পিএসজির মাঠে ফের ইউনাইটেডের উৎসবের নায়ক র্যাশফোর্ড
প্রায় দুই বছর আগে মার্কাস র্যাশফোর্ডের যোগ করা সময়ের গোলে কপাল পুড়েছিল প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের (পিএসজি)। ঘরের মাঠে হেরে তাদেরকে বিদায় নিতে হয়েছিল উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলো থেকে। এবার অবশ্য নকআউটে নয়, ইউরোপের সেরা ক্লাব আসরের নতুন মৌসুমের শুরুতেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মুখোমুখি হলো দলটি। কিন্তু তাতে পাল্টাল না চিত্র। তরুণ স্ট্রাইকার র্যাশফোর্ডের শেষ দিকের লক্ষ্যভেদে হার নিয়ে মাঠ ছাড়লেন কিলিয়ান এমবাপে-নেইমাররা।
গতবারের রানার্সআপদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শুভ সূচনা করেছে ওলে গানার সুলশারের দল। মঙ্গলবার রাতে ‘এইচ’ গ্রুপের ম্যাচে পিএসজির বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতেছে তারা। ২০১৮-১৯ মৌসুমের পর দুদলের প্রথম দেখায় নিজেদের মাঠ পার্ক দে প্রিন্সেসে ফের হারের তিক্ত স্বাদ নিয়েছে টমাস টুখেলের শিষ্যরা।
তিনটি গোলই করেন সফরকারী ইউনাইটেডের খেলোয়াড়রা। প্রথমার্ধে ব্রুনো ফার্নান্দেসের সফল স্পট-কিকে পিছিয়ে পড়া পিএসজি সমতায় ফেরে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে, অ্যান্থনি মার্শিয়ালের আত্মঘাতী হেডে। এরপর আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে জমজমাট লড়াইয়ে নির্ধারিত সময়ের তিন মিনিট আগে ব্যবধান গড়ে দেন র্যাশফোর্ড।
ম্যাচের ৬১ শতাংশ সময়ে বল ছিল স্বাগতিকদের দখলে। কিন্তু নেইমার-এমবাপে-আনহেল দি মারিয়াকে গড়া দলটির শক্তিশালী আক্রমণভাগ খুঁজে পায়নি জালের দিশা। যদিও তাদের নেওয়া ১৪টি শটের পাঁচটি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে, ইউনাইটেডও মোট ১৪টি শট নেয় পিএসজির গোলমুখে। তারা লক্ষ্যে রাখতে পারে ছয়টি শট।
দ্বাদশ মিনিটে ম্যাচের প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগটি তৈরি করে পিএসজি। ডি-বক্সের বাইরে থেকে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড দি মারিয়ার বাঁ পায়ের বাঁকানো শট ঝাঁপিয়ে পড়ে রুখে দেন অতিথিদের গোলরক্ষক দাভিদ দে গেয়া। পরের মিনিটে আবারও ইউনাইটেডের ত্রাতা এই স্প্যানিশ তারকা। ছয় গজের বক্সের মধ্যে দারুণ এক ক্রস ফেলেন এমবাপে। ‘পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ’-এ পা ছোঁয়ান লেইভিন কুরজাওয়া। হাঁটু দিয়ে তা প্রতিহত করার পর লুফে নেন দে গেয়া।
২৩তম মিনিটে ইউনাইটেডকে এগিয়ে দেন অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরে খেলতে নামা পর্তুগিজ মিডফিল্ডার ব্রুনো। ফরাসি ফরোয়ার্ড মার্শিয়াল ডি-বক্সে আবদু দিয়ালোর ফাউলের শিকার হওয়ায় পেনাল্টি পেয়েছিল রেড ডেভিলসরা। ব্রুনোর প্রথম স্পট-কিকটি ছিল দুর্বল, বাম দিকে ঝাঁপিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন পিএসজি গোলরক্ষক কেইলর নাভাস। কিন্তু তিনি গোললাইন ছেড়ে আগেই বেরিয়ে এসেছিলেন। তাই ভিএআরের সাহায্য নিয়ে ফের পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। দ্বিতীয়বার সুযোগ হাতছাড়া করেননি ব্রুনো।
৩৮তম মিনিটে ডি-বক্সের অনেকটা বাইরে থেকে নেওয়া ব্রুনোর শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন নাভাস। পরের মিনিটে ব্যবধান প্রায় দ্বিগুণ করে ফেলেছিল ইউনাইটেড। অ্যালেক্স তেলেসের কর্নারে স্কট ম্যাকটমিনের হেড পিএসজির দিয়ালোর গায়ে লেগে অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
৪৮তম মিনিটে পাল্টা-আক্রমণে ফরাসি ফরোয়ার্ড এমবাপের শট অসাধারণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন দে গেয়া। সাত মিনিট পর অবশ্য আর জাল অক্ষত রাখতে পারেননি তিনি। ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমারের কর্নার বিপদমুক্ত করতে গিয়ে উল্টো মাথা ছুঁইয়ে নিজেদের জালে পাঠিয়ে দেন মার্শিয়াল, সমতায় ফেরে পিএসজি।
৫৯তম মিনিটে লুক শয়ের ক্রসে মার্শিয়ালের হেড ক্রসবারের সামান্য উপর দিয়ে চলে যায়। দশ মিনিট পর প্রতিপক্ষের তিন ডিফেন্ডারের মাঝে দিয়ে দূরপাল্লার শট নেন র্যাশফোর্ড। তবে তিনি পরাস্ত করতে পারেননি নাভাসকে। ৭৯তম মিনিটে ফের র্যাশফোর্ডকে হতাশ করেন কোস্টারিকার এই গোলরক্ষক। পা দিয়ে শট ফিরিয়ে দেন তিনি। চার মিনিট পর ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেইমারের নেওয়া শট রুখে দেন দে গেয়া।
৮৭তম মিনিটে কাঙ্ক্ষিত গোল পেয়ে যায় ইউনাইটেড। পল পগবার পাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গতির তোড়ে লেগে থাকা ডিফেন্ডারকে ছিটকে দিয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে কোণাকুণি শট নেন তিনি। নাভাসকে ফাঁকি দিয়ে পোস্টের ভেতরের দিকে লেগে বল জালে পৌঁছালে উৎসবে মাতে ইউনাইটেড।
‘এইচ’ গ্রুপের আরেক ম্যাচে আরবি লাইপজিগ হারিয়েছে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলতে আসা ইস্তানবুল বাশাকসেহিরকে। তুরস্কের দলটির বিপক্ষে নিজেদের মাঠে ২-০ গোলে জিতেছে জার্মান ক্লাবটি।
Comments