মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা বাইডেনের
মহামারি করোনা মোকাবিলাকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দেবেন যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার দলের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শনিবার পেনসেলভেনিয়ায় জয়ের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত ‘জয়’র লক্ষ্যে পৌঁছান ডেমোক্রেটের প্রার্থী বাইডেন। যদিও এখনো কয়েকটি রাজ্যে ভোট গণণা চলছে, তবে ৫৩৮টি ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০টি ভোট ইতোমধ্যেই তিনি পেয়েছেন। নিউইয়র্ক টাইমসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন ২৭৯টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছেন। আর রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ২১৪টি। তবে, কোনো কোনো গণমাধ্যম অ্যারিজোনায় বিজয় দেখিয়ে বাইডেনের ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যা ২৯০ দেখিয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, এখনো জর্জিয়া, অ্যারিজোনা, উত্তর ক্যারোলিনা ও আলাস্কার ফল ঘোষণা বাকি রয়েছে। রাজ্যগুলোতে মোট ৪৫টি ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে। এর মধ্যে জর্জিয়া ও অ্যারিজোনায় বাইডেন এবং উত্তর ক্যারোলিনা ও আলাস্কায় ট্রাম্প এগিয়ে রয়েছেন। উত্তর ক্যারোলিনা ও আলাস্কায় ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা যথাক্রমে ১৫টি ও তিনটি।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা নেওয়ার পর বাইডেনের পরিকল্পনায় করোনা মোকাবিলাই সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে উল্লেখ করে তার দল জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে আরও বেশি করোনা পরীক্ষা করা হবে এবং আমেরিকানদের জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হবে। এ ছাড়াও, অর্থনীতি, জাতিগত বৈষম্য ও জলবায়ু পরিবর্তনেও বেশ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনো ‘পরাজয়’ স্বীকার করেননি, তবে শনিবার বাইডেনের ‘জয়’ নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই নিজেদের পরিকল্পনাগুলো নিয়ে এগোচ্ছে ডেমোক্রেট দল। আগামী জানুয়ারিতে বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণ করবেন।
ডেমোক্রেটের পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন কর্তৃক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে নেওয়া কিছু নীতিতেও পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে— প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে পুনরায় যোগ দেওয়া; বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করা; সাতটি দেশ, যেগুলোর বেশিরভাগই মুসলিম দেশ, সেগুলোর জনগণের ওপর আরোপিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা; কাগজপত্র ছাড়া শিশু হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা অভিবাসীদের ইমিগ্রেসনের অনুমতি দিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামার নীতি পুনর্বহাল করা।
ইতোমধ্যেই এসব পরিকল্পনা ভিত্তিক একটি ওয়েবসাইটর চালু করেছে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর প্রথম ভাষণে জো বাইডেন জানান, গভীরভাবে বিভক্ত হয়ে পড়া যুক্তরাষ্ট্রকে ‘সারিয়ে তোলা’র সময় হয়েছে। শনিবার রাতে ডেলাওয়ার রাজ্যের উইলমিংটনে উৎসবমুখর সমর্থকদের সামনে বাইডেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ কথা বলেছেন। তারা আমাদের একটি সুস্পষ্ট বিজয় এনে দিয়েছেন।’
রিপাবলিকানদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা যারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলেন, আমি আপনাদের হতাশা বুঝতে পারছি। আমি নিজে কয়েকবার হেরেছি। কিন্তু, এখন আসুন আমরা একে অপরকে সুযোগ দেই। এখন আমাদের কঠোর বাকবিতণ্ডা না করে, একে অপরের দিকে তাকানোর সময়, একে অপরের কথা শোনার সময়।’
জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির করোনা রিসোর্স সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, করোনায় বিশ্বে সবচেয়ে আক্রান্ত ও মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় এক কোটি মানুষ, মারা গেছেন প্রায় আড়াই লাখ এবং সুস্থ হয়েছেন প্রায় ৩৯ লাখ মানুষ।
আরও পড়ুন:
আমেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট বাইডেন
ট্রাম্পকে পরাজয় মেনে নেওয়ার পরামর্শ স্ত্রী ও জামাতার
হোয়াইট হাউজ ছাড়ার আগে কী করতে পারেন ট্রাম্প
আইনি লড়াইয়ের অর্থ সংগ্রহ করছেন ট্রাম্প, পরাজয় মানবেন না
‘আসুন আমরা একে অপরকে সুযোগ দিই’ ট্রাম্প সমর্থকদের বাইডেন
Comments