হোয়াইট হাউজ ছাড়ার আগে কী করতে পারেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি। সেদিনই শপথ নেবেন নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি/এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি। সেদিনই শপথ নেবেন নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

শেষের এই কয়েক সপ্তাহে কী কী করতে পারেন সদ্য নির্বাচনে হেরে যাওয়া ট্রাম্প? তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

কেউ বলছেন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার সর্বোচ্চ প্রকাশ ঘটাতে পারেন, কেউ বলছেন নুতন প্রেসিডেন্টের জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করে রেখে যেতে পারেন।

ব্লুমবার্গের সাংবাদিক জাস্টিন সিংক আজ এক কলামে বলেন, ওভাল অফিসে প্রায় সব প্রেসিডেন্টই শেষ সময়ে সর্বোচ্চ ক্ষমতার চর্চা করে গেছেন। আগামী দুই মাসে ট্রাম্প তার প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের জন্য প্রেসিডেন্ট অফিস হয়তো আরও কঠিন করে তুলতে পারেন।

হতে পারে ২০ জানুয়ারি তার অফিস ছাড়ার আগে তিনি তার শত্রুদের ছাঁটাই করবেন কিংবা তার মিত্রদের ক্ষমা করবেন। প্রেসিডেন্সিয়াল ক্ষমতার বলয়ের মধ্যে নতুন নিয়ম তৈরি করার শঙ্কাও রয়েছে।

সাউথওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এমিলি সিডনর বলেন, একজন প্রেসিডেন্ট যখন অসফল হয়ে ওঠেন তখন নির্বাহীদের ওপর তার ক্ষমতা প্রয়োগের যোগ্যতা কম থাকে।

ট্রাম্পের জন্য প্রেসিডেন্সিয়াল ব্যবহার শেখা বেশি জরুরি ছিল বলে মনে করেন অনেকেই।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তার ট্যাক্স রিটার্ন প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, বিচারবিভাগকে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের শায়েস্তা করার জন্য ঠেলে দিয়েছেন, চার বছরে তিন জন চিফ অব স্টাফকে বরখাস্ত করেছেন। তার শাসনামলে ইউরোপের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন এবং ইউক্রেন সরকারকে জো বাইডেনের বিরুদ্ধে 'দুর্নীতির' ব্যাপারে তদন্তের জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগে অভিশংসনের মুখেও পড়েছেন।

এতো কিছুর পর শনিবার যখন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেন কাঙ্ক্ষিত ইলেকটোরাল ভোট নিশ্চিত করেন, ট্রাম্প জানিয়ে দেন এখনও নির্বাচনের অনেক বাকি। অনেক রাজ্যেই তিনি ভোটের ফলাফল চ্যালেঞ্জ করবেন। কোনো প্রমাণ না থাকলেও তার দাবি ভোটে কারচুপি হয়েছে। তবে ট্রাম্পের চ্যালেঞ্জ নির্বাচনের ফল উল্টে দেবে না, এই বাস্তবতা বিবেচনায় হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের কর্মীদের অনেকেই পদত্যাগের প্রস্তুতি শুরু করেছেন।

এদিকে, নিজের প্রশাসনের সদস্যদের বিরুদ্ধে নিবার্চনে ‘যথেষ্ট’ রাজনৈতিক সহায়তা না করার অভিযোগ তুলে তাদের দেখে নেবেন বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প।

বিশেষ করে মেডিকেল উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের বিশেষ ক্ষোভ রয়েছে। গত সোমবার এক র‍্যালিতে দেশটির সংক্রামক ব্যাধি বিষয়ক শীর্ষ বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউচিকে বরখাস্ত করা নিয়ে সমালোচনা উঠলে, ট্রাম্প নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষার হুমকি দেন।

যদিও বাইডেন জানিয়ে রেখেছেন ফাউচিকে ট্রাম্প বরখাস্ত করলে তিনি তাকে পুনর্নিয়োগ দেবেন।

একইভাবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার, সিআইএ পরিচালক জিনা হাসপালকে বরখাস্ত করতে পারেন শেষ সময়ে এবং এফবিআই পরিচালক ক্রিস্টোফার রে এবং অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বারের ওপরও যে তিনি নাখোশ তাও আকারে প্রকারে জানিয়েছেন ট্রাম্প।

সাধারণ ক্ষমা

প্রেসিডেন্ট হিসেবে শেষ সময়ে অনেকেই বিতর্কিত সব সাধারণ ক্ষমা করে গেছেন। জর্জ বুশ ইরান কেলেঙ্কারি ইস্যুতে ছয় কর্মকর্তাকে সাধারণ ক্ষমা করেন, বিল ক্লিনটন ডেমোক্র্যাটের বড় দাতা মার্ক রিচকে ক্ষমা করেন, বারাক ওবামা উইকিলিকসে তথ্য ফাঁসে দণ্ডিত চেলসি ম্যানিংকে সাধারণ ক্ষমা করেন।

এদিক দিয়ে ট্রাম্প কী করেন সেটাই দেখার পালা। পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী ট্রাম্প এসব বিষয়ে খুব একটা লজ্জাশরমের ধার ধারবেন বলে মনে করছেন না তার সমালোচকেরা।

ট্রাম্পের সাধারণ ক্ষমার সম্ভাব্য তালিকায় ধারণা করা হচ্ছে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন ও দলের সাবেক ক্যাম্পেইন চেয়ারম্যান পল ম্যানাফোর্টের জন্য যারা বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন তারা থাকবেন।

অভিবাসী নীতিতে পরিবর্তন

গত কয়েক মাস ধরেই অভিবাসী নীতিতে পরিবর্তনের কথা জানিয়েছেন ট্রাম্প। তার যাওয়ার আগে দেশটিতে অবৈধ অভিবাসীদের জন্য আরও কঠোর নীতি করতে পারেন, আসতে পারে নতুন কোনো নির্বাহী আদেশও।  

করোনা টিকার সিদ্ধান্ত  

করোনার তাণ্ডবে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র। রোগ নিয়ে নানা সময়ে নানা নেতিবাচক মন্তব্যে সমালোচিত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এখনও টিকার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। যাওয়ার আগে করোনা টিকা নিয়ে প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। করোনা ভ্যাকসিনের কাজ যেহেতু শেষের পথে, ট্রাম্প সেই সুযোগ নিয়ে ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়ে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখার ব্যবস্থা করতে পারেন। আবার ট্রাম্প বার বার এই অভিযোগ করছিলেন যে, ইলেকশনের আগে ভ্যাকসিন যেন না আসতে পারে সেজন্য এফডিএ সব চেষ্টা করেছে। সে কারনে তিনি এই ঘোষণা দেয়া থেকে নিজেকে সরিয়েও নিতে পারেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।  

ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস ছেড়ে যাওয়ার আগে এমন নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা সর্বত্র। শেষ সময়ে কী করবেন ট্রাম্প? তবে গত মাসে পেনসিলভেনিয়াতে এক প্রেসিডেনসিয়াল ক্যাম্পেইনের র‍্যালিতে ট্রাম্প বলেন, “আপনারা মনে করেন এটি খুব আনন্দের? এর আগে আমার বেশ সুখের একটা জীবন ছিল, খুব সুন্দর। তখন আমি যেখানে খুশি যেতে পারতাম, যা খুশি তাই করতে পারতাম।”

Comments

The Daily Star  | English

Fashion brands face criticism for failure to protect labour rights in Bangladesh

Fashion brands, including H&M and Zara, are facing criticism over their lack of action to protect workers' basic rights in Bangladesh, according to Clean Clothes Campaign (CCC)..One year after a violent crackdown by state actors and employers against Bangladeshi garment workers protesting

6m ago