নোয়াখালীতে গৃহবধূকে নির্যাতন ও ভিডিওধারণ, আটক ১
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে রাতের আঁধারে ঘরে ঢুকে এক গৃহবধূকে অপবাদ দিয়ে নির্যাতন করেছে একদল যুবক। সেসময় ঘটনার ভিডিওচিত্র ধারণ করেন তারা।
গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের বড় খালপাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে ওই গৃহবধূ ও তার পরিবারের সদস্যরা এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে আছেন।
ঘটনার এক মাস দুই দিন পর আজ রোববার দুপুরে ওই নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার ও তার সেকেন্ড ইন কমান্ড বাদল এবং কর্মী রহিম, সুমনসহ ৫-৬ জনের বিরুদ্ধে এ নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠেছে। আজ সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আবদুর রহিম (২২) নামের একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একলাশপুর ইউনিয়নের অনন্তপুর ও জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, ওই গৃহবধূর বিয়ে হয় বছর তিনেক আগে। স্বামী তাকে রেখে অন্যত্র দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দীর্ঘদিন তার সঙ্গে স্বামীর কোনো যোগাযোগ ছিল না। গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে স্বামী ওই গৃহবধূর ঘরে ঢুকেন। স্থানীয় মাদক চোরাকারবারি বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার এ ঘটনা দেখে তার লোকজন নিয়ে রাত ১০টার দিকে ওই ঘরে প্রবেশ করে গৃহবধূকে অপবাদ দিয়ে তাকে মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে ওই গৃহবধূকে পিটিয়ে বিবস্ত্র করে তার ভিডিওধারণ করেন।
ওই ভিডিও ফুটেজ দেখে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনার ধিক্কার জানিয়ে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
ওই গৃহবধূর বাড়িতে গিয়ে তার বসতঘরে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। তার কোনো স্বজনেরও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইদুর রহমান দিপু বলেন, ‘মাদক চোরাকারবারি দেলোয়ার বাহিনী এই ঘটনা ঘটিয়েছে।’
তিনি নির্যাতনকারী দেলোয়ার ও তার বাহিনীর লোকজনের গ্রেপ্তার দাবি করে বলেন, ‘কোনো সভ্যসমাজে এরকম ঘটনা ঘটতে পারে না।’
স্থানীয় একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন সোহাগ বলেন, ‘ঘটনার পর ওই গৃহবধূ আমার কাছে এসেছিলেন। তবে কারা তাকে নির্যাতন করেছেন, তা তিনি বলেননি। ঘটনার পর থেকে ওই গৃহবধূ ও তার পরিবার বাড়িতে বসবাস করে না।’
বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ চৌধুরী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও দেখে পুলিশ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অভিযান চালিয়ে সন্ধ্যায় নির্যাতনকারী দলের এক সদস্যকে আটক করেছে। তার নাম আবদুর রহিম। সে জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের শেখ আহমেদ দুলালের ছেলে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আবদুর রহিম ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।’
নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে একজনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের আটকের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা যতোই ক্ষমতাধর হোক না কেন, তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হবে।’
Comments