সিলেটে পুলিশি নির্যাতনে যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ

সিলেট নগরীর বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। আজ রোববার ভোরে তার মৃত্যু হয়। মৃত রায়হান আহমেদ (৩৩) সিলেটের আখালিয়া এলাকার নেহারিপাড়ার বাসিন্দা।
রোববার সকালে সিলেটের কিছু স্থানীয় গণমাধ্যমে দেওয়া বিবৃতিতে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, রায়হান নগরীর কাস্টঘর এলাকা ছিনতাই করতে গিয়ে স্থানীয়দের গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে।
দুপুর ৩টার দিকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোতির্ময় সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, কাস্টঘর এলাকায় গুরুতর আহত ওই যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনি মারা যান। কে বা কারা তাকে মারধর করেছে তা জানা যায়নি।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
নিহতের খালাতো ভাই তানভীর আহমদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘নিহত রায়হান সিলেটের একজন মেডিসিন ডাক্তারের চেম্বারে কম্পাউন্ডার হিসেবে কাজ করতেন। শনিবার রাত ১০টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর রাতে আর বাসায় ফিরে আসেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাত ৪টা ২৩ মিনিটের দিকে একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে রায়হানের মায়ের কাছে কল আসে। ওই কলে রায়হান তার মাকে জানান পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে এসেছে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে। চার হাজার টাকা দিলে ছেড়ে দিবে।’
তানভীর বলেন, ‘এ কথা শুনে রায়হানের চাচা, যিনি তার সৎ বাবাও, দ্রুত চার হাজার টাকা নিয়ে ফজরের একটু আগে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পৌঁছান। সেখানে সাদা পোশাকে থাকা একজন পুলিশ সদস্য বলেন, আসামি মোটরসাইকেল অ্যাকসিডেন্ট করার পর তারা নিয়ে এসেছেন এবং এখন ঘুমাচ্ছেন। সকাল ১০টার সময় ১০ হাজার টাকা নিয়ে আসলে মামলা না দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে। পরে সকাল ১০টার সময় তিনি টাকা নিয়ে আবার ফাঁড়িতে গেলে তাকে বলা হয় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে, আসামি গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় সেখানে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। দ্রুত হাসপাতালে যাওয়ার পর সেখানে পুলিশ সদস্যরা জানান যে রায়হান ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা পড়ে গণপিটুনিতে মারা গেছেন।’
এ ব্যাপারে রায়হানের সৎ বাবা হাবিব উল্লাহর সঙ্গে আলাপকালে তিনিও তানভীরের বর্ণনা সঠিক জানিয়ে বলেন, ‘বন্দরবাজার ফাঁড়িতেই টাকার জন্য নির্যাতন করে তাকে হত্যা করা হয়েছে।’
রাতে আসা ওই নাম্বারে কল দিলে রিং হলেও ওপাশ থেকে কেউ কল রিসিভ করেননি। এ ছাড়াও, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেজিস্টার অনুযায়ী নিহত রায়হান আহমেদকে সকাল ৭টায় হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ।
এদিকে কাস্টঘর এলাকায় ভোরে কোন গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা নিশ্চিত করতে পারেননি।
এলাকার বাসিন্দা ও আইনজীবী সুমিত শ্যাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অনেক সকাল পর্যন্ত এলাকায় গণপিটুনির কোন ঘটনা ঘটেছে বলে জানিনি। পরে ১০টার দিকে শুনলাম এলাকায় পুলিশ এসেছে এবং বলছে যে ভোরে গণপিটুনিতে এক যুবককে হত্যা করা হয়েছে।’
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এলাকার নিরাপত্তায় সব জায়গাতেই সিসিটিভি লাগানো আছে। ভোর থেকে এলাকার কেউ গণপিটুনির কোনো বিষয় নিশ্চিত করতে পারেনি। তাই আমরা এখন সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বোঝার চেষ্টা করছি ভোররাতে বা ভোরে কিছু ঘটেছিল কী না’।
রায়হান আহমদের মৃত্যুতে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন নেহারিপাড়া ও আখালিয়া এলাকার বাসিন্দারা। আজ বিকেলে তারা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের আখালিয়া এলাকায় ঘণ্টাখানেক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
এ ব্যাপারে জানতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জ্যোতির্ময় সরকারের সঙ্গে রাত ৮টার সময় যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু পুলিশি নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ করছেন তার পরিবার, তাই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব নিয়ে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনারের (উত্তর) নেতৃত্বে ইতোমধ্যে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। দ্রুত সঠিত তথ্য জানা যাবে’।
রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কোন মামলা দায়ের করেননি নিহতের পরিবারের সদস্যরা। তবে, আজ রাতেই মামলা দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছেন নিহতের স্বজনেরা।
Comments