রুদ্ধশ্বাস দুই মাস ও চীনের করোনা মোকাবিলা
চীনের সবচেয়ে বড় উৎসব ‘চাইনিজ নিউ ইয়ার’ বা ‘চীনা নববর্ষ’। জানুয়ারি মাসে শুরু হয়ে প্রায় একমাসেরও বেশি সময় জুড়ে চলে এই উৎসবের তোড়জোড়। শেষ হয় ফেব্রুয়ারি মাসের লণ্ঠন উৎসব বা বসন্ত উৎসবের মাধ্যমে। এই একমাস ধরে আকাশে চলে আতশ বাজির ফোয়ারা। এ সময় এতোটা বাজি পোড়ানো হয় যা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।
বিগত বছরগুলোর মতো এবারও সব বিশ্ববিদ্যালয় নববর্ষ উদযাপনে শীতের ছুটি ঘোষণা করে ১১ জানুয়ারি। সাধারণত ছুটির সপ্তাহখানেক আগে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস খালি হতে শুরু করে এবং ছুটি শুরুর মুহূর্তে ক্যাম্পাস খুব দ্রুত খালি হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা একটি করে চাকাওয়ালা লাগেজ নিয়ে ঠেলতে ঠেলতে বের হয়ে পড়ে পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে। ডরমেটরি থেকে দলে দলে বাড়ীর উদ্দেশ্যে বের হওয়া চীনা শিক্ষার্থীদের খুবই চিরচেনা দৃশ্য। কয়েক দিন ধরে চলে শুধু যাওয়া আর যাওয়া। আবার ছুটি শেষ হওয়ার কিছুদিন আগে থেকে চোখে পড়ে ফেরার দৃশ্য।
তাদের চোখমুখে বাড়ী ফেরা বা ফিরে আসা নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তার ছাপ দেখা যায় না। পরিবহন টিকিট নিয়ে নেই কোনো কালোবাজারি বা জালিয়াতির সুযোগ। বরং সবার যাতায়াত নির্বিঘ্ন এবং সাশ্রয়ী করতে ছুটির সময়ে অনেক বিমান কোম্পানি, ভ্রমণ সংস্থা, পরিবহন কোম্পানি টিকিটের সাধারণ মূল্যের ওপর ছাড় দিয়ে থাকে। এজন্য বিশেষ দিনগুলোতে পরিবারের সবাই একসঙ্গে ছুটি কাটাতে বা দূরে কোথাও ভ্রমণ করতে তেমন কোনো সমস্যায় পড়েন না।
দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, এ বছর চীনা শিক্ষার্থীদের সেই ফেরার দৃশ্য চোখে পড়তে অনেক সময় লেগেছে। শীতের ছুটি শুরুর কিছুদিন পরেই শুরু হয় চীনে মহামারি করোনার তাণ্ডব এবং তা প্রায় ৪ মাসের ও অধিক সময় ধরে চলে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। করোনাভাইরাসের থাবায় চীনসহ পুরো বিশ্ব থমকে যায়। করোনাভাইরাসের উৎসস্থল চীন হলেও আশার বাণী হলো চীন এখন আগের অবস্থানে ফিরে গেছে। সব রাস্তাঘাট, শপিং মল, দর্শনীয় স্থানগুলো ফিরে পেয়েছে আগের সেই চির চেনা রূপ। সব অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সবখানেই স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে।
চীন এতো দ্রুত কীভাবে করোনাভাইরাস মোকাবিলা তা নিয়ে কৌতূহল জাগতেই পারে। এজন্য এই লেখায় করোনা মহামারি মোকাবিলায় চীনা প্রশাসনকে যেসব উদ্যোগ নিতে দেখেছিলাম তার কিছু নমুনা তুলে ধরলাম।
গত ২৪ শে জানুয়ারি আমরা গিয়েছিলাম নববর্ষের নৈশ ভোজে। বছরের এদিনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নৈশ ভোজের আয়োজন করে থাকে। সেখানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা তাদের ফ্যামিলি মেম্বরসহ নিমন্ত্রিত হয়। আমি সেই নিমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। আমার স্ত্রী এবং মেয়ে অন্তুর ভিতরে কিছুদিন আগে থেকেই নৈশ ভোজে যাওয়া নিয়ে একটু বেশি তোড়জোড় লক্ষ্য করেছিলাম। বলতে গেলে, ওদের চীনে আসার পরে ওটাই ছিলো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আয়োজিত কোনো ফরমাল অনুষ্ঠান। তাই একটু বেশিই আনন্দিত ছিল ওরা। আমি গেল ২০১৯ সালের নৈশ ভোজে বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে ভালোই মজা করেছিলাম। সেখানে অনেক দেশের শিক্ষার্থী বা তাদের পারিবারিক সদস্যদের উপস্থিতিতে ছোট্ট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। টেবিলে সজ্জিত হরেক রকমের খাবার দাবার খেতে খেতে ওই অনুষ্ঠান উপভোগ, বন্ধুদের সঙ্গে খোশগল্প, ক্ষণে ক্ষণে খুব কাছ থেকে আতশ বাজির ঝলকানি দেখা সত্যিই খুব উপভোগ্য ছিল। তারই ধারাবাহিকতা এবং এবার প্রথম পরিবার নিয়ে নৈশ ভোজে অংশ গ্রহণ নিঃসন্দেহে একটু হলেও ভালো লাগা অনুভূতি কাজ করছিল। তাই কনকনে শীতের মধ্যেও আমরা ভারি শীতের পোশাক পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দেওয়া নির্ধারিত সময়ের আগেই ক্যাম্পাসে হাজির ইই।
উদ্দেশ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া দেশীয় কিছু মানুষের সঙ্গে দেখা করে নৈশ ভোজের আগের সময় পার করব। একের পর এক কল দিলাম তুর্য, হাবিবা এবং নীলিমাকে। ওরা সবাই এখানে পিএইচডি করছে। ফোন দেওয়ার পরে বুঝলাম তারা নৈশ ভোজে অংশ নিতে আগ্রহী না। সেজন্য ডরমেটরি থেকে বাইরে আসতে চাইল না। আমি জোরাজুরি করলাম না। তবে, কিছুক্ষণের মধ্যে নীলিমা আমাদের সঙ্গে যোগ দিল। আমরা সবাই মিলে নৈশ ভোজের আয়োজনস্থলে গেলাম।
এবারের পরিবেশ গতবারের চেয়ে অনেক ভিন্ন ছিল। কেউ কারো ধারে কাছে ভিড়তে চাইছে না। সবার মুখে কেমন একটা মলিনতা, একটা ত্রাস, অজানা আতংক। কেউ কেউ মুখে মাস্ক পরেছেন। কারণ, ইতোমধ্যে হুবেই প্রদেশের উহান শহরে শুরু হয়ে গেছে করোনার তাণ্ডব, মৃত্যুর মিছিল। নৈশ ভোজের অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তেমন কারো উপস্থিতি দেখলাম না। ছিল না কোনো আতশ বাজির কারসাজি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। খাবারের আয়োজন করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দ ক্যান্টিনে। শিক্ষার্থীর সংখ্যাও খুবই কম। গতবারের তিন ভাগের এক ভাগ হবে সব মিলিয়ে।
ওইদিন বাসায় ফেরার পর থেকেই শুরু হল একের পর এক নিষেধাজ্ঞা। পরিবার নিয়ে আমার ওটাই ছিলো শেষ বাইরে যাওয়া। এরপরে পরিবার নিয়ে বাইরে গিয়েছি প্রায় দুই মাসেরও অধিক পরে। খুব আতঙ্ক আর রুদ্ধশ্বাসের ভিতর দিয়ে পার করেছি আমরা ভয়াবহ সেই দুই মাসের প্রতিটা মুহূর্ত। ২৬ জানুয়ারি জানতে পারলাম আমাদের শহরে ‘কোভিড-১৯’ পজিটিভ রোগী পাওয়া গেছে। বুঝতে বাকি থাকল না বিপদ বেশি দূরে নেই। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উইচ্যাট (চীনাদের ব্যবহৃত সর্বাধিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম) গ্রুপের সতর্কবার্তা আরও ভয় ধরিয়ে দিলো।
বারবার আমাদের জানাতে লাগলেন বাইরে না যাওয়ার জন্য এবং একসঙ্গে বেশি করে খাবার কিনে জমিয়ে রাখার জন্য। কারণ, যে কোনো মুহূর্তে আমাদের চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হতে পারে।
তার ঠিক দুইদিন পর থেকে চলাচলের ওপর খুব কড়াকড়ি শুরু হলো। আমাদের কমিউনিটির গেটে বসানো হল আলাদা পোশাক পরা অনেক সিকিউরিটি গার্ড। তাদেরকে বুঝিয়ে অনুমতি নিয়ে বাইরে যাওয়াটা ছিল অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। বেশিরভাগ চীনাদের ইংরেজি বোঝানো অনেক কষ্টকর। তাই নিরাপত্তা বাহিনীদের নিজের প্রয়োজনীয়তা না বোঝাতে পেরে অনেকবার বিমুখ হয়ে ফিরে এসেছি। পরে বাইরে যাওয়া একেবারেই বন্ধ করে দেই। আমাদের বাসার গ্রাউন্ড ফ্লোরে একটা সুপারসপ আছে। সেখান থেকে নিত্যপ্রয়োজন মিটিয়েছি, তাও সপ্তাহে একবার। ওই একবার গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বেশি করে কিনে জমিয়ে রাখতাম। তখন আমরা খাবার ব্যবহারেও যথেষ্ট মিতব্যয়ী ছিলাম। বেশিরভাগ জিনিস অনলাইনে অর্ডার করতাম। কিন্তু, আগে যেটা ১-২ দিনে পৌঁছাত তখন তা এসেছে এক সপ্তাহের বেশি সময় নিয়ে।
অজানা ভয় পিছু ছাড়েনি। পরিবারের কেউ যদি একবার হাঁচি দিত, তখনই হিসাব করতাম শেষ কবে আমি বাইরে গিয়েছিলাম। আঙ্গুল টিপে টিপে গুণে দেখতাম চৌদ্দ দিন হতে এখনো কতদিন বাকি। শুধু এটাই ভাবতাম একবার যদি আক্রান্ত হই তাহলে কি পরিস্থিতিতেই না পড়ব আমরা। না জানি এদের ভাষা, না জানি কিছু। প্রতিদিন আক্রান্ত, মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছিল। ভাবতাম কবে এই দুর্বিষহ জীবন থেকে পরিত্রাণ মিলবে, আবার কি আমরা আগের সেই দিন ফিরে পাব নাকি এভাবেই গৃহবন্দি হয়ে থাকতে হবে মাসের পর মাস।
কিছুদিন পর থেকে পরিস্থিতির একটু উন্নতি হতে শুরু করলো। আমি দেখেছিলাম চীন সরকারের নজর কাড়ার মতো কিছু নিয়ম নীতি। যা ছিলো নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। এমনিতেই চীনারা অনেক শৃঙ্খলিত, তাতে আবার সরকারের নজরদারি। সবমিলিয়ে তাদের প্রতি স্যালুট জানানো শ্রেয়।
প্রশাসন প্রতিটি কমিউনিটিতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী নিয়োগ করে। কমিউনিটিতে বসবাসকারী সবাইকে দেওয়া হয় অস্থায়ী আইডি কার্ড। আমরা যে কমিউনিটিতে থাকি তার প্রমাণ হিসেবে আমাদের বাসার মালিক সে ব্যবস্থা করে দেন। তবে, এজন্য অনেক কাগজপত্র জমা দিয়ে হয়। সেটা নিয়ে মাঝেমধ্যে বাইরে বাজার করার জন্য বের হওয়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু, কমিউনিটির গেট থেকে বের হওয়া আর ঢোকা ছিল অনেক কষ্টের। কারণ নিরাপত্তা বাহিনীকে যদি আমার প্রয়োজনীয়তা সুস্পষ্ট বোঝাতে না পারতাম তাহলে তারা যেতে দিতেন না।
একদিন বের হয়ে দেখি পুরো রাস্তা জনমানবহীন। যে রাস্তায় মিনিটে শত শত গাড়ি চোখে পড়ে সেখানে পাঁচ মিনিটেও একটি গাড়ি দেখতে পেলাম না। অল্প দূরত্ব পরপর শুধু পুলিশ আর পুলিশ। পাঁচ কিমি রাস্তা পার হতেই অন্তত পাঁচবার গায়ের তাপমাত্রা মেপে দেখছেন তারা। সব খোলা মার্কেট বন্ধ। সুপার মলে প্রবেশের সময় স্বয়ংক্রিয় থার্মাল স্ক্যানারে তাপমাত্রা মাপছে।
দেখেছি নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে কিছু নার্স করোনাভাইরাসের টেস্ট কিট এবং মেডিকেল সরঞ্জামাদি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। যদি কারো শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দেখেছেন, তখন সঙ্গে সঙ্গে নমুনা নিয়ে সেখানেই মেডিকেল টিম পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। যেটা ছিল সত্যিই নজর কাড়ার মতো।
করোনাভাইরাস সংক্রান্ত প্রতিদিনের খবরাখবর পেতাম মোবাইলের একটি অ্যাপের মাধ্যমে। সেখানে পয়েন্ট টু পয়েন্ট আপডেট দেওয়া হতো। গত ২৪ ঘণ্টায় কতজন আক্রান্ত, কতজন সুস্থ, কতজনের মৃত্যু হয়েছে এবং তা গতকালের চেয়ে কতজন বেশি বা কম। যদি দেখতাম গতকালের চেয়ে আজ একটু কমেছে তখন মনে অনেক আশার সঞ্চার হতো। অনেকে দেশে যেতে বলেছিল কারণ এখানকার প্রায় সব বাংলাদেশিরা এখন দেশে।
কিন্তু, কিছু বিষয় ভেবে দেশে যাওয়ার কথা চিন্তা করিনি।
এক. দেশে গেলেই কি বেঁচে যাব? নাকি সঙ্গে ভাইরাস নিয়ে দেশকে আরও বিপদে ফেলব?
দুই. পরিবার নিয়ে দেশে যেতে গিয়ে যদি পথে কোনো পরিবহন থেকে নিজেরা আক্রান্ত হই?
আমাদের দেশ বা পার্শ্ববর্তী অনেকে দেশের জনগণের চীন আর চীনাদের সম্পর্কে অনেক খারাপ ধারণা আছে। কিন্তু, আমি বলব এদের থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। আমি যতটুকু দেখেছি এরা অনেক সাহায্য পরায়ণ এবং সুশৃঙ্খল হয়।
আমার কিছু বন্ধু আছে যারা এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তারা করোনার ভয়াবহ দিনগুলোতে আমাদের সার্বক্ষণিক খোঁজ নিয়েছেন। বারবার বলেছেন কোনো সাহায্য লাগলে তাদেরকে যেন বিনা সঙ্কোচে জানাই। আমার পিএইচডি সুপারভাইজার সবসময় আমার সঙ্গে দেখা করেছেন, খোঁজ খবর নিয়েছেন এবং নানাভাবে সাহায্য করেছেন। মহামারির সময়ে আমরা বাইরে বের হতে পারিনি ঠিকই, কিন্তু আমাদের ইন্টারন্যাশনাল কলেজ সার্বক্ষণিক তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছে। তারা আমাদের কমিউনিটির গেটে এসে ফ্রি মাস্ক, থার্মোমিটারসহ আরও কিছু দরকারি জিনিস পৌঁছে দিয়েছে। আমরা সুস্থ আছি প্রতিদিন উইচ্যাট গ্রুপে সেই তথ্য আপডেট দিতে হতো। প্রতিদিন শরীররে তাপমাত্রা মেপে তাদের জানাতে হতো।
আজ প্রায় পাঁচ মাস হল আমাদের প্রদেশে (ফুজিয়ান) নতুন কারো করোনা আক্রান্তর খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু, আজও তারা হাল ছাড়েনি। আমরা প্রতিদিন গ্রুপে আপডেট দিচ্ছি, বাইরে গেলেও কতটুকু সময় কোথায় কী কাজে গিয়েছিলাম তাও জানাচ্ছি। সুপার মার্কেটগুলো এখনো তাপমাত্রা দেখেই প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে। এখনো পর্যন্ত কোনো পাবলিক প্লেসে মাস্ক ছাড়া কর্তৃপক্ষ যেতে দেয় না। মাস্ক আনতে ভুলে গেলে বা না থাকলে সেখানেই কেনার ব্যবস্থা আছে। বাস, ট্রেন, মেট্রোরেল, সুপার মল, পার্ক ভ্রমণে মাস্ক ব্যতীত কাউকে প্রবেশের অনুমতি নেই।
সম্প্রতি চীনের রাজধানী বেইজিংসহ কিছু প্রদেশে বিদেশ থেকে আসা কিছু ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষায় উপসর্গবিহীন কিছু করোনা ভাইরাস পজিটিভের খবর পাওয়া গেছে। তখনই কর্তৃপক্ষ তড়িৎ গতিতে সেসব ব্যক্তিকে আইসোলেশন করাসহ তার মোবাইল ট্র্যাকিং এর মাধ্যমে ওই ব্যক্তির উপস্থিতির সর্বত্র এলাকা জীবাণুনাশক স্প্রে, তার সংস্পর্শে আসা অন্যদের নমুনা পরীক্ষা করেছে। ফলে, ভাইরাস আর বিস্তার লাভ করতে পারিনি। ভাইরাসের উৎসস্থল চীনে হলেও চীনারা ভাইরাস মোকাবিলায় সবচেয়ে সফলতা দেখিয়েছে।
তারা বুঝতে পেরেছিল প্রতিরোধ বা ভাইরাসের বিস্তার রোধ ছাড়া এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব নয়। তার ফলও তারা যথাযথভাবে পেয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সবখানেই এই ভাইরাসের রাজত্ব ছড়িয়ে গেছে। যে দেশ একে হালকাভাবে নিয়েছে তারাই অনেক বড় খেসারত দিয়েছে। বন্ধুপ্রতিম পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতই তার বড় দৃষ্টান্ত। সরকারের গৃহীত উদ্যোগ বাস্তবে রূপ দিতে প্রশাসনের পাশাপাশি জনগণের স্বদিচ্ছা সবচেয়ে বেশি দরকার। করোনা ভাইরাসকে সমূলে নির্মূল করতে জনসচেতনতার কোন জুড়ি নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছু করলে এটা থেকে পরিত্রাণ মিলবে, না হলে আগামী শীত এর প্রকোপ বাড়বে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিশেষজ্ঞরা এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
এখনকার হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিদিন হাজারের উপরে ব্যক্তি সনাক্ত হচ্ছে। সারাদেশে ভাইরাস ছড়িয়ে গেছে। জনগণের কাছে অনুরোধ, সতর্কতা অবলম্বন করেও একজন থেকে কয়েক কোটি হতে সময় লাগেনি। আর এক হাজার থেকে পুরো বাংলাদেশ হতে কয়েকদিনের ব্যাপার মাত্র। পত্রিকাতে দেখেছি চীনের উহান শহর অবরুদ্ধ করতে সেখানকার মেয়র নাকি আট ঘণ্টা অপেক্ষা করেছিলেন। সেই আট ঘণ্টায় পুরো চীনসহ বিশ্বের অনেক দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল।
আমরা স্বপ্ন দেখি করোনামুক্ত সুন্দর পৃথিবীর। যেখানে থাকবে না কোনো আতঙ্ক, কোনো অনিশ্চয়তা, আর মানুষের বেঁচে থাকার আকুতি। থাকবে শুধু বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার স্বাধীনতা, বাঁচার স্বাধীনতা।
অজয় কান্তি মণ্ডল, গবেষক, ফুজিয়ান এগ্রিকালচার এন্ড ফরেস্ট্রি ইউনিভার্সিটি, ফুজিয়ান, চীন
Comments