পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথের অধিকাংশ ফেরিই পুরনো, চলছে জোড়াতালি দিয়ে
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের যাতায়াতের অন্যতম রুট পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথের অধিকাংশ বড় ও মাঝারি আকারের ফেরিগুলো পুরনো। এগুলো ঘন ঘন বিকল হয়ে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। মেরামতের খরচ হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। এসব পুরনো ফেরির বদলে নতুন ফেরি তৈরি করা হলে মেরামতের অযথা ব্যয় হবে না। কমে যাবে যাত্রীদের ভোগান্তিও। এমনটিই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রো-রো ফেরি শাহজালাল ও আমানত শাহ তৈরি হয় ১৯৮০ সালে। শাহ আলী ও শাহ মখদুম তৈরি হয় ১৯৮৫ সালে। শাহ পরান ও খানজাহান আলী তৈরি হয় ১৯৮৭ সালে। কেরামত আলী ও এনায়েতপুরী তৈরি হয় ১৯৮৯ সালে। বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর ও ভাষাশহীদ বরকত তৈরি হয় ১৯৯৩ সালে। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর ও বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান তৈরি হয় ২০০২ সালে। বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন তৈরি হয় ২০১২ সালে এবং ভাষাসৈনিক গোলাম মওলা তৈরি হয় ২০১৫ সালে।
এই বড় আকারের ১৪টি রো-রো ফেরির মধ্যে ১১টি পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে এবং তিনটি ফেরি— শাহ মখদুম, শাহ পরান ও শাহ এনায়েতপুরী চলাচল করে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথে। বর্তমানে নাব্যতা সংকটের কারণে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে বড় ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় শাহ পরান ও শাহ এনায়েতপুরীকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে আনা হয়েছে। ওইপথে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হলে এই দুটি ফেরি সেখানে চলে যাবে।
কে-টাইপ ফেরি কেতকী তৈরী হয় ১৯৭৩ সালে এবং তা পুনর্বাসন করা হয় ১৯৯৯ সালে। অন্যটি ‘ফেরি-ঢাকা’ ও ঘন ঘন বিকল হয়। তবে, ভালো সেবা দিচ্ছে ২০১৩ সালে তৈরি ছয়টি ইউটিলিটি ফেরি— বনলতা, মাধবীলতা, হাসনাহেনা, শাপলা শালুক, রজনীগন্ধা ও চন্দ্রমল্লিকা।
বিআইডব্লিউটিস’র আরিচা আঞ্চলিক কার্যালয়ের কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আব্দুস সাত্তার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ১১টি রো-রো ফেরি, একটি কে-টাইপ ফেরি ও চারটি ইউটিলিটি ফেরি চালু রয়েছে। রো রো ফেরি— বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন ও ইউটিলিটি ফেরি রজনীগন্ধা মেরামতে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে। ১০ দিন মেরামতের পর তিন দিন আগে নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ড থেকে ফেরিবহরে যুক্ত হয়েছে রো-রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান। পাটুরিয়া ঘাটের কাছে ভাসমান কারখানা মধুমতিতে মেরামতে রয়েছে রো-রো ফেরি শাহ এনায়েতপুরী।’
‘পুরনো ফেরিগুলো বিক্রি করে আধুনিক ও দ্রুতগতির ক্ষমতা সম্পন্ন ফেরি তৈরি করতে বাংলাদেশ বিআইডব্লিউটিসি’র প্রধান কার্যালয়ে পত্র দেওয়া হয়েছে’, বলেন তিনি।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি’র প্রধান প্রকৌশলী গফুর সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বিধি অনুযায়ী ২৫ বছরের কম বয়সী ফেরিগুলো বিকল হলে তা মেরামত করে চালাতে হয়। ২৫ বছরের বেশি হলে ফেরি বদল করা দরকার। কিন্তু, একটি রো-রো ফেরি থৈরি করতে লাগে ৩৮ থেকে ৪০ কোটি টাকা। প্রয়োজনীয় সংখ্যক রো-রো ফেরি তৈরি করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। টাকা সাশ্রয়ের কথা মাথায় রেখেই নতুন করে কোনো রো-রো ফেরি তৈরির চিন্তা আমরা করছি না।’
‘তবে, মাঝারি আকারের কে-টাইপ ফেরি তৈরির কাজ চলছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে চারটি কে-টাইপ ফেরি তৈরি হবে। এ ছাড়া, ছোট আকারের কিছু ইউটিলিটি ফেরি তৈরির কাজও চলছে। আগামী এক বছরের মধ্যে ফেরি বহরে চারটি ইউটিলিটি ফেরি যুক্ত হবে। এসব তৈরি হলেই বিদ্যমান সমস্যার কিছুটা সমাধান হবে’, যোগ করেন তিনি।
Comments