দণ্ডিত থাকবেন পরিবারের সঙ্গে, হাইকোর্টের যুগান্তকারী রায়

মাদক মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত শরীয়তপুরের মতি মাতবরকে কারাগারে না পাঠিয়ে বাড়িতে প্রবেশনে পাঠিয়ে সংশোধনের সুযোগ দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
ফাইল ফটো

মাদক মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত শরীয়তপুরের মতি মাতবরকে কারাগারে না পাঠিয়ে বাড়িতে প্রবেশনে পাঠিয়ে সংশোধনের সুযোগ দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি জাফর আহমেদের হাইকোর্টের একক বেঞ্চ আজ রোববার এ রায় দেন। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে হাইকোর্টে প্রবেশন বিশেষ আইনে প্রথম রায়। রায়ে প্রবেশনের সুযোগ চেয়ে আনা আবেদন গ্রহণ করে আসামির রিভিশন পিটিশন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।

মতি মাতবরকে যে শর্তগুলো মানতে হবে, ৭৫ বছরের বৃদ্ধ মায়ের যত্ন নিতে হবে। দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলের লেখাপড়া চালিয়ে নিতে হবে। আইন অনুসারে নির্ধারিত বয়সের আগে মেয়েকে বিয়ে দিতে পারবেন না।

আদালতে আসামির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে আদালতের আদেশের বিষয়টি জানান।

তিনি বলেন, ‘এ ধরণের আদেশ দেশের বিচার ব্যবস্থায় যুগান্তকারী ও নজিরবিহীন।’

‘দণ্ডিতকে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের অধীনে দেড় বছর প্রবেশনে থাকাকালীন উল্লেখিত তিনটি শর্ত পালন করতে হবে’, যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আসামি মতি মাতবরের পাঁচ বছরের সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে দায়েরকৃত রিভিশন মামলার রায়ে আসামির সাজা বহাল রেখে প্রবেশন দেন। আজ আদালতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা প্রবেশন অফিসার মো. আজিজুর রহমান মাসুদ। আদেশের পরপরই আসামিকে তাৎক্ষণিকভাবে তার তত্ত্বাবধানে দিয়ে দেওয়া হয়। শর্ত ভাঙ্গলে তার প্রবেশন বাতিল হবে বলেও আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন।’

মামলার বিবরণে জানা যায়, মতি মাতবর এবং অপর একজন আসামির কাছে ৪১১ পিস এবং ৭০০ পিস ইয়াবা উদ্ধারের অভিযোগে ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বরে ঢাকার কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়। পুলিশ আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর চার্জশিট দাখিল করে। এই মামলায় ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি যুগ্ম মহানগর হাকিম আদালত আসামিদের পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। মতি মাতবর ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর গ্রেপ্তারের পর দীর্ঘ ২০ মাস কারাভোগ করেন। ২০১৭ সালের ৯ জুলাই হাইকোর্ট তাকে জামিন দেন।

বিচারিক আদালতের রায়ে সংক্ষুব্ধ হয়ে মহানগর দায়রা আদালতে ফৌজদারি আপিল করা হয়। ২০১৭ সালের ১১ মে আপিল শুনানি নিয়ে অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখেন। পরে আসামি মতি মাতবর ২০১৭ সালের ১ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগে রিভিশন মামলাটি দায়ের করেন।

আইনজীবী শিশির মনির জানান, রিভিশনের শুনানিতে আসামি পক্ষে এ মামলায় প্রবেশন অধ্যাদেশ ১৯৬০ এর ধারা ৫ অনুযায়ী আদেশ দেওয়া যেতে পারে বলে আর্জি পেশ করা হয়।

এ আইনজীবী বলেন, ‘যেহেতু তার এটিই প্রথম অপরাধ এবং আর কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো রেকর্ড নেই, তিনি ভবিষ্যতে কোনো অপরাধ করবেন মর্মে ধারণা করার মতো কোনো তথ্যও নেই। সে কারণে তিনি প্রবেশন আইনে সুযোগ পেতে পারেন। এ আবেদনের শুনানি নিয়ে চলতি বছরের ৭ অক্টোবর ১০ দিনের মধ্যে আসামির নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং টিন নম্বর খুলে দিতে অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতি, ঢাকাকে নির্দেশ দেন। এ আদেশের আলোকে পদক্ষেপ নিয়ে ২১ অক্টোবর ঢাকা জেলার প্রবেশন অফিসার হাইকোর্টকে অবহিত করেন। পরে আদালত আসামির বিষয়ে আরও একটি (এন্টিসিডেন্ট রিপোর্ট) প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন। এ আদেশ অনুসারে প্রবেশন কর্মকর্তা ২ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে আসামির স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করা হয়।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh Public Administration Ministry's Logo

2 deputy commissioners among 3 transferred ahead of polls

The Ministry of Public Administration today announced transfers of at least three government officials, including two deputy commissioners, ahead of the upcoming national parliamentary election

2h ago