বাইডেন এগিয়ে, কিন্তু...

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভার্জিনিয়ায় রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির হেডকোয়ার্টার্সে কর্মীদের ধন্যবাদ জানানোর মধ্য দিয়ে শেষ করলেন তার প্রচারণার দীর্ঘ যাত্রা। ফিরে গেলেন হোয়াইট হাউজে। সেখানেই তিনি অবস্থান করবেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং জো বাইডেন। ছবি: সংগৃহীত

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভার্জিনিয়ায় রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির হেডকোয়ার্টার্সে কর্মীদের ধন্যবাদ জানানোর মধ্য দিয়ে শেষ করলেন তার প্রচারণার দীর্ঘ যাত্রা। ফিরে গেলেন হোয়াইট হাউজে। সেখানেই তিনি অবস্থান করবেন।

হোয়াইট হাউজ গতকাল পুরু লোহার জাল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। হোয়াইট হাউজে ফেরার আগে প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের জানিয়ে গেলেন, ‘জয়ী হওয়া সহজ, হেরে যাওয়া সহজ নয়, বিশেষ করে আমার জন্য।’ এই কথার মধ্য দিয়ে জানিয়ে দিলেন, তিনি পরাজয় মেনে নেবেন না। প্রথমে কথা ছিল ওয়াশিংটন ডিসিতে নিজের হোটেলে ‘বিজয় পার্টি’র আয়োজন করবেন। পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে জানানো হয় হোয়াইট হাউজের ইস্ট রুমে এই আয়োজন হবে ২৫০ জন আমন্ত্রিত সমর্থককে নিয়ে। সাংবাদিকরা ফাঁস করে দেন সেখানে ৭০০ জনকে আমন্ত্রণ দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মঙ্গলবার দুপুরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, রাতে তিনি ভাষণ দেবেন কিন্তু, ‘কনসেশনাল পিচ’ নয়। অর্থাৎ পরাজয় মেনে নেওয়ার ভাষণ দেবেন না। সাধারণত ফলাফল ঘোষণার আগেই দুই প্রার্থী দুটি ভাষণ প্রস্তুত রাখেন। জয় এবং পরাজয়ের। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্যও দুটি ভাষণ প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। কিন্তু পরাজয় মেনে নেওয়ার ভাষণে তিনি একবারও চোখ রাখেননি বলে হোয়াইট হাউজ থেকে সংবাদকর্মীরা জানান।

ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউজের বাইরে লাফয়েত এভিনিউতে রাতেই বিশাল প্রতিবাদ বিক্ষোভের প্রস্তুতি চলছে। সেখানে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। ন্যাশনাল গার্ড আমেরিকান অন্যান্য শহরেও পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে সম্ভাব্য সংঘর্ষের আশংকায়। নিউইয়র্কের ম্যানহাটন টাইমস স্কয়ারসহ অন্যান্য এলাকায় ব্যাপক সশস্ত্র পুলিশ, মাউন্টেন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, মধ্যরাতে ব্যাপক প্রতিবাদ র‌্যালি থেকে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পরার শঙ্কায়। যদিও সিটির মেয়র বলেছেন, তেমন কোনও বড় ধরণের সংঘর্ষের আগাম তথ্য নিউইয়র্ক সিটি পুলিশের কাছে নেই। সন্ধ্যা পর্যন্ত আমেরিকার কোথাও কোনও উল্লেখযোগ্য সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি।

ভোটের দিন দুপুরে ছেলে বো বাইডেনের কবর ভিজিট করে ডেলোয়ার স্টেচের উইলমিংটনে নিজ বাড়িতে ফিরে যান ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেন। এর আগে তিনি আকস্মিক একটি কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে কথা বলেন। রাতে ফলাফল ঘোষণার পর তিনি নিজ বাড়ি থেকেই ভাষণ দেবেন। তিনি আশা করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হেরে গেলে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।

আমেরিকার বিভিন্ন স্টেটে বিভিন্ন সময় ভোটগ্রহণ শুরু ও শেষ হয়। নিউইয়র্কে ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে সকাল ৬টায় দিনের আলো ফোটার আগেই ভোটগ্রহণ শুরু হয়। তার আগেই বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের বাইরে লম্বা লাইন লক্ষণীয় ছিল। এই সব লাইনে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় অনেক বাংলাদেশি ইমিগ্রেন্টকে দেখা যায় দিনভর ভোট দিতে। অনেক ভোট কেন্দ্রে বাংলাদেশিরা পোল ওয়ার্কার হিসেবে কাজ করেন। এসব এলাকায় বাইরে সাইনে এবং ব্যালট পেপারে বাংলায় নির্দেশনা ছিল।

এরই মধ্যে ফোনে রবোকল আসতে শুরু করে। রবোকলের মেসেজে বলা হয়, ‘ঘরে থাকুন নিরাপদে থাকুন’। মানুষকে ভোট দিতে যেতে অনুৎসাহিত করা এই ফোন কলের উৎস সন্ধানে নেমে পড়ে এফবিআই। এফবিআই নেমে পড়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রবোকল আসা বন্ধ হয়ে যায়। উল্লেখ্য সম্প্রতিকালের ইতিহাসে এত বেশি সংখ্যক ভোট দিয়েছেন এমন নজির নেই। আজকের ভোট প্রদানের আগেই আগাম ভোট দিয়েছেন ১০ কোটি ২৭ লাখ ৩৭ হাজার ৫২২ জন। আরও বিপুল সংখ্যক মানুষ ভোট দিয়েছেন বলে নিউজ টিভিগুলো জানাচ্ছে।

সন্ধ্যায় সিএনএন প্রথমবারের মতো এক্সিট পোলের তথ্য জানালো। ভোট দিয়ে বেরিয়ে আসা ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, তারা ভোট দিয়েছেন করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি মাথায় রেখে। অর্থনীতি ছিল দ্বিতীয় স্থানে। সিএনএন ভাষ্যকর মন্তব্য করেন করোনাভাইরাস প্রসঙ্গ সামনে আসার অর্থ ভোট ট্রাম্পের বিপক্ষে যাওয়া।

সন্ধ্যা ৭টার পর প্রথম ভোট কেন্দ্র বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রথম ফলাফল আসে কেন্টাকি থেকে। এটা অবধারিত ট্রাম্প স্টেট। ফলে ফলাফল তার পক্ষেই। মধ্যরাত পর্যন্ত হয়ত প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে জানা যাবে কে হতে যাচ্ছেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। কিন্তু, অ্যাবসেন্ট ব্যালট নি জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়া, সবচেয়ে বড় সমস্যা হবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি হেরে যাওয়া সত্ত্বেও নিজেকে জয়ী ঘোষণা করেন। কিনি সে আভাসও দিয়ে রেখেছেন। সংঘর্ষের সূচনা হয়ত সেখান থেকেই শুরু হতে পারে বলে অনেকেই আশংকা করে বলে আসছেন। আর রাত আমেরিকায় হয়ত বেশিরভাগ মানুষই জেগে থাকবেন গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা নিয়ে।

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে বিজয়ী হতে প্রার্থীর প্রয়োজন ২৭০ ইলেকটরাল ভোট। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন পেয়েছেন ২২৩টি ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ১৭৪টি ভোট।

পপুলার ভোট যিনি যতোটাই পান না কেনো বিজয়ী হতে প্রার্থীকে ২৭০টি ইলেকটরাল ভোট পেতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাথমিক ভোট গণনায় বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য ফ্লোরিডা, টেক্সাস, নর্থ ক্যারোলিনা, ওহিও, পেনসেলভেনিয়া রাজ্যগুলোতে এগিয়ে রয়েছেন। ফ্লোরিডায় ইলেকটোরাল ভোট ২৯, টেক্সাসে ৩৮ ও পেনসেলভেনিয়ায় ২০।

ট্রাম্প ইতোমধ্যে বিজয়ী হয়েছেন মিসিসিপি, আলাবামা, সাউথ ক্যারোলিনা ও টেনেসি রাজ্যে।

বাইডেন বিজয়ী হয়েছেন ভার্জিনিয়া, ইলিনয়স, মেরিল্যান্ড, ম্যাসাচুসেটস রাজ্যে।

এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফলে বাইডেন এগিয়ে আছেন। কিন্তু, ফলাফল দেওয়া বাকি থাকা রাজ্যগুলো থেকে ট্রাম্পের এগিয়ে থাকার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

4h ago