ওয়াহিদা সুস্থ, আজ হাসপাতাল ছাড়ছেন

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের সাবেক ইউএনও ওয়াহিদা খানমের শারীরিক অবস্থা বর্তমানে বেশ ভালো। আজ বৃহস্পতিবার তাকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স ও হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হতে পারে। পরবর্তী পরিচর্যা-চিকিৎসার জন্য তাকে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) কিছুদিন থাকতে হবে।
Wahida Khanam
ইউএনও ওয়াহিদা খানম। ছবি: সংগৃহীত

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের সাবেক ইউএনও ওয়াহিদা খানমের শারীরিক অবস্থা বর্তমানে বেশ ভালো। আজ বৃহস্পতিবার তাকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স ও হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হতে পারে। পরবর্তী পরিচর্যা-চিকিৎসার জন্য তাকে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) কিছুদিন থাকতে হবে।

আজ সকালে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স ও হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল হক টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বিষয়টি জানান।

অধ্যাপক ডা. বদরুল হক বলেন, ‘বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা ভালো। মাথার আঘাতের ফলে যে গুরুতর অবস্থা তৈরি হয়েছিল, তা কাটিয়ে ওঠা গেছে। তার শরীরের ডান অংশ প্যারালাইসড হয়ে গিয়েছিল। এখন প্রায় সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে গেছে। ডান হাত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। নিজে হাত দিয়ে খেতে পারেন। কাজ করতে পারেন। ডান পা নাড়াচাড়া করতে পারছেন। তবে, পায়ের অবশ হয়ে যাওয়াটা এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। চিকিৎসা ভাষায়, পায়ের অনুভূতিটা একটু দেরিতেই ফিরে। এটা অস্বাভাবিক কিছু না। তার ক্ষেত্রে যা ঘটছে, এটাই স্বাভাবিক। যেহেতু পায়ে সমস্যা আছে, তাই বাথরুমে যাওয়ার জন্য একটু সহায়তা লাগে।’

‘নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে তার যে চিকিৎসা দরকার ছিল, সেটা সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন এখানকার চিকিৎসা আর তার জন্য দরকার নেই। সে কারণে আমরা আজ তাকে রিলিজ দিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছি। এখন তিনি যাবেন সিআরপিতে। সেখানে তার জন্য সিট বুক করা হয়েছে। সেখানে থেকে ফিজিও থেরাপিসহ প্রয়োজনীয় পরিচর্যা নিলে আশা করা যায় তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ফিরে আসতে পারবেন’, বলেন তিনি।

ওয়াহিদার ওপর হামলার পর তার অবস্থা অনেক আশঙ্কাজনক ছিল। শঙ্কা ছিল তার প্রাণহানি নিয়ে। এমন গুরুতর রোগীর সফল অপারেশন ও অপারেশন-পরবর্তী চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে প্রায় সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা হলো। নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের ক্ষেত্রে এটাই কি প্রথম নাকি এরকম রোগী আরও আসেন?, জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. বদরুল হক বলেন, ‘আঘাত তো বিভিন্ন রকমের হয়। তাকে হয়তো হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। কিন্তু, দুর্ঘটনা বা যেভাবেই হোক, এরকম বা এরচেয়েও গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত রোগী আমাদের এখানে প্রতিনিয়তই আসেন। আমাদের চিকিৎসকরা এই ধরনের অপারেশন করতে অভ্যস্ত। আমাদের চিকিৎসক বা সার্জনরা যে কতটা মানসম্পন্ন, সেটা হয়তো সেভাবে প্রচার পায় না। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে তারা কতটা দক্ষ ও মানস্পন্ন, তা আমরা জানি। নিজেরা নিজেদেরটা বলতে চাই না। কিন্তু, এরচেয়েও জটিল অপারেশন আমরা করি এবং অধিকাংশই ক্ষেত্রেই আমরা সাফল্যের সঙ্গে করি।’

ওয়াহিদার মতো গুরুতর রোগীদের ক্ষেত্রে সুস্থ হওয়া বা না হওয়াটা কিসের ওপর নির্ভর করে?, তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে মূল বিষয় দুইটি। বয়স ও সময়। যেহেতু ওয়াহিদার বয়স খুব বেশি না, তাই রিকভারি করতে তিনি শারীরিকভাবে অনেক সহায়তা করেছেন। আর ব্রেনের ভেতর ক্ষত তৈরি হলে সেটা যত দ্রুত পুনঃস্থাপন করা যায়, তত দ্রুত ব্রেন আবার স্বাভাবিক জায়গায় ফিরে আসে। যদি এক্ষেত্রে সময় বেশি ক্ষেপণ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে ব্রেন স্বাভাবিক জায়গায় আনাটা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। ওয়াহিদার ক্ষেত্রেও যদি আমরা আরও আগে তাকে পেতাম, তাহলে আরও কম জটিলতায় তার সমস্যার সমাধান করতে পারতাম। কিন্তু, তারপরেও আমরা তুলনামূলক কম সময়ের মধ্যেই তাকে পেয়েছিলাম। তাই চিকিৎসাটা দিতে পেরেছি।’

ওই হামলায় আহত হয়ে বর্তমানে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওয়াহিদা খানমের বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখও (৬৫)। তার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে অধ্যাপক ডা. বদরুল হক বলেন, ‘তার শারীরিক অবস্থাও ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে। যেহেতু তিনি বয়স্ক, তাই তার উন্নতিতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগছে। তার দুই হাত ও দুই পা-ই প্যারালাইসড ছিল, সেটার উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু, সময় লাগছে। তাকেও আজ আমরা হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়ার কথা ভাবছি। বাবা-মেয়ে একসঙ্গেই সিআরপিতে গিয়ে পরবর্তী চিকিৎসা নেবেন। তার ক্ষেত্রে হয়তো সময়টা বেশি লাগবে। কিন্তু, আমরা আশা করছি তিনিও সুস্থ হয়ে যাবেন।’

উল্লেখ্য, গত ২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ৩টার দিকে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলীর ওপর হামলা হয়। পরদিন সকালে তাদের প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে ঢাকায় নেওয়া এনে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আর ওমর আলী রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে গত ১২ সেপ্টেম্বর তাকেও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স ও হাসপাতালে আনা হয়েছে।

এর  মধ্যে, গত ১৬ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি অনুবিভাগ এক প্রজ্ঞাপন জারি করে ওয়াহিদা খানমকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (সিনিয়র সহকারী সচিব) হিসেবে বদলি করা হয়েছে। ওই প্রজ্ঞাপনে রংপুরের পীরগঞ্জে ইউএনও হিসেবে কর্মরত তার স্বামী মো. মেজবাউল হোসেনকেও ঢাকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব হিসেবে বদলি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন:

ঘোড়াঘাটের সেই ইউএনও ওয়াহিদাকে জনপ্রশাসনে বদলি

ইউএনও ওয়াহিদা শঙ্কামুক্ত: ডা. বদরুল হক

ইউএনও ওয়াহিদার উন্নতি ‘মিরাকল’, বাবার অবস্থা এখনো সন্তোষজনক নয়: ডা. বদরুল হক

ঢাকায় নেওয়া হয়েছে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের বাবা ওমর আলীকে

ইউএনও ওয়াহিদা হয়তো হামলার ঘটনা মনে করতে পারছেন: ডা. বদরুল হক

ওয়াহিদা আইসিইউতেই আছেন, শনিবার মাথার সেলাই কাটার সম্ভাবনা আছে: ডা. বদরুল হক

ঢাকায় নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের আইসিইউতে ঘোড়াঘাটের ইউএনও

‘ইউএনও ওয়াহিদার শরীরের ডান অংশ প্যারালাইজড হয়ে গেছে’

ঘোড়াঘাট ইউএনওর বাসভবনে হামলা

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago