বদলি নেমে বার্সেলোনাকে জয়ে ফেরালেন মেসি
ম্যাচের শুরুতে অধিনায়ক লিওনেল মেসিকে একাদশে রাখেননি কোচ রোনাল্ড কোমান। অধিনায়ককে ছাড়া ঠিক গুছিয়ে উঠতে পারছিল না দলটি। একের পর এক সহজ মিসে প্রথমার্ধ শেষ হয় সমতায়। শঙ্কা জাগে আরও একটি জয়হীন ম্যাচের। দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামেন মেসি। আর তাতেই বদলে যায় পাশা। জোড়া গোল করে দলের সহজ জয় নিশ্চিত করেন এ আর্জেন্টাইন। ফলে লা লিগায় টানা চার ম্যাচ পর জয়ে ফিরল কাতালানরা।
ক্যাম্প ন্যুতে শনিবার রিয়াল বেটিসকে ৫-২ গোলের ব্যবধানে হারায় বার্সেলোনা। মেসির জোড়া গোলের পাশাপাশি বার্সার হয়ে গোল পেয়েছেন উসমান দেম্বেলে, আতোঁয়ান গ্রিজমান ও পেদ্রি। বেটিসের হয়ে গোল পেয়েছেন অ্যান্তনিও সানাব্রিয়া ও লোরেঞ্জো মরন।
এদিন শুরু থেকেই অবশ্য ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিল বার্সেলোনার। কিন্তু ফরোয়ার্ডের ব্যর্থতায় প্রথমার্ধে কাঙ্ক্ষিত গোল পায়নি দলটি। পঞ্চম মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারতো বার্সা। ডান প্রান্ত থেকে আনসু ফাতির কাটব্যাক থেকে গ্রিজমানের নেওয়া শট অল্পের জন্য লক্ষ্যে থাকেনি। পরের মিনিটেও সুযোগ ছিল তাদের। এবার গ্রিজমানের পাস থেকে ফাতির নেওয়া শটও অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
অবশ্য অষ্টম মিনিটে পিছিয়েও পড়তে পারতো বার্সা। অবিশ্বাস্য এক সেভ করে দলকে সে যাত্রা রক্ষা করেন গোলরক্ষক মার্ক-আন্দ্রেস টের স্টেগেন। কর্নার থেকে পাওয়া বল দারুণ এক হেড নিয়েছিলেন উইলিয়াম কার্বালহো। তবে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার হেড ঠেকিয়ে দেন বার্সা গোলরক্ষক। তিন মিনিট পর সের্জিও বুসকেতসের বাড়ানো বলে ডি-বক্সে ঢুকে দারুণ এক কোণাকোণি শট নিয়েছিলেন গ্রিজমান। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার, এবারও বল একেবারে বারপোস্ট ঘেঁষে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
ছয় মিনিট পর বেটিসের আলেক্স মারেনোর নেওয়া দূরপাল্লার কোণাকোণি শটও লক্ষ্যে থাকেনি। ২২তম মিনিটে উসমান দেম্বেলের অসাধারণ এক গোলে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। গ্রিজমানের পাস থেকে ডান প্রান্তে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে তিন ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে বুলেট গতির শটে লক্ষ্যভেদ করেন এ ফরাসি।
২৭তম মিনিটে দেম্বেলের পাস থেকে গ্রিজমানকে দারুণ ব্যাকপাস দেন পেদ্রি। ফাঁকায় বল পেয়ে যান গ্রিজমান। কিন্তু এবার তার শট বারপোস্টে লেগে বেরিয়ে গেলে ফের হতাশ হতে হয় তাকে। ছয় মিনিট পর স্পটকিক থেকেও গোল আদায় করে নিতে পারেননি গ্রিজমান। ডি-বক্সের মধ্যে ফাতিকে ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েছিলেন রেফারি। তার শট ঠেকিয়ে বেটিস গোলরক্ষক ক্লাদিও ব্রাভো।
প্রথমার্ধের একেবারে শেষ মুহূর্তে সাবেক দুই বার্সেলোনা খেলোয়াড়ের নৈপুণ্যে সমতায় ফেরে বেটিস। বাঁ প্রান্ত থেকে তিন বার্সা খেলোয়াড়ের মাঝ দিয়ে ক্রিস্তিয়ান তেয়োর দেওয়া কাটব্যাক থেকে দারুণ এক শটে লক্ষ্যভেদ করেন অ্যান্তনিও সানাব্রিয়া।
দ্বিতীয়ার্ধে আনসু ফাতির জায়গায় মেসিকে মাঠে নামান কোমান। তাতেই আক্রমণের ধার বেড়ে যায় স্বাগতিকদের। চার মিনিটে ফলও পায় দলটি। ফের এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। জর্দি আলবার ক্রসে দারুণ এক ডামি করে গ্রিজমানকে বল ছেড়ে দেন ফাঁকায় থাকা মেসি। ফাঁকা পোস্টে এবার লক্ষ্যভেদ করতে কোনো ভুল করেননি এ ফরাসি। অ্যাসিস্ট না করেও এ গোলের মূল কৃতিত্ব অধিনায়কেরই।
৫৮তম মিনিটে মেসির ব্যাকপাস থেকে দেম্বেলের শট থেকে একেবারে গোললাইন থেকে ফেরান আইসা মেন্দি। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায় কনুই দিয়ে বল ঠেকিয়েছিলেন তিনি। যে কারণে ভিএআর যাচাই করে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন রেফারি। আর দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে বহিষ্কার হন মেন্দি। সফল স্পটকিকে ব্যবধান বাড়ান মেসি। চলতি মৌসুমে এটা তার ষষ্ঠ গোল। আর সব কয়টি গোলই এসেছে পেনাল্টি থেকে।
৭১তম মিনিটে গোল পেতে পারতেন পেদ্রি। মেসির কাটব্যাক থেকে পাওয়া বলে ভালো শট নিয়েছিলেন এ তরুণ। তবে অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। দুই মিনিট পর ফের ব্যবধান কমায় ১০ জনের বেটিস। বাঁ প্রান্ত থেকে এর কাটব্যাক থেকে জোরালো শটে লক্ষ্যভেদ করেন মরন। ৭৯তম মিনিটে বদলি খেলোয়াড় ত্রিনকাওয়ের দূরপাল্লার গোড়ানো শট ঝাঁপিয়ে লুফে নেন বেটিস গোলরক্ষক ব্রাভো।
তিন মিনিট পর সের্জিও রোবার্তোর ব্যাকপাস থেকে ডি-বক্সে ঢুকে জোরালো এক শটে লক্ষ্যভেদ করেন মেসি। পেনাল্টি ছাড়া চলতি মৌসুমে এটা তার প্রথম গোল। পরের মিনিটে আরও একটি গোল দিয়েছিলেন মেসি। তবে রোবার্তো অফসাইডে থাকায় বাতিল হয় সে গোল। অবশ্য ৮৮তম মিনিটে হ্যাটট্রিক পূরণ করার দারুণ সুযোগ ছিল মেসির। ডি-বক্সে ডান প্রান্ত থেকে তার নেওয়া শট দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন বেটিস গোলরক্ষক।
দুই মিনিট পর বার্সার জার্সিতে প্রথম গোল পান পেদ্রি। রোবার্তোর আড়াআড়ি পাস থেকে একেবারে ফাঁকায় বল পেয়ে যান এ তরুণ। আলতো শট বল জালে জড়ান এ মিডফিল্ডার। ম্যাচের যোগ করা মিনিটের চতুর্থ মিনিটে ব্যবধান কমাতে পারতো বেটিস। কিন্তু আবারও বাধা হয়ে দাঁড়ান বার্সা গোলরক্ষক টের স্টেগেন। মরনের হেড দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন তিনি। ফলে বড় জয়ই নিশ্চিত হয় কাতালানদের।
সাত ম্যাচে এটা বার্সেলোনার তৃতীয় জয়। ১১ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার অষ্টম স্থানে উঠে এলো দলটি। হারলেও দুই ম্যাচ বেশি খেলা রিয়াল বেটিস ১২ পয়েন্ট নিয়ে বার্সার ঠিক উপরেই সপ্তম স্থানে অবস্থান করছে। বার্সার চেয়ে এক ম্যাচে বেশি খেলে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে রিয়াল সোসিয়েদাদ।
Comments