খুলনায় পাটকল শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, আহত কমপক্ষে ২০

খুলনায় বন্ধ হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। আজ সোমবার সকালে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে নারীসহ কমপক্ষে ২০ জন শ্রমিক ও তিন জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
Khulna-1.jpg
পাটকল শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। ছবি: স্টার

খুলনায় বন্ধ হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। আজ সোমবার সকালে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে নারীসহ কমপক্ষে ২০ জন শ্রমিক ও তিন জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। 

অবিলম্বে বন্ধকৃত ২৫ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চালু, আধুনিকায়ন করা, অবসরপ্রাপ্ত, কর্মরত, বদলী, অস্থায়ী সব শ্রমিকের বকেয়া পাওনা এককালীন পরিশোধ করাসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ বেলা ১১টা থেকে সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের উদ্যোগে আটরা শিল্পাঞ্চলের খুলনা-যশোর হাইওয়েতে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন শ্রমিকরা। পরে পুলিশ এসে লাঠিচার্জ করে তাদের উঠিয়ে দেয়। এসময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন শ্রমিকরা।

সকাল ১০টায় ইস্টার্ন জুট মিলের গেটে পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক নেতারা ও শ্রমিকরা একত্র হয়ে সমাবেশ করেন। পরে তারা খুলনা-যশোর হাইওয়ের আটরা শিল্পাঞ্চলে তিন ঘণ্টা পথ অবরোধ করেন। এসময় খুলনামুখী গাড়ি আটকা পড়ে এবং খুলনা থেকে ছেড়ে আসা গাড়িগুলো বিকল্প পথ ধরে চলাচল করে। শত শত মানুষকে পায়ে হেঁটে এলাকা অতিক্রম করতে দেখা যায়।

ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। তারা পরে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে অবরোধ উঠিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু শ্রমিকরা তা মানতে রাজি হননি। পরে শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ করে এবং ধাওয়া দিয়ে তাদেরকে স্টার জুট মিলের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয় পুলিশ।

পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পুলিশের আচরণ আজ বর্বর ছিল। তারা আমাদের সঙ্গে চরম অপমানজনক আচরণ করেছে। আমাদের শ্রমিকদের লাঠিচার্জ করেছে।’

তিনি জানান, পুলিশের লাঠিচার্জে নারীসহ কমপক্ষে ২০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদেরকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

ঘটনাস্থল থেকে চার জন শ্রমিককে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

তবে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) ডিসি নর্থ মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন দ্য ডেইলি স্টারের কাছে দাবি করেছেন, সংঘর্ষে পুলিশের তিন সদস্য আহত হয়েছেন।

Khulna-22.jpg
পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক নেতারা ও শ্রমিকরা একত্র হয়ে সমাবেশ করেন। ছবি: স্টার

কুদরত-ই-খুদা বলেন, ‘এই করোনাকালে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো বন্ধ করে ৫০ হাজার শ্রমিককে কর্মহীন করা এবং লক্ষাধিক মানুষকে নতুন করে দারিদ্র্যের মধ্যে ঠেলে দেওয়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের চরম নিষ্ঠুরতার বহিঃপ্রকাশ। পাটশিল্প সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও পাটচাষিসহ প্রায় তিন কোটি মানুষ নতুন করে ক্রমান্বয়ে দারিদ্র সীমার নীচে নেমে যাচ্ছে।’

সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা বলেন, পাটকল শ্রমিক ও এই অঞ্চলের মানুষদের জীবন-জীবিকা অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেওয়া কোনোভাবেই বরদাস্ত করা যায় না।

নেতারা আরও বলেন, পাটকলে লোকসানের প্রধান কারণ দুর্নীতি, লুটপাট ও ভুলনীতি। এ ছাড়াও, কলকারখানাগুলো আধুনিকায়ন না করা, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি না করা। এসব সমস্যার সমাধান না করে কারখানা বন্ধ করা কোনো সমাধান নয়।

খুলনা অঞ্চলের কয়েক হাজার শ্রমিক এ অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেন।

শ্রমিক নেতা কামরুল ইসলাম, সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার ও শ্রমিক নেতা শামসেদ আলম, নাগরিক পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় সদস্য মোজাম্মেল হক খান আজকের অবরোধ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন।

এ কর্মসূচি সফলের লক্ষে পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের উদ্যোগে গত ১৫ অক্টোবর বিকাল ৪টায় ফুলতলা ইস্টার্ন জুট মিল গেটে শ্রমিক সমাবেশ, ১৬ অক্টোবর বিকাল ৪টায় পিপলস গোলচত্বরে ছাত্র-যুব-নারী-কৃষক-খেতমজুর ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উপস্থিতিতে সংহতি সমাবেশ এবং ১৭ অক্টোবর বিকাল ৪টায় রাজঘাট কেজি স্কুল চত্বরে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

6h ago