ভারতে নতুন ভূমি আইনের প্রতিবাদে কাশ্মীরে ধর্মঘট

ভারতের নতুন ভূমি আইনের প্রতিবাদে কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থানে আজ ধর্মঘট পালিত হয়েছে। বন্ধ ছিল দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
বিতর্কিত এলাকায় যে কোনও ভারতীয় নাগরিকের জমি কেনার সুযোগ আছে, নতুন এ আইনের প্রতিবাদে সেখানে আজ শনিবার ধর্মঘট পালন করা হয় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি।
কাশ্মীরের রাস্তায় গণপরিবহন বন্ধ থাকার পাশাপাশি, সম্ভাব্য ভারত বিরোধী বিক্ষোভ দমনে কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে দাঙ্গা পুলিশের টহল চলছে।
গত সোমবার নতুন এ ভূমি আইন কার্যকর হওয়ার পর, কাশ্মীরের প্রধান বিচ্ছিন্নতাবাদী দল এর প্রতিবাদে এই ধর্মঘটের ডাক দেয়।
নতুন আইনের অধীনে ভারতের যে কোনও নাগরিক কিংবা সামরিক বাহিনী এই অঞ্চলে সরাসরি জমি অধিগ্রহণের অনুমতি পাবে। কাশ্মীরের ভারত-সমর্থক রাজনীতিবিদরাও এই আইনের সমালোচনা করেছেন এবং ভারত এ অঞ্চলের জমি 'বিক্রি করে দিচ্ছে' বলে অভিযোগ করেছেন।
নতুন আইন স্থানীয় জমির অধিকার সম্পর্কিত বেশিরভাগ আইনকে বাতিল বা সংশোধন করেছে। এটি ১৯৫০ সালের ভূমি সংস্কার আইন বাতিল করে, যেখানে ভূমিহীন কৃষকদের জন্য জমি বরাদ্দের কথা বলা ছিল।
এ অবস্থায় কাশ্মীরের জাতিগত ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে। তাদের ধারণা, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এ অঞ্চলে নতুন করে বাইরের লোকেরা এসে বসতি স্থাপন করে জনসংখ্যা চিত্র পাল্টে দেবে।
তারা নতুন এ ব্যবস্থাকে পশ্চিম তীর বা তিব্বতের সঙ্গে তুলনা করছেন। তারা বলছেন, এই অঞ্চল একটি উপনিবেশে পরিণত হবে।
গত বছর পর্যন্ত এই অঞ্চলে ভারতীয়দের সম্পত্তি কেনার অনুমতি ছিল না। কিন্তু, ২০১৯ সালের আগস্টে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ও এর পৃথক সংবিধান বাতিল ঘোষণা করে অঞ্চলটিকে লাদাখ ও জম্মু-কাশ্মীর দুটি ফেডারেল ভূখণ্ডে বিভক্ত করে। ভূমি ও চাকরির ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারের সূত্র অপসারণ করে।
কাশ্মীর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দুই ভাগে বিভক্ত। তবে, উভয় দেশই এই অঞ্চলের পুরোপুরি দাবি করে। এখানকার স্থানীয় বিদ্রোহীরা ১৯৮৯ সাল থেকে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে।
নতুন ভূমি আইন মোদির কট্টরপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী নীতির একটি অংশ। এ আইনের মাধ্যমে কাশ্মীরি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনী অপারেশনাল, আবাসিক ও প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে যে কোনও এলাকাকে 'কৌশলগত এলাকা' হিসেবে ঘোষণা করতে পারে।
তবে, ভারত সরকার বলেছে যে এ সিদ্ধান্ত উন্নয়ন ও শান্তিকে উত্সাহিত করতে করা হয়েছে।
কাশ্মীরে নয়াদিল্লির শীর্ষ প্রশাসক মনোজ সিনহা সম্প্রতি বলেন, 'আমি জোর করে এবং পুরো দায়বদ্ধতার সঙ্গে বলতে চাই যে কৃষিজমি কৃষকদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।'
'এখানে বাইরের কেউ আসতে পারবে না,' যোগ করেন তিনি।
সরকার বলেছে, কেবল বাইরের শিল্প প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত 'শিল্পাঞ্চলে' আসতে বলা হবে।
এদিকে, কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী দল এক বিবৃতিতে জানায়, কাশ্মীর বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের সব সম্ভাবনা নষ্ট করেছে ভারত।
'এর পরিবর্তে, আমাদের জমি দখল করা, আমাদের জাতিগত পরিচয় ধ্বংস করা এবং নিজ ভূমিতে আমাদের সংখ্যালঘুতে পরিণত করার জন্য স্থায়ীভাবে জনসংখ্যার চিত্র বদল করার নীতি গ্রহণ করে আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।'
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'নয়াদিল্লিতে আইন প্রণয়ন ও সংশোধন করা হচ্ছে এবং জোর করে লোকেদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।'
Comments