মৃত্যুদণ্ডের বিধান ধর্ষণ প্রতিরোধে সক্ষম?
শাস্তির পরিমাণ বাড়িয়ে ধর্ষণ সম্পর্কিত বর্তমান আইন সংশোধনের প্রস্তাব করেছে সরকার। সারাদেশে ধর্ষণ এবং যৌন সহিংসতা মহামারি রূপ ধারণ করেছে। নোয়াখালী এবং সিলেটের সাম্প্রতিক ভয়াবহ সংঘবদ্ধ ধর্ষণ অল্প সময়ের মধ্যে অগণিত মানুষের মনে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। মানুষ বিক্ষোভ দেখাতে রাস্তায় নেমে এসেছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) মতে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেশে অন্তত ৯৭৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২০৮ জন।
জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার ধর্ষণের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের ঘোষণা দিয়েছে। তবে এটি অবশ্যই বলতেই হয় যে, কেবল বিদ্যমান আইন পরিবর্তন বা নতুন আইন করলেই দেশের চলমান ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বন্ধ হয়ে যাবে না। এর পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। সেই কারণগুলো আমলে না নিলে ধর্ষণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। এদিকে সবার লক্ষ্য রাখতে হবে। আইনি ও পদ্ধতিগতভাবে লক্ষ্য রাখার পাশাপাশি সামাজিকভাবেও এর দিকে বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে।
প্রথমে আইনগত দিক। ধর্ষণের সংজ্ঞা পরিবর্তনের দাবিতে সবাই একমত। বাংলাদেশ পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৩৭৫ ধারা অনেক পুরনো এবং সেখানে থাকা ব্যাখ্যা এর চেয়েও বেশি পুরনো। আমরা মনে করি, ধর্ষণের চেষ্টাও ধর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। এর বাইরে ধর্ষণের শিকার ও ধর্ষণ ঘটনার সাক্ষীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ধর্ষণ প্রমাণের ক্ষেত্রে আইন ও তদন্ত সহজ করা প্রয়োজন। কারণ, এসব প্রক্রিয়ায় জটিলতা এবং দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ভুক্তভোগীকে আরও বেশি ভুগতে হয় এবং মানসিক আঘাত সহ্য করতে হয়।
দ্বিতীয় দিকটি হলো পদ্ধতিগত। আমাদের নিজের কাছে প্রশ্ন করা উচিত, ২০০১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ধর্ষণের শিকার ১৬ হাজার ৮০৪ জনের মধ্যে ৭৮ শতাংশ চিকিৎসা নিলেও মামলা করলেন না কেন? এই পরিসংখ্যান সরকারের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারগুলো থেকেই সংগৃহীত। উপযুক্ত আইন থাকা সত্ত্বেও সিস্টেমের মধ্যেই ত্রুটি রয়েছে। তাই আইনি প্রক্রিয়া এবং তদন্ত প্রক্রিয়াকে আরও ভুক্তভোগী বান্ধব করে তোলা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে অবশ্যই স্থানীয় সালিসের মাধ্যমে ধর্ষণ মামলা নিষ্পত্তির চেষ্টাকে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা উচিত।
তদন্তে ত্রুটি, রাজনৈতিক প্রভাব এবং অর্থের প্রভাবে বেশিরভাগ মামলায় রেহাই পেয়ে যায় দোষীরা। একটি এনজিও’র ২০১১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ছয়টি জেলায় ধর্ষণ মামলা সম্পর্কিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চার হাজার ৩৭২ জন অভিযুক্তর মধ্যে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন মাত্র পাঁচ জন। আর এর পেছনের কারণগুলোও সবার কাছেই সুস্পষ্ট।
শুধু কোনো পরিস্থিতি থেকে বেঁচে যাওয়ার জন্য আইন করা নয়, ধর্ষণ প্রতিরোধে আইনের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা উচিত। আইনের কার্যকর প্রয়োগ এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
Comments