শ্বেতি ছোঁয়াচে কিংবা মারাত্মক রোগ নয়

শ্বেতি নামে পরিচিত রোগটিকে চিকিৎসার পরিভাষায় ভিটিলোগো বলা হয়ে থাকে। এটি ত্বকের বিবর্ণজনিত একটি রোগ, যা ছোঁয়াচে কিংবা মারাত্মক নয়, তবে সৌন্দর্যহানি ঘটিয়ে থাকে অবশ্যই। সাধারণত যাদের গাঢ় বা শ্যামলা বর্ণের ত্বক, তাদেরই বেশি দেখা দেয়। শিশু, বয়স্ক, নারী, পুরুষ সবাই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। শরীরের যেকোনো স্থান শ্বেতি আক্রান্ত হতে পারে, এমনকি চোখের ভ্রুসহ সমস্ত শরীর বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে।
vitiligo-11.jpg
স্টার ফাইল ছবি।

শ্বেতি নামে পরিচিত রোগটিকে চিকিৎসার পরিভাষায় ভিটিলোগো বলা হয়ে থাকে। এটি ত্বকের বিবর্ণজনিত একটি রোগ, যা ছোঁয়াচে কিংবা মারাত্মক নয়, তবে সৌন্দর্যহানি ঘটিয়ে থাকে অবশ্যই। সাধারণত যাদের গাঢ় বা শ্যামলা বর্ণের ত্বক, তাদেরই বেশি দেখা দেয়। শিশু, বয়স্ক, নারী, পুরুষ সবাই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। শরীরের যেকোনো স্থান শ্বেতি আক্রান্ত হতে পারে, এমনকি চোখের ভ্রুসহ সমস্ত শরীর বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে।

পৃথিবীব্যাপী এ রোগে আক্রান্তের হার ১-২ শতাংশ, তবে এশিয়ান ও আফ্রিকানদের মধ্যে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। ঝুঁকিপূর্ণ রোগ না হলেও সৌন্দর্যহানি এবং সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা কমে যাওয়ার কারণে আক্রান্তরা মানসিক হীনমন্যতায় ভুগে থাকেন। আক্রান্তদের অনেকে অপচিকিৎসার শিকার হয়ে থাকেন। কেউ কেউ আবার শ্বেতি আর কুষ্ঠ একই রোগ বলে ভুল ধারনা পোষণ করেন। কুষ্ঠ একটি জীবাণুঘটিত সংক্রামক রোগ কিন্তু শ্বেতি তা নয়।

কীভাবে বুঝবেন

এ রোগে ত্বকের এক বা একাধিক স্থানে রং হালকা থেকে দুগ্ধ সাদা হয়ে যেতে পারে। রং পরিবর্তন ছাড়া সাধারণ অন্য কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগের প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত স্থানে হালকা চুলকানি অনুভূত হতে পারে। এটি খুব ধীরগতিতে বিস্তার লাভ করলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে খুব দ্রুত বিস্তার ঘটতে পারে। শরীরের যেকোনো স্থান শ্বেতি আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত মুখ, কনুই, হাঁটু, হাত, পা এবং কোমরে বেশি দেখা যায়।

কীভাবে শ্বেতি হয়

ত্বকে মেলানিন নামে এক ধরনের পিগমেন্ট/রঞ্জক থাকে, যার কারণে রং গাঢ় বা ফর্সা হয়। যাদের ত্বকে মেলানিন বেশি তারা কালো এবং যাদের কম তারা ফর্সা হয়ে থাকেন।

সারা শরীরে একই অনুপাত বা ঘনত্বে মেলানিন থাকে, যা ত্বকের বর্ণ হিসেবে প্রকাশ পায়। মেলানোসাইট নামে একধরনের কোষ মেলানিন উৎপাদন করে থাকে। কোনো কারণে মেলানিন নষ্ট বা তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটলে নির্দিষ্ট স্থানে বিবর্ণ হতে থাকে। শ্বেতি আক্রান্ত স্থানে ত্বকের অন্য স্বাভাবিক স্থানের চেয়ে মেলানিন কম বা থাকে না।

কী কারণে হয়

শ্বেতির নিশ্চিত কোনো কারণ অদ্যাবধি জানা যায়নি। তবে প্রধান দুটি কারণ হলো বংশগত (১০-১৫ শতাংশ) এবং শরীরে এক ধরনের স্ব-প্রণোদিত প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়ায় স্থানভেদে মেলানিন উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়াও, আরও কিছু কারণে শ্বেতি হতে পারে।

রোগ: থাইরয়েড গ্রন্থির রোগ, ডায়াবেটিস এবং বিশেষ ধরনের রক্ত শূন্যতা।

পুষ্টিজনিত ঘাটতি: যা কোনো রোগ অথবা খাদ্যজনিত কারণে হতে পারে।

ত্বকে সংক্রমণ বা আঘাতজনিত।

অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও রৌদ্রতাপ।

কিছু ওষুধ ও রাসায়নিক পদার্থ।

প্রতিরোধ: শ্বেতির প্রকৃত কারণ না জানার কারণে প্রতিরোধ করার কোনো উপায় অদ্যাবধি আবিষ্কৃত হয়নি।

জটিলতা: সাধারণভাবে এটি কোনো জটিলতা তৈরি করে না। তবে রোদে পুড়িয়ে যাওয়া বা সান বার্ন এবং ত্বকের ক্যান্সারের সামান্য ঝুঁকি রয়েছে।

চিকিৎসা: এ রোগের কোনো নিশ্চিত চিকিৎসা এখন পর্যন্ত নির্ণীত হয়নি। চিকিৎসার মাধ্যমে কোনো কোনো ক্ষেত্রে শ্বেতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি আপনাআপনি ভালো হয়ে যায়। নানা উপায়ে শ্বেতির চিকিৎসা করা হলেও ফলাফল খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। শ্বেতির চিকিৎসা সাধারণত যেভাবে করা যায়, সেগুলো হলো:

খাবার ঔষধ এবং ত্বকে ব্যবহার করার ঔষধের মাধ্যমে।

আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি এবং লেজার চিকিৎসার মাধ্যমে।

শ্বেতির সম্ভাব্য কারণসমূহ নির্ণয় করে সেটির চিকিৎসা। যেমন: পুষ্টিজনিত ঘাটতি বা থাইরয়েড রোগের চিকিৎসা।

সার্জারির মাধ্যমে মেলানিন উৎপাদনকারী কোষ মেলানোসাইট গ্রাফট বা সম্পূর্ণ স্কিন গ্রাফট।

মনে রাখবেন, কুষ্ঠ এবং ত্বকের আরও কিছু রোগে ত্বক বিবর্ণ হতে পারে। ত্বকের কোনো স্থান বিবর্ণ বা সাদা হয়ে গেলে তা শ্বেতি বা অন্য কারণে হয়েছে কী না, সেটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। শ্বেতির লক্ষণ প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাথমিক অবস্থাতেই চিকিৎসা নিলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

কুষ্ঠ রোগের সঙ্গে শ্বেতির কোনো সম্পর্ক নেই এবং এটি কোনো ছোঁয়াচে বা মারাত্মক রোগ নয়। শ্বেতি রোগে আক্রান্তের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করুন এবং দৈনন্দিন স্বাভাবিক জীবনযাপনে উৎসাহিত করুন।

লেখক: ডা. এম আর করিম রেজা, ত্বক, সৌন্দর্য ও সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ

Comments

The Daily Star  | English
Raushan Ershad

Raushan Ershad says she won’t participate in polls

Leader of the Opposition and JP Chief Patron Raushan Ershad today said she will not participate in the upcoming election

1h ago