সারা দেশের চা-বাগানে মজুরি নিয়ে ক্ষোভ

শারদীয় দুর্গাপূজার আগে দৈনিক মজুরি বৃদ্ধি ও উৎসব বোনাসসহ বিভিন্ন দাবিতে অষ্টম দিনের মতো আজও বাংলাদেশের সব বাগানের চা-শ্রমিকরা দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেছেন।
দৈনিক মজুরি বৃদ্ধি ও উৎসব বোনাসসহ বিভিন্ন দাবিতে চা-শ্রমিকদের কর্মসূচি। ছবি: স্টার

শারদীয় দুর্গাপূজার আগে দৈনিক মজুরি বৃদ্ধি ও উৎসব বোনাসসহ বিভিন্ন দাবিতে অষ্টম দিনের মতো আজও বাংলাদেশের সব বাগানের চা-শ্রমিকরা দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেছেন।

আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে বিভিন্ন চা-বাগানের শ্রমিকরা তাদের নিজ নিজ বাগানে অবস্থান করে বিক্ষোভ মিছিল করেন। সেই সঙ্গে তারা তাদের দাবি আদায়ে সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কাজে যোগ না দিয়ে কর্মবিরতি পালন করেন।

সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের (শেড) তথ্য অনুসারে, ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন (বিসিএসইউ) এবং বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) আলোচনার মাধ্যমে চা-শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করে। স্বাধীন বাংলাদেশে চা-শ্রমিকদের জন্য প্রথম নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠিত হয় ১৯৮২ সালে, যা বিসিএসইউ এবং বিটিএ কর্তৃক নির্ধারিত মজুরি অনুসারে মজুরি নির্ধারণ করে। ২০০৯ সালে গঠিত দ্বিতীয় নিম্নতম মজুরি বোর্ড শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০০৮ সালের ৩২ দশমিক পাঁচ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৮ দশমিক ৫০ টাকা নির্ধারণ করে।

সরকারি মধ্যস্থতা এবং বিসিএসইউ ও বিটিএর মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে নগদ মজুরি বাড়িয়ে ২০১৩ সালের জুন থেকে করা হয় ৬৯ টাকা। ২০১৫ সালের জুন থেকে এ শ্রেণির বাগানের জন্য ৮৫ টাকা, বি শ্রেণির বাগানের জন্য ৮৩ টাকা এবং সি শ্রেণির বাগানের মজুরি নির্ধারণ করা হয় ৮২ টাকা।

বিসিএসইউ ও বিটিএর মধ্যে সর্বশেষ চুক্তি সই হয় ২০১৮ সালের ২০ আগস্ট (যা ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর) এবং শ্রমিকদের দৈনিক ন্যূনতম মজুরি ঠিক হয় এ শ্রেণির বাগানের জন্য ১০২ টাকা, বি শ্রেণির বাগানের জন্য ১০০ টাকা এবং সি শ্রেণির বাগানের জন্য ৯৯ টাকা।

সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগর চা বাগানের চা শ্রমিক সুলেখা বাউরী বলেন, ‘আমাদের পাঁচ জনের সংসার। ১০০ টাকায় মাত্র দুই কেজি চাল পাওয়া যায়। অথচ দৈনিক মজুরি আমাদের ১০২ টাকা। বড় কষ্ট করে জীবনযাপন করছি। বেশিরভাগ সময় উপোষ থাকতে হয়।’

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, ‘চা-বাগান মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। মালিকপক্ষ ১১২ টাকা থেকে ১১৫ টাকা পর্যন্ত দিতে রাজি হয়েছেন। আমাদের দাবি ২৬০ টাকা।’

সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের (শেড)এর পরিচালক ড. ফিলিপ গাইন বলেন, ‘চা-বাগানের মালিক ও কর্তৃপক্ষ উভয়েরই চা-শ্রমিকদের চাহিদা পূরণের দায়িত্ব রয়েছে। তাদেরকে মর্যাদা দিয়ে, সুস্থ ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ দিয়ে এবং তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে সব পক্ষের লাভবান হবার দ্বার উন্মোচন করা উচিত।’

এই গবেষক আরও বলেন, ‘শ্রম আইন অনুসারে লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশ শ্রমিকদের দেওয়ার বিষয়ে সবাই নীরব। তারা শ্রমিকদেরকে আইন মোতাবেক কখনোই গ্র্যাচুইটিও দেননি। এজন্য এখনই সময় সবকিছু করার।’

ফিনলে টি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তাহসিন আহমেদ চৌধুরীকে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কল দিলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে কথা বলবেন জিএম শিবলি সাহেব। তিনি আমাদের মুখপাত্র।’

চা-বাগান মালিকদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান এবং ফিনলে টি কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) গোলাম মোহাম্মদ শিবলি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চা-শ্রমিকদের বেতন নির্ধারণের জন্য সরকার একটি মজুরি বোর্ড গঠন করেছে। বোর্ড গত ডিসেম্বরের পর থেকে পাঁচটি বৈঠকে বসেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ১১০ টাকা পর্যন্ত দিতে চাই। তবে চা-শ্রমিক নেতারা ১২০ টাকা দাবি করছেন। তা ছাড়া করোনাকালে অন্যদের মতো চা শিল্পেও অনেক ক্ষতি হয়েছে। গত বছরের উৎপাদিত অনেক চা পাতা অবিক্রীত রয়ে গেছে। যেহেতু মজুরি বোর্ড কাজ করছে, সেহেতু হঠাৎ করে শ্রমিকদের কর্মবিরতি কর্মসূচি অযৌক্তিক।

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

1h ago