যেভাবে প্রকাশ্যে আসে সাভারের কিশোর গ্যাংয়ের সংঘবদ্ধ ধর্ষণ

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

গত ৩০ আগস্ট বিকেল ৩টার দিকে প্রতিবেশী ভাতিজি, ভাতিজির এক বান্ধবী এবং নিজের বন্ধুকে নিয়ে আশুলিয়ার উত্তর পবনারটেক এলাকায় ঘুরতে যান স্থানীয় পোশাক কারখানার ২০ বছর বয়সী শ্রমিক সাজু (ছদ্ম নাম)। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে নির্জন রাস্তায় তাদের চার জনকে আটক করে ১০ থেকে ১২ জন কিশোর গ্যাং সদস্য, যাদের বয়স ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।

কিশোররা প্রথমে তাদের পরিচয় জানতে চায়। এক পর্যায়ে সাজু ও তার বন্ধুকে মারধর শুরু করে কিশোররা। এরপর দুই কিশোর তাদের আটকে রাখে এবং বাকিরা দুই কিশোরীকে মারতে মারতে পৃথক নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। তখন ভয়ে চিৎকার দেওয়ার অবস্থা ছিল না তাদের।

বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কিশোরীদের ছেড়ে দেয় তারা। বিষয়টি কাউকে জানালে এর চেয়ে খারাপ কিছু হবে- এমন ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়।

বাসায় ফেরার পর কিশোরীদের কাছে সাজু জানতে চায়, তাদের সঙ্গে খারাপ কিছু হয়েছে কিনা। তখন তারা জানায়, তাদের শুধু মারধর করা হয়েছে। সাজু বিষয়টি নিয়ে অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইলেও গ্রাম থেকে চাকরির জন্য আসা কিশোরীরা লোকলজ্জা ও কিশোর গ্যাংয়ের ভয়ে চুপ করে যায়।

কিন্তু কিশোর গ্যাং সদস্যদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে গত চার দিন আগে সেই দিন (৩০ আগস্ট) একজনকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ভিডিও ফুটেজ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এরপর সেই কিশোরী চাকরি ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যায়।

পুলিশের বক্তব্য

বিষয়টি পুলিশের নজরে এলে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাং দলনেতা সারুখসহ চার কিশোরকে আটক করে আশুলিয়া থানা পুলিশ।

বিষয়টি নিয়ে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান গতকাল বুধবার বিকেলে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ঘটনাটি পুলিশের নজরে আসার পর কোনো মামলা বা অভিযোগ দাখিল করা না হলেও পুলিশ নিজ উদ্যোগে অভিযানে নামে। এরপর ওই কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান সারুখ এবং সদস্য আলামিন, জাকির ও রাকিবকে আটক করা হয়। পরে ভুক্তভোগীদের খোঁজে নামে পুলিশ।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমে আমরা ধারনা করেছিলাম দুই কিশোরীকেই সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু এক কিশোরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি দাবি করেছেন তাকে ধর্ষণ করা হয়নি কিন্তু মারধর করা হয়েছিল।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘চাকরির জন্য লেখাপড়ার বয়সে কাজে আসা গ্রামের মেয়ে দুটি কতটা অসহায় এটাতো স্পষ্ট। সেদিন অবশ্যই জোরপূর্বক মেয়ে দুটির সঙ্গে খারাপ কিছু হয়েছে, যেটা ভয়ে হোক অথবা লোকলজ্জা থেকে হোক মেয়ে দুটি চেপে যেতে চেয়েছে। ভিডিওটি প্রকাশ না হলে হয়তো বিষয়টি আর সামনেই আসতো না।’

সারুখের নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের কিশোর গ্যাং

গতকাল বুধবার দিনব্যাপী আশুলিয়ার পবনারটেক ও ভাদাইল এলাকায় ঘুরে জানা গেছে, সারুখ ভাদাইল এলাকার ব্যবসায়ী আকরাম হোসেনের ছোট ছেলে। স্থানীয় একটি স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র সে। সারুখের নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জন বখাটে কিশোর এলাকায় মহড়া দিয়ে চলতো। এলাকায় নিজেদের প্রিন্স গ্রুপ/গ্যাং বলে পরিচয় দিত তারা। এলাকায় অপরিচিত সমবয়সী কাউকে দেখলে উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে তাদের মারধর করতো। প্রকাশ্যে ধূমপানও করতো এই গ্যাং সদস্যরা।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন দোকানদার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সারুখের বাবা আকরাম এলাকায় ব্যবসায়ী হিসেবেই পরিচিত। অনেক ছোট থেকেই সারুখ বখাটে। ২০ থেকে ২৫ জন কিশোরের নেতৃত্ব দেয় সে। পরিবারের দায়িত্বহীনতাই এর জন্য দায়ী।

সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাটি যে স্থানে ঘটেছে ওই এলাকার কৃষক মোনতাজ উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এলাকাটি নির্জন হওয়ায় দলে দলে উঠতি বয়সের ছেলেরা ওই এলাকায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আড্ডা দেয়। তাদের প্রকাশ্যে ধূমপান ও গাঁজা সেবনও করতে দেখা যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম প্রথম আমি তাদের শাসন করতাম। কিন্তু কিশোরদের খারাপ আচরণের কারণে বছর খানেক যাবত তাদের এড়িয়ে চলি।’

সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে চান আকরাম

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী জানান, সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ভিডিওটি এলাকায় প্রকাশ পাওয়ার পর সারুখের বাবা আকরাম কয়েকজন অভিযুক্ত কিশোর গ্যাং সদস্যের পরিবারের কাছ থেকে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার কথা বলে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন। কিশোর গ্যাং সদস্যরা আটকের পর বিষয়টি এলাকায় প্রকাশ পায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি কামরুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে আসামিদের আটক করতে আকরাম আমাদের সাহায্য করেছেন।’

আরও পড়ুন: সাভারে ২ বান্ধবীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর গ্যাং সদস্য আটক

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago