বেগমগঞ্জে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: স্বামীর সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় হাইকোর্ট গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে নির্যাতনের শিকার নারীর স্বামী ও স্বামীর বড় ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের মাধ্যমে এই তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অবহেলার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ এম আর চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, স্থানীয় পুলিশ এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেদনে তদন্ত কমিটি সুপারিশ করেছে।
নোয়াখালীর চৌমুহনী সরকারি এসএ কলেজের অধ্যক্ষের নেতৃত্বে গঠিত এ কমিটি বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চে প্রতিবেদন জমা দেয়।
এ ছাড়া, বাংলাদেশ টেলিযোগযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আরও একটি প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দিয়ে জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে ওই নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ আগামী ২৯ নভেম্বর শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছেন বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল।
গত ২ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুরে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিও ধারণ করা হয়। ঘটনার ৩২ দিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হয়।
৫ অক্টোবর হাইকোর্ট বেঞ্চ বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে ওই ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অবিলম্বে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন এবং ভিডিও ফুটেজের একটি কপি সংরক্ষণের নির্দেশ দেন।
স্বতঃপ্রনোদিত হয়ে বেঞ্চ নোয়াখালীর পুলিশ সুপারকে ওই নারী ও তার পরিবারকে সব ধরনের নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে রুল জারি করেন।
একই সঙ্গে, এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে পুলিশের কোনও অবহেলা আছে কিনা তা তদন্তের জন্য চৌমুহনী সরকারি এসএ কলেজের অধ্যক্ষের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে হাইকোর্ট।
কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও নোয়াখালীর সমাজসেবা কর্মকর্তা।
কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল।
ভুক্তভোগীদের রক্ষায় অবহেলার জন্য ওসিসহ বেগমগঞ্জ থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এর ব্যাখ্যা চেয়ে হাইকোর্ট একটি রুলও জারি করেন।
আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও আবদুল্লাহ আল মামুন এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চে ঘটনার বিষয়ে সংবাদপত্রের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর, বেঞ্চ এ সব নির্দেশনা ও রুল জারি করেন।
আদেশ জারির আগে আদালত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন, সেক্রেটারি মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ইয়াদিয়া জামান, জামিউল হক ফয়সাল, রাশিদা চৌধুরী নীলু ও তানজিম আল ইসলামসহ কয়েকজন আইনজীবীর মতামত নেন।
Comments