নওগাঁর ‘পাখা গ্রাম’ ভালাইন

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভালাইন গ্রামটি এখন পাখা গ্রাম নামে পরিচিত। এ গ্রামের অন্তত দুই শতাধিক পরিবার ঐতিহ্যবাহী হাতপাখা তৈরিতে যুক্ত। গত রোববার ভালাইন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামের বিভিন্ন বয়সী মানুষ পাখা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। একজন দিনে এক শ থেকে ১২০টি পর্যন্ত হাত পাখা তৈরি করেন।
Valine_Fan_14Oct20.jpg
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভালাইন গ্রামটি এখন পাখা গ্রাম নামে পরিচিত। এ গ্রামের অন্তত দুই শতাধিক পরিবার ঐতিহ্যবাহী হাতপাখা তৈরিতে যুক্ত। ছবি: স্টার

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভালাইন গ্রামটি এখন পাখা গ্রাম নামে পরিচিত। এ গ্রামের অন্তত দুই শতাধিক পরিবার ঐতিহ্যবাহী হাতপাখা তৈরিতে যুক্ত। গত রোববার ভালাইন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামের বিভিন্ন বয়সী মানুষ পাখা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। একজন দিনে এক শ থেকে ১২০টি পর্যন্ত হাত পাখা তৈরি করেন।

গত ২০ বছর ধরে হাত পাখার ব্যবসা করছেন আনোয়ার হোসেন। তার স্ত্রী শেফালী বেগম আরও তিন জন নারী শ্রমিককে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতেই হাত পাখা তৈরি করেন। প্রথমে বাঁশ চিকন করে কেটে কাঠি তৈরি করা হয়। এরপর পাখার দুপাশে সেলাই করে সেই কাঠি লাগানো হয়। শেষ পর্যায়ে পাখায় নকশা আঁকা হয়।

আনোয়ার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, মাসে ছয় থেকে সাত হাজার পিস পাখা তৈরি করতে পারেন তারা।

গ্রামের আরেক ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম বলেন, ২৫ বছর আগে তিনি নওগাঁ জেলার বিভিন্ন হাটে ঘুরে ঘুরে পাখা বিক্রি করতেন। এটিই তাদের পৈত্রিক ব্যবসা। তার বাবা আব্দুর রহিমের বয়স এখন ৬৫ বছর। তিনি এখনো এই পেশায় যুক্ত আছেন।

শুরুতে হাটে হাটে পাখা বিক্রি করলেও পরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন পাখা উৎপাদন করবেন। এখন তার বাড়িতে পাঁচ জন নারী শ্রমিক পাখা তৈরির কাজ করেন। সাইদুল নিজেই তাল পাতা কেটে পাখার আকৃতি দেন। এরপর নারী শ্রমিকরা পরের দুই ধাপের কাজ করেন। প্রতি মাসে সাইদুর ছয় থেকে আট হাজারের বেশি পাখা তৈরি করেন। পাখা বিক্রি করেই তিনি ছয় শতাংশ জমি কিনে মাটির দোতলা বাড়ি বানিয়েছেন। কিনেছেন মোটরসাইকেল।

তিনি বলেন, পাখা ব্যবসা করে এখন অনেক ভালো আছি। এই ব্যবসা করেই জমি কিনে বাড়ি বানিয়েছি।

ব্যবসায়ীরা জানান, জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঁচ টাকা দরে তাল পাতা সংগ্রহ করা হয়। বাঁশ, সুতা, রঙ ও সেলাইয়ের পারিশ্রমিক বাবদ আরও তিন টাকা খরচ হয়। একটি পাখা বিক্রি হয় ১০ থেকে ১২ টাকায়। বড় হাত পাখা ছাড়াও সহজে বহনযোগ্য ভাঁজ করা পাখাও তৈরি করেন তারা।

Valine_Fan1_14Oct20.jpg
গ্রামবাসী মনে করেন, সরকার সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করে দিলে তারা অনেক বেশি লাভবান হতে পারেন। ছবি: স্টার

এক সময় নওগাঁ শহর ও নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে এই পাখা বিক্রি হতো। এখন ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, নরসিংদী, পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা যায় ভালাইন গ্রামের হাত পাখা। সারা বছর পাখা বানানো হলেও বিক্রি হয় মূলত গ্রীষ্মকালে। অভাবের কারণে অনেকে আগেই পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন। তবে পাইকারি ব্যবসায়ীও বেশি দামে বিক্রির আশায় গ্রীষ্মের অপেক্ষায় থাকেন।

গ্রামবাসী মনে করেন, সরকার সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করে দিলে তারা অনেক বেশি লাভবান হতে পারেন।

উত্তরগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবিদ হোসেন সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এটি ইউনিয়নের গর্বের বিষয়, বাইরের মানুষ ভালাইন গ্রামকে আজ পাখা গ্রাম হিসেবে চেনে। সরকার সুদৃষ্টি দিলে এই শিল্প বহুদিন টিকে থাকবে।’

Comments

The Daily Star  | English

World Bank commits over $2b to support reform in Bangladesh

The country director informed that the WB can mobilise about $2 billion this fiscal year to support critical reforms, flood response, better air quality, and health

35m ago