চলনবিলে দেশি মাছের উৎপাদন বেড়েছে

এ বছরের টানা কয়েক দফার বন্যা আশীর্বাদ বয়ে এনেছে দেশের অন্যতম বৃহত্তম মিঠা পানির মাছের উৎস চলনবিলে। গত কয়েক বছরের তুলনা এবার চলনবিলের মৎস্যজীবীদের জালে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি মাছ ধরা পড়ছে। এতে হাসি ফুটেছে এ অঞ্চলের মৎস্যজীবীদের মুখে।
এবার চলনবিলে মৎস্যজীবীদের জালে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি মাছ ধরা পড়ছে। ছবি: স্টার

এ বছরের টানা কয়েক দফার বন্যা আশীর্বাদ বয়ে এনেছে দেশের অন্যতম বৃহত্তম মিঠা পানির মাছের উৎস চলনবিলে। গত কয়েক বছরের তুলনা এবার চলনবিলের মৎস্যজীবীদের জালে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি মাছ ধরা পড়ছে। এতে হাসি ফুটেছে এ অঞ্চলের মৎস্যজীবীদের মুখে।

চলনবিলের পাবনার চাটমোহর উপজেলার হান্দিয়াল গ্রামের মৎস্যজীবী মো. আজিম উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রতিবছর অক্টোবর-নভেম্বরে চলনবিলের মাছ প্রায় শেষ হয়ে যায়, কিন্তু এ বছরের চিত্র ভিন্ন। জাল ফেলেলেই মিলছে মাছ। প্রতিবছর এ সময় তিন থেকে চার ঘণ্টা জাল ফেলে ১০ থেকে ১৫ কেজি মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু এবার একই সময়ে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কেজি মাছ ধরতে পারছি।’

চলনবিল প্রায় ৮১ প্রজাতির দেশি মাছের জোগান দেয়। ছবি: স্টার

‘গত ১৫ বছর ধরে চলনবিলে মাছ শিকার করছি। কিন্তু, এ বছরই সবচেয়ে বেশি মাছ শিকার করতে পারছি, টানা বন্যার কারণে চলনবিলে দেশি মাছের প্রাচুর্যতা বেড়েছে,’ বলেন তিনি।

নাটোরের সিংরা এলাকা থেকে মাছ নিয়ে পাবনায় বিক্রি করতে আসেন মাছ ব্যাবসায়ী মানিক হোসেন। গত কয়েকবছর ধরে চলনবিলের দেশি মাছের ব্যবসা করছেন তিনি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মাছের পরিমাণ বেশি হলেও দাম বেশি পাচ্ছেন না বলে জানান মানিক।

একই অভিযোগ চলনবিলের অন্যান্য মাছ ব্যবসায়ীদের। তারা জানান, এ ছোট জাতের রুই মাছ (স্থানীয় ভাবে নয়ারি মাছ বলে) ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। যদিও অন্যান্য বছর এ সময় একই জাতের মাছ ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতো। এ বছর মাছের পরিমাণ বেশি হওয়ায় আশানুরূপ দাম পাওয়া যাচ্ছে না।

মৎস্য বিভাগ সুত্রে জানা যায়, দেশের বৃহত্তম মিঠাপানির দেশি প্রজাতির মাছের উৎস চলনবিল প্রায় ৮১ প্রজাতির দেশি মাছের জোগান দেয়। যদিও কালের বিবর্তনে অনেক প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব সংকটে। তারপরেও সবচেয়ে বেশি প্রজাতির দেশি মাছ উৎপাদনের উৎস চলনবিল।

সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহেদ আলি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চার দফার বন্যায় চলনবিলের নদ-নদীসহ বিলের বিশাল এলাকা প্রায় সাত মাস পানিতে নিমজ্জিত আছে। দীর্ঘ সময় চলনবিলে পানি প্রবাহ থাকায় দেশি মাছের প্রজননের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়। মাছের ডিম উৎপাদন ও ডিম থেকে মাছ উৎপাদনের সময় চলনবিল জলমগ্ন থাকায় মাছের উৎপাদন বেড়েছে।’

‘অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর চলনবিলে প্রায় ৫০ শতাংশ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশি মাছের প্রজননের সময় চলনবিলে পানির প্রবাহ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় দ্রুত মাছগুলো বেড়ে উঠার সুযোগ পেয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।

সৌখিন এবং কর্মহীন অনেকেই চলনবিলে মাছ শিকার করে জীবনধারণ করছে। ছবি: স্টার

দেশি মাছের মধ্যে রুই, কাতল, চিতল, আইর, বোয়াল, পুঁটি, টেংরা, বায়েম, খলসে, গুচি, সরপুটি, বেলেসহ অধিকাংশ মাছ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। বিশাল চলনবিলে শুধু জাল ফেলেই নয় বাঁশের বানা দিয়ে, খড় জাল দিয়ে এবং নানা প্রকারের জাল নিয়ে পেশাদার মৎস্যজীবীদের পাশাপাশি সৌখিন এবং কর্মহীন অনেকেই চলনবিলে মাছ শিকার করে জীবনধারণ করছে।

চলনবিলের পবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চলনবিলের প্রতিটি এলাকায় মাছ ধরতে ব্যাস্ত পেশাদার ও মৌসুমি মাছ শিকারিরা।

চলনবিলের দেশি মাছের সবচেয়ে বড় আড়ত সিরাজগঞ্জের তাড়াশের মহিষলুটি মাছের আড়ত। প্রতিদিন এ আড়তে ভোর ৪টা থেকে চলনবিলের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাছ নিয়ে জেলেরা হাজির হয়। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায় সেসব মাছ। এখানে সকাল ৮টা পর্যন্ত চলে মাছের বেচাকেনা। এরপরও অনেকেই মাছ নিয়ে আসে, কিন্তু বাইরের ব্যাপারীদের না পেয়ে স্থানীয় শুটকি ব্যাবসায়ীদের কাছে কমদামে বিক্রি করতে হয়।

চলনবিলের চাটমোহর উপজেলার হান্দিয়াল গ্রামের মাছ ব্যাবসায়ী রাইসুল ইসলাম বলেন, ‘গত সপ্তাহে প্রায় ২০ কেজি পুঁটি মাছ নিয়ে বিপাকে পড়ি। মহিষলুটি আড়তে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় কোথাও এগুলো বেঁচতে না পেরে শেষ পর্যন্ত ৩০ টাকা কেজিতে শুটকি মাছ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেই।’

দেশি মাছের উৎপাদন বেশি হওয়ায় অনেকেই আশানুরূপ দাম পাচ্ছে না বলে অভিযোগ থাকলেও সহজলভ্য হওয়ায় মধ্যবিত্তদের ক্রয়সীমার মধ্যে থাকায় স্থানীয় বাজারেও চলনবিলের মাছের চাহিদা বেড়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
Tofazzal beaten to death at DU

Man beaten to death in DU hall

He was suspected to have stolen students' mobile phones

1h ago