রায়হান হত্যা: সিসি ক্যামেরার ফুটেজে গণপিটুনির প্রমাণ নেই

গত রোববার ভোরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গুরুতর আহত অবস্থায় নিয়ে আসার পর মৃত্যুবরণ করেন নগরীর আখালিয়া নেহারিপাড়া এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমেদ। প্রাথমিক অবস্থায় স্থানীয় কিছু গণমাধ্যমকে নগরীর কাস্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে ছিনতাইকারীর মৃত্যু হিসেবে ব্যাখ্যা করে বক্তব্য দেয় পুলিশ। যদিও পরে এই বক্তব্য থেকে সরে আসে এবং মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করে দেখা হচ্ছে বলে জানানো হয়।
স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

গত রোববার ভোরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গুরুতর আহত অবস্থায় নিয়ে আসার পর মৃত্যুবরণ করেন নগরীর আখালিয়া নেহারিপাড়া এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমেদ। প্রাথমিক অবস্থায় স্থানীয় কিছু গণমাধ্যমকে নগরীর কাস্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে ছিনতাইকারীর মৃত্যু হিসেবে ব্যাখ্যা করে বক্তব্য দেয় পুলিশ। যদিও পরে এই বক্তব্য থেকে সরে আসে এবং মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করে দেখা হচ্ছে বলে জানানো হয়।

সিলেট নগরীর বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ ওঠার আগেই এই মৃত্যুকে গণপিটুনির ঘটনা বলা হলেও সেদিন সন্ধ্যায় কাস্টঘর এলাকার স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ভোররাতে কোনো গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়নি। এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করেও পাওয়া যায়নি এমন কোনো ঘটনার চিত্র।

এলাকার বাসিন্দা আইনজীবী সুমিত শ্যাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সকাল পর্যন্ত এরকম কিছু ঘটেছে বলে জানিনি। পরে শুনলাম পুলিশ এসে স্থানীয়দের বলছে এরকম ঘটনা নাকি ঘটেছে ভোরে।’

স্থানীয় আরও কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, সকাল ১০টার দিকে পুলিশ এসে জানানোর পরই এলাকার মানুষ জেনেছে যে ভোররাতে গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে।

এর মধ্যে নিহতের পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয় পুলিশ ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে গিয়ে টাকার জন্য নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে রায়হানকে।

বিষয়টি জানাজানির পর সন্ধ্যা থেকেই কাস্টঘর এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ অনুসন্ধান শুরু করেন স্থানীয় কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিম।

এলাকার আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখার উদ্দেশ্যে লাগানো এসব সিসিটিভি ক্যামেরার রাত ১২টা থেকে পরদিন ভোর ৭টা পর্যন্ত সময়ের ফুটেজ পরীক্ষা করে কাস্টঘরে কোনো গণপিটুনির ঘটনার চিত্র পাওয়া যায়নি বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিম।

এদিকে এ ঘটনায় পুলিশ ফাঁড়িতে মৃত্যুর বিষয় উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

গতকাল দিনগত রাত আড়াইটার দিকে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন মৃত রায়হান আহমেদের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি।

দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জ্যোতির্ময় সরকার।

মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, প্রতিদিনের মতো সেই বিকেলে তার স্বামী রায়হান আহমেদ বাসা থেকে কর্মস্থলে যান এবং সেই রাত ৪টা ৩৩ মিনিটে রায়হানের মায়ের নম্বরে অজ্ঞাত নম্বর থেকে কল করে কথা বলেন রায়হান। রায়হান ওই কলে জানান যে তাকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে আটকে রাখা হয়েছে এবং বাঁচাতে দ্রুত টাকা নিয়ে ফাঁড়িতে যাওয়ার জন্য। ভোর সাড়ে ৫টায় নিহতের চাচা টাকা নিয়ে ফাঁড়িতে গেলে সকাল ১০টায় ১০ হাজার টাকা নিয়ে যেতে বলেন এক পুলিশ সদস্য এবং ১০টায় আবার গেলে হাসপাতালে যেতে বলা হয়।

এজাহারের বর্ণনামতে, তখন রায়হানের চাচা ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারেন রায়হানকে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে তিনি মারা যান।

সে সময় তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনকে খবর দিলে তারা গিয়ে ওসমানীর মর্গে রায়হানের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ দেখতে পান।

মামলায় তিনি আরও বলেন, তার স্বামীকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে পুলিশি হেফাজতে রাতভর নির্যাতন করার ফলে তার মৃত্যু হয়েছে।

এ বিষয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জ্যোতির্ময় সরকার বলেন, ‘বিষয়টি অনুসন্ধান চলছে। কী ঘটেছিল, দ্রুতই এর বিস্তারিত জানা যাবে।’

আরও পড়ুন:

পুলিশের নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ: অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

6h ago