নোয়াখালীর সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলা পিবিআইতে হস্তান্তর
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ঘরে ঢুকে নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা অধিকতর তদন্তের স্বার্থে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে মামলাটি পিবিআই নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন আজ শুক্রবার বিষয়টি দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন।
অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে বসতঘরের দরজা ভেঙে স্থানীয় দেলোয়ার বাহিনীর লোকজন ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করে। এসময় তারা ওই নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ এবং বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিওধারণ করে। পরে ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ওই নারীকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিল দেলোয়ার বাহিনীর লোকজন। এতে ভুক্তভোগী নারী রাজি না হওয়ায় তাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিতে থাকে। গত ৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে ওই নারীকে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় দেলোয়ার বাহিনীর লোকজন। এ ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে।
এ ঘটনায় ওই নারী বাদী হয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন এবং পর্নোগ্রাফি আইনে দুটি মামলা দায়ের করেন। এতে দেলোয়ার বাহিনীর বাদলকে প্রধান আসামি করে ৯ জনের নাম উল্লেখসহ ৭-৮ জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। এর একদিন পর ঢাকা থেকে মানবাধিকার কমিশনের কর্মকর্তারা ওই নারীর সঙ্গে দেখা করার পর ৬ সেপ্টেম্বর রাতে তিনি দেলোয়ার ও আবুল কালামের বিরুদ্ধে আরও একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় বেগমগঞ্জ মডেল থানার এসআই মোস্তাক আহমেদ ও হাবিবুর রহমানকে।
মামলা দায়েরের পর পুলিশ ও র্যাব ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এদের মধ্যে দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারকে (২৬) গত রোববার গভীর রাতে ঢাকা - চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল এলাকার চেকপোস্ট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে গুলিসহ একটি পিস্তলও উদ্ধার করা হয়। তার দেওয়া তথ্য মতে সোমবার ভোরে ঢাকার কামরাঙ্গীর চর এলাকা থেকে নারী নির্যাতন মামলার প্রধান আসামি বাদলকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার তিন নম্বর আসামি আবুল কালামকে র্যাব মঙ্গলবার রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নোয়াখালী কার্যালয়ের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সি এ চাঞ্চল্যকর মামলাটি তদন্তভার পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘নারীকে নির্যাতন ও ধর্ষণ ঘটনায় দায়ের করা তিনটি মামলার মধ্যে পর্নোগ্রাফি ও নারী-শিশু নির্যাতন আইনে দায়ের করা মামলা দুটির তদন্তভার পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে বৃহস্পতিবার রাতে পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলা দুটির মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে পুলিশ পরিদর্শক মামুনকে এবং পর্নোগ্রাফি আইনে দায়ের করা মামলাটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুলিশ পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমানকে। পিবিআই আজ থেকে মামলার তদন্ত কাজ শুরু করেছে। সকালে পিবিআইয়ের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নির্যাতিত নারী, তার পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলেছে। খুব শীগগির এ মামলার বাকি আসামিরা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হবে বলে আশা করছি।’
Comments