চা শ্রমিকের দৈনিক মজুরি বাড়ল ১৮ টাকা
মেয়াদোত্তীর্ণ চুক্তির ২২ মাস পর বাংলাদেশের চা-বাগানে কর্মরত শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে গতকাল মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। ওই চুক্তিতে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৮ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে, বর্তমানে একজন শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ১০২ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকা হলো।
শ্রীমঙ্গলে চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশিয় চা সংসদ ও বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এই দ্বিপাক্ষিক চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি পংকজ কন্দ।
পংকজ কন্দ জানান, আপাতত স্বাভাবিকভাবে একজন চা শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ধরা হয়েছে ১২০ টাকা। এটি কার্যকর হবে জানুয়ারি ২০১৯ থেকে। সেই থেকেই এখন পর্যন্ত বকেয়া পাবেন চা শ্রমিকরা। সকল বকেয়া চারবারে প্রদান করা হবে। তবে প্রথম কিস্তি এই দুর্গাপূজার আগে প্রদান করা হবে।
তিনি বলেন, ‘শারদীয় দুর্গাপূজার আগে দৈনিক মজুরি বৃদ্ধি ও উৎসব বোনাসসহ বিভিন্ন দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবারসহ গত দশ দিন বাংলাদেশের সব বাগানের চা শ্রমিকরা দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেছেন।’
চুক্তি হতে ২২ মাস দেরি হওয়ার কারণ জানতে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরীকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
বৈঠকে চা-বাগান মালিকপক্ষের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফিনলে টি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তাহসিন আহমেদ চৌধুরী, আলতামাস হাসান, মো. সেলিম রেজা, রিয়াজ উদ্দিন, শাহমিন হুদা, চা বাগান মালিকদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান প্রমুখ।
চা-শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষে ছিলেন সভাপতি মাখন লাল কর্মকার, সাধারণ সম্পাদক রাম ভজন কৈরী, সহ-সভাপতি পংকজ কন্দ, রাজু গোয়ালা, বিজয় হাজরা, পরেশ কালেঞ্জী, নিপেন পাল, রবিন্দ্র গোড়, কমল চন্দ্র ব্যানার্জি, দেবেন্দ্র বাড়াইক, শহিদুল ইসলাম ও ধনা বাউরী।
১২০ টাকার নতুন মজুরি চুক্তি চা শ্রমিক সংঘের প্রত্যাখ্যান
১৫ অক্টোবর বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশীয় চা সংসদের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী চা শ্রমিকদের মজুরি এ ক্লাস বাগানে দৈনিক ১২০ টাকা, বি ও সি ক্লাস বাগানে যথাক্রমে ১১৮ টাকা ও ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে দৈনিক ১২০ টাকা মজুরির নতুন চুক্তিকে চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহবায়ক রাজদেও কৈরী ও যুগ্ম-আহবায়ক হরিনারায়ন হাজরা প্রত্যাখ্যান করেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, যখন মোটা চালের কেজি ৪০-৪৫ টাকা, আলু ৫০-৫৫ টাকা, পেঁয়াজ ১০০ টাকা, ডাল ১০০-১১০ টাকা, বাজারে ৬০-৭০ টাকার নিচে কোন সবজি মিলছে না তখন দৈনিক মাত্র ১২০ টাকা মজুরিতে কী করে একজন চা- শ্রমিক ৬-৭ জনের পরিবার চালাবে?
নির্ধারিত সময়ে ২২ মাস পর যে চুক্তি করা হলো তার মেয়াদ ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চা সেক্টরে সরকার গঠিত মজুরি বোর্ড মজুরি নির্ধারণের কাজ করছে। ইতোমধ্যে মজুরি বোর্ড ৫টি সভা করেছে এবং আগামী ২২ অক্টোবর মজুরি বোর্ডের ৬ষ্ঠ সভা আহবান করা হয়েছে। এ সময়ে কোন স্বার্থে মজুরি বোর্ডের কার্যক্রমকে কার্যত নিষ্ক্রিয় করে অতীতের ধারায় দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করা হলো?
চা-শ্রমিক সংঘের পক্ষ থেকে মজুরি বোর্ডের নিকট দৈনিক ৬৭০ টাকা মজুরির দাবিতে গণস্বাক্ষরে আবেদন করা হয়েছে। এ ছাড়াও, বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ৪০০ টাকা, ৫০০ টাকা, ৫৫০ টাকার আবেদন করা হয়েছে। এমন কী চা-শ্রমিক ইউনিয়নও দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে চা শ্রমিকদের আন্দোলনে নামিয়েছিল। গত ৮ দিন চা-শ্রমিকরা সেই আন্দোলন চালিয়েছে, অথচ চা শ্রমিকদের অবগত না করেই কিছু নেতা তলে তলে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি করে মালিকদের স্বার্থ রক্ষা করলেন।
ক্ষুব্ধ চা শ্রমিকরা জানান তারা প্রয়োজনে আরও কঠোর আন্দোলনে যেতে রাজি ছিলেন, কিন্তু কেন নেতারা আপোষ করলেন?
বাংলাদেশে সবচেয়ে কম মজুরি পান চা- শ্রমিকরা। এমনকি প্রতিবেশী দেশের চা শ্রমিকদের তুলনায়ও বাংলাদেশের চা শ্রমিকদের মজুরি অনেক কম।
১৫ অক্টোবর স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকে মজুরি ১০২ টাকা থেকে মাত্র ১৮ টাকা বৃদ্ধি করে ১২০ টাকা নির্ধারণ করার পাশাপাশি চা শ্রমিকদের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য প্রত্যেকটি বাগানে উৎপাদনশীলতা কমিটি গঠন করার বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নেতৃবৃন্দ এই মজুরি চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে সরকার গঠিত মজুরি বোর্ডের মাধ্যমে বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে ৬-৭ জনের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য দৈনিক ৬৭০ টাকাসহ ১১ দফা দাবি বাস্তবায়নের জোর দাবি জানান।
Comments