলেই চলবে না, নদীর দুই পাড়ও প্রসারিত করতে হবে।’
তিনি জানান, নদী কমিশন বিভাগওয়ারী প্রতিবেদন তৈরির কাজ শেষ করেছে, যা আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে প্রকাশিত হবে।
আজ সোমবার বিশ্ব নদী দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
সোমবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি) ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) যৌথ উদ্যোগে এবং জাতীয় দৈনিক ডেইলি স্টারের সহযোগিতায় এই ভার্চুয়াল গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
বৈঠকে বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বিষয়ভিত্তিক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি দেশের নদ-নদীর একটি সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘দেশের বেশকিছু নদী রক্ষায় উচ্চ আদালতের রায় থাকার পরও এই নদীগুলো রক্ষা করা যাচ্ছে না। ট্যানারি শিল্পকারখানার মালিকেরা ইটিপি ব্যবহার করছে না। সরকারকে প্রণোদনা দিয়ে হলেও আইন মানতে তাদের বাধ্য করা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার নদী রক্ষা কমিশন গঠন করেছে ঠিকই, কিন্তু নদী রক্ষায় প্রয়োজনীয় কাজগুলো করার জন্য কমিশনকে কোনো ক্ষমতায়িত করেনি। কমিশন এ পর্যন্ত নদী রক্ষায় ১২২ দফার সুপারিশ তৈরি করলেও বাস্তবায়নে যথাযথ কাজ করতে পারছে না।’
বৈঠকের সভাপতি খুশি কবির বলেন, ‘রাষ্ট্রের ভ্রান্ত উন্নয়ন নীতি ও প্রকল্পগুলো নানাভাবে নদীগুলোকে হত্যা করছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও কেন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে না সেটা চিহ্নিত করা প্রয়োজন।’
তিনি জাতীয় নদী কমিশনসহ বিভিন্ন সংস্থা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি ওয়াচডগ প্লাটফর্ম গঠনের সুপারিশ করেন।
ড. আইনুন নিশাত বলেন, ‘নদীর সংখ্যা নির্ধারণের আগে নদীর সংজ্ঞা আমাদের জানতে হবে। দখল-দূষণের বাইরেও নদীর জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করতে হবে। নদীর প্রবাহ কমে যাওয়া, সংকুচিত হয়ে যাওয়া এবং পানির গুনগত মান নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে নদীগুলো মরে যাচ্ছে।’
নদী কমিশনের সদস্য শারমিন মুরশিদ বলেন, ‘নদী কমিশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে একটি টানাপড়নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি, উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়ন নিয়েও সরকারের আমলাদের সাথে নদী কমিশনের টানাপড়ন চলছে। এই টানাপোড়েন দূর করতে সরকারের ভেতরে যারা নদী রক্ষায় অনিয়ম করছে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
ম. ইনামুল হক বলেন, ‘নদী রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা আছে ঠিকই কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্রের ভেতরেই কিছু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় কাজ হচ্ছে না। জটিলতা কেন হচ্ছে সেটা ভাবা প্রয়োজন। জনস্বার্থে জনগণকে নদী দখল-দূষণবিষয়ক মামলা করার ক্ষমতা দেওয়া হলে দ্রুত সমস্যা কমে যাবে। আইনগত ঘাপলা দূর করার জন্য পরিবেশ আইনের ১৭ নং ধারা সংশোধন করা প্রয়োজন।’
এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, ‘নদী রক্ষা কমিশন অনেক প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও কাজ করার চেষ্টা করছে। দেশের আইনি প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে দ্রুত মামলার রায় পাওয়া যায়না। এই প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করার জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। নদীর মালিক সমগ্র জনগণ। আইনে এর বিধান থাকতে হবে।’
তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘সিএস ম্যাপ ব্যবহার করে নদী চিহ্নিত করা হচ্ছে না। ড্রেজার দিয়ে নদীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ভূমি মন্ত্রণালয় নদী লিজ দিচ্ছে।’
রফিকুল আলম বলেন, ‘নদী উদ্ধারে এবং দখল-দূষণ প্রতিরোধে তরুণ সমাজকে এবং মিডিয়াকে কাজে লাগাতে হবে।’
সালেহীন চৌধুরী শুভ বলেন, ‘হাওড় অঞ্চলের নদীগুলোতে ইউরেনিয়াম দূষণ দেখা দিয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ের আলোচনা শুরু করা না গেলে আগামীতে হাওরে চরম সংকট দেখা দেবে।’
আনোয়ারুল কাদির বলেন, ‘দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রেক্ষাপটে নদী দখলের চেয়ে ভরাট হয়ে যাওয়ার বিষয়টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এখানে নদী ব্যবস্থাপনার সঙ্গে পলি ব্যবস্থাপনাও করতে হবে। কারণ প্রায় প্রতিটি নদীর মুখে পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে শাখা নদীগুলো মরে যাচ্ছে। লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
Comments