রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও সহিংসতার বিচার দাবি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের
কক্সবাজারে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত ৬ অক্টোবর রোহিঙ্গাদের দুই গ্রুপের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের পর ৭ অক্টোবর পুড়িয়ে দেওয়া হয় কয়েক ডজন ঘর।
এরপর, অন্তত দুই হাজার রোহিঙ্গা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে নিজেদের ক্যাম্প ছেড়ে অন্য ক্যাম্পে চলে যায়। অবৈধ মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই গ্রুপের ওই সংঘর্ষে গোলাগুলিতে নিহত হন চার জন রোহিঙ্গা, আহত হন অনেকেই।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আজ শুক্রবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়ার ক্যাম্পেইনার সাদ হাম্মাদি বলেন, ‘ক্যাম্পের ভেতরে ভয়াবহ অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। এ সহিংসতা রোধে ও রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে, ভবিষ্যতে সেখানে আরও রক্তপাতের সম্ভাবনা আছে।’
‘এসবের মধ্যে ক্যাম্পের রোহিঙ্গারাই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের সুরক্ষায় বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই ক্যাম্পের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। ওই ঘটনায় দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে সহিংসতার বিষয়ে এখনই নিরপেক্ষ তদন্ত শুরু করতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, অবৈধ মাদক চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত একটি গ্রুপ ও সশস্ত্র আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি’র (এআরএসএ) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি গ্রুপের মধ্যে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। ক্যাম্প ও মাদক চোরাকারবারির আধিপত্য নিয়ে দুই গ্রুপের আলোচনা ভেস্তে যাওয়ায় তারা সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে বলে জানা যায়।
উভয় গ্রুপই সংঘর্ষে স্থানীয়ভাবে তৈরি বন্দুক ও লোহার রড ব্যবহার করে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে প্রকাশ পায়।
৬ অক্টোবর ক্যাম্পে কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করলেও, সহিংসতা অব্যাহত থাকে। গত মাসে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী একেএম মোজাম্মেল হক ক্যাম্পের ভেতরে নজরদারি বাড়াতে ওয়াচ টাওয়ার ও ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করার কথা বলেছিলেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে সাক্ষাতকার দেওয়া রোহিঙ্গাদের মতে, মিয়ানমারে তৈরি ইয়াবা ট্যাবলেট বাংলাদেশে অবৈধভাবে পাচারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এ সহিংসতা শুরু হয়। এ ধরণের চোরাকারবারির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের চলমান অভিযানের ফলে এ নিয়ে ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা আতঙ্কিত থাকেন। অভিযানে বিচার বহির্ভূত হত্যার নজির থাকায় এবং চোরাকারবারির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সহিংসতা হওয়ায় ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদেরকে আরও ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হচ্ছে।
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবৈধ মাদক চোরাকারবারির বিরুদ্ধে অভিযানে কক্সবাজারে শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন।
সাদ হাম্মাদি বলেন, ‘শরণার্থীদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়, এমন কোনো পদক্ষেপ কর্তৃপক্ষের নেওয়া উচিত নয়। অপরাধী চক্রের সদস্যরা এসব সহিংসতা চালাচ্ছে। এসব অপরাধের জন্য তাদের সুষ্ঠু বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
রোহিঙ্গারা আশঙ্কা করছেন যে, চলমান সহিংসতার অজুহাত দিয়ে বাংলাদেশ সরকার তাদেরকে ভাসানচরে পাঠিয়ে দিতে পারে। যদিও, নিরাপদ আবাসন হিসেবে ভাসানচরের বিষয়ে জাতিসংঘের মূল্যায়ন এখনো শেষ হয়নি।
রোহিঙ্গারা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে জানিয়েছে যে, নিরাপত্তা ও বিচ্ছিন্নতার ভয়ে তারা ওই দ্বীপে যেতে আগ্রহী নয়।
সাদ হাম্মাদি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করলেও, তাদের বর্তমান নিরাপত্তাহীনতার অবসান হবে না। এটি টেকসই সমাধান আনবে না। এর পরিবর্তে কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের সঙ্গে থেকে, তাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো জানতে হবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তাদের মতামত নেওয়ার পাশাপাশি এ প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সেপ্টেম্বর মাসে ‘লেট আস স্পিক ফর আওয়ার রাইটস’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে সর্বসাধারণের জন্য স্বচ্ছ ও অধিকারের মর্যাদা-বোধসম্পন্ন একটি নীতিমালা তৈরির জন্য বাংলাদেশ সরকারসহ স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছিল।
Comments