শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় ফাদার টিমকে স্মরণ
শিক্ষাবিদ ও সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সক্রিয়কর্মী এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত তৈরিতে কাজ করা বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু প্রয়াত ফাদার টিমকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার কারিতাস বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তার স্মরণে নাগরিক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
কারিতাস বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক উপদেষ্টা ড. রেভা. ফা. হিউবার্ট লিটন গমেজের প্রার্থনা এবং নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন ফ্রান্সিস রোজারিওর স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হওয়া স্মরণসভায় স্মৃতিকথা ও অনুভূতি প্রকাশ করেন বাংলাদেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও, সিএসসিসহ অন্যান্য অতিথিরা।
কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও বলেন, ‘ফাদার টিম বেঁচে আছেন। তিনি অমর তার চিন্তায়, তার কথায়, তার কাজে।’
সংসদ সদস্য ও প্রিপ ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক আরমা দত্ত বলেন, ‘ফাদার টিম ছিলেন আমাদের উন্নয়নধারার প্রবর্তক। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার স্রষ্টা।’
এতে এডাব সভাপতি জয়ন্ত অধিকারী, নিজেরা করি’র প্রধান সমন্বয়কারী খুশি কবীর, আইপিডিএস সভাপতি সঞ্জিব দ্রং, কারিতাস এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ড. বেনেডিক্ট আলো ডি’ রোজারিও, নটরডেমের উপাচার্য ড. রেভা. ফাদার প্যাট্রিক গাফনি ফাদার টিমের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের নানা দিক তুলে ধরেন।
সভায় বক্তারা বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে পুনর্গঠন এবং বিভিন্ন দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুর্দশা লাঘবে ফাদার টিমকে এ দেশের মানুষ চিরদিন স্মরণে রাখবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেও বাংলাদেশের শিক্ষা বিস্তারে ও আর্তমানবতার সেবায় ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন মানবতাবাদী এই ব্যক্তিত্ব। নটরডেম কলেজের ষষ্ঠ অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন কলেজটির অন্যতম এই প্রতিষ্ঠাতা। তার হাতে ধরেই কলেজটিতে বিজ্ঞান বিভাগ চালু হয় এবং ১৯৫৫ সালে তিনি নটরডেম কলেজ সায়েন্স ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়া, কলেজটির ডিবেটিং ক্লাব ও নটরডেম কলেজ অ্যাডভেঞ্চার ক্লাবেরও প্রতিষ্ঠাতা তিনি।
অনুষ্ঠানের সমাপনীতে কারিতাস বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বিশপ জের্ভাস রোজারিও উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, ‘ফাদার টিম বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি রচনা করেছেন। নিঃস্বার্থভাবে তিনি সেবা করেছেন গ্রামে-গঞ্জে জনপদে।’
উল্লেখ্য, ১৯৭০ সালে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তখন ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য নিজেকে পূর্ণভাবে নিয়োজিত করেছিলেন ফাদার টিম। ১৯৭১ থেকে ১৯৭২ সালে ছয় মাসের জন্য ফাদার টিম মনপুরা দ্বীপে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন প্রকল্পের পরিচালকের ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত তিনি কারিতাস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৭ সালে ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং ও বাংলাদেশের উন্নয়নে দীর্ঘ ৩৫ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য ফাদার টিম ম্যাগসেসে পুরস্কারে ভূষিত হন। একই বছর সমাজসেবায় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে তিনি আবু সাইয়ীদ চৌধুরী পুরস্কারে ভূষিত হন।
তিনি বাংলাদেশের মানবাধিকার কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত পর পর তিনবার এর সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে তিনি কারিতাস বাংলাদেশের পরামর্শক নিয়োজিত হন। ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ প্রদান করে।
Comments