মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতের নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ
মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ভারতকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি হবে এক হাজার ৮৮৮ ডলার, একই সময়ে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি হবে এক হাজার ৮৭৭ ডলার।
প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু এক টুইটে বলেন, ‘যে কোনো উদীয়মান অর্থনীতির ভালো অবস্থানে পৌঁছানো একটি সুসংবাদ, তবে অবাক করা বিষয় হলো পাঁচ বছর আগেও ভারত যেখানে ২৫ শতাংশ এগিয়ে ছিল, এখন পেছনের দিকে যাচ্ছে।’
নিউইয়র্কভিত্তিক বার্তাসংস্থা ব্লুমবার্গের এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯০ এর দশকে যখন অর্থনীতি বাড়তে শুরু করে, তখন থেকেই ভারতের লক্ষ্য ছিল চীনকে সরিয়ে দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটানো।
অর্থনীতি বিশ্লেষক, কলামিস্ট অ্যান্ডি মুখার্জী বলেন, ‘মাত্র দুই বছর আগে ২০১৮ সালেও ভারত বাংলাদেশের চেয়ে ২০ শতাংশেরও বেশি এগিয়ে ছিল। ভারতের এ পিছিয়ে থাকার পেছনে করোনাভাইরাস মহামারি অনেকখানি দায়ী।’
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জুনের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশে দৈনিক সংক্রমণের হার শীর্ষে ছিল। অন্যদিকে ভারতের দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা এখনো বাড়ছে।
তিনি জানান, ১৬৫ মিলিয়ন জনসংখ্যা নিয়ে বাংলাদেশ কোভিড -১৯ এ পাঁচ হাজার ছয় শ’র কম মৃত্যুর রেকর্ড করেছে। অন্যদিকে এর আট গুণ বেশি জনসংখ্যার ভারতে করোনায় মারা গেছে এর প্রায় ২০ গুণ।
পেনসিলভেনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ সৌমিত্র চ্যাটার্জী ও ভারতের অর্থনীতি বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রামানিয়ান ‘ভারতের রপ্তানি নেতৃত্বের প্রবৃদ্ধি: উদাহরণ ও ব্যতিক্রম’ শিরোনামে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন।
তারা বলছেন, বাংলাদেশ স্বল্প দক্ষতার পণ্য উত্পাদনে আধিপত্য তৈরি করে গত কয়েক দশক ধরে জিডিপির প্রবৃদ্ধিকে ধরে রাখতে পেরেছে।
অন্যদিকে ভারত, ১ বিলিয়ন শ্রমিককে কারখানার কাজের দিকে নিয়ে যেতে পারে এমন পণ্য উৎপাদন না করার সিদ্ধান্তকেই বেছে নিয়েছে।
লেখকরা বলছেন, ‘মূলত স্বল্প দক্ষতার টেক্সটাইল ও পোশাক খাতে ভারত প্রায় ১৪০ বিলিয়ন ডলার উৎপাদন করতে পারতো, যা ভারতের জিডিপির প্রায় পাঁচ শতাংশ।’
তারা আরও জানান, নীতি-নির্ধারকরা এ কথা স্বীকার করতে চান না যে, যেসব জুতা ও পোশাক কারখানাগুলো তৈরি করতে দেওয়া হয়নি বা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সেখান থেকে কয়েক হাজার ডলার অর্জন করা যেত, ভারতে ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি হতো।
কলামিস্ট অ্যান্ডি মুখার্জী জানান, ভারতে গ্রামাঞ্চল থেকে শহুরে অভিবাসনের পথটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেখানে উচ্চতর স্তরের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়, যা গ্রামের মানুষের পক্ষে কঠিন। বাংলাদেশে নারীদের পাঁচ জনের মধ্যে দুজনই শ্রম বাজারে কর্মক্ষম, যা ভারতের চেয়ে দ্বিগুণ।
ভারতের নীতিনির্ধারকদের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আরও বড় বিপদটি হলো সংশোধনমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার পরিবর্তে রাজনীতিবিদরা অতীতের ভুলগুলোই বারবার করছেন। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, বাংলাদেশের চেয়ে দরিদ্র? কোনো সমস্যা নেই। আমরা আমদানি কমিয়ে আনতে পারি ও দেশীয় অর্থনীতির জন্য কর্মী তৈরি করতে পারি। এভাবে চাকরি তৈরি করা যাবে।’
তিনি জানান, হঠাৎ করেই যেন ১৯৬০ ও ৭০ সালের স্বনির্ভরতার স্লোগানগুলো আবারও ভারতের অর্থনৈতিক আলোচনা ফিরতে শুরু করেছে।
মহামারির মধ্যে ব্যাপক ক্ষতির মুখে থাকা ভারত অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে হিমশিম খাচ্ছে।
অ্যান্ডি মুখার্জী বলছেন, সবসময় শক্তিশালী অর্থনীতি চীনের সঙ্গে পাল্লা দিতে থাকা দেশটিকে এখন সব সময় সরু চোখে দেখা বাংলাদেশকেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আগে টপকাতে হবে।
Comments