আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ৯৫, নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠক
বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যকার সংঘর্ষে কমপক্ষে আরও ২৬ জন বিচ্ছিন্নতাবাদী যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। রোববার থেকে শুরু হওয়া এ সংঘর্ষে ৮৪ সেনাসদস্যসহ ৯৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে জানিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত কারাবাখের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার দুই দেশের মধ্যকার বিরোধ নিয়ে আলোচনার জন্য জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।
আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে আজারবাইজানের নয় জন ও আর্মেনিয়ায় দুই জন বেসামরিক নাগরিক আছেন।
তবে, এ সংঘর্ষে সামরিক হতাহতের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি আজারবাইজান।
এই লড়াইকে ‘জীবন-মরণ যুদ্ধ’ বলে ঘোষণা দিয়েছেন নাগোরনো-কারাবাখ নেতা আরায়িক হারুতিউন্যান।
২০১৬ সালের পর থেকে সাবেক সোভিয়েত প্রতিদ্বন্দ্বী আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে ক্রমাগত সংঘাত বেড়েই চলছে।
মঙ্গলবার জার্মানি ও ফ্রান্সের অনুরোধে নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলের সংঘর্ষ নিয়ে আলোচনার জন্য জরুরি বৈঠকে বসবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ আজারবাইজান ও খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ আর্মেনিয়ার মধ্যে বিস্তৃত অঞ্চলকে ঘিরে লড়াই ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হলে তাতে প্রতিবেশী শক্তিশালী দুই রাষ্ট্র রাশিয়া ও তুরস্ক মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসতে পারে এবং অন্যান্য ক্ষমতাধর দেশগুলোও জড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আলজাজিরা জানায়, আর্মেনিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার দীর্ঘ দিনের সামরিক সখ্যতা রয়েছে। অন্যদিকে আজারবাইজানে তুর্কি জাতিসত্তার লোকজন থাকায় আঙ্কারার সমর্থন পাচ্ছে আজারবাইজান।
আর্মেনিয়ান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আনা নাগদলিয়ান জানান, তুর্কি সামরিক বিশেষজ্ঞরা আজারবাইজানের পক্ষে লড়াই করছেন, তুরস্ক ড্রোন ও যুদ্ধবিমান সরবরাহ করছে।
তবে, আজারবাইজান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এদিকে, আজারবাইজানের ভূখণ্ডে আর্মেনীয় দখলদারিত্ব বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেব এরদোয়ান।
মঙ্গলবার তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আর্মেনিয়াকে অবশ্যই অবিলম্বে আজারবাইজানের ভূখণ্ড ছাড়তে হবে। এর মাধ্যমেই এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।’
কয়েক দশকের বিরোধে ১৯৮০’র দশকের শেষদিকে কারাবাখ অঞ্চলে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। ১৯৯১ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মুহূর্তে ওই সংঘর্ষ চূড়ান্ত আকার ধারণ করে। ১৯৯৪ সালে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার মানুষ সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন।
আলজাজিরা জানায়, এখনও পর্যন্ত কোনো দেশ কারাবাখের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়নি, এমনকি আর্মেনিয়াও নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এটিকে এখনো আজারবাইজানের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে।
Comments