প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থায় আসছে আমূল পরিবর্তন

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় ব্যাপক পরিবর্তন আনাতে পিইসিই ও সমমান এবং জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল করতে পারে সরকার। একই সঙ্গে মাধ্যমিকে বাতিল হতে পারে বিজ্ঞান, মানবিক এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগগুলো।
প্রতীকি ছবি। স্টার ফাইল ফটো

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় ব্যাপক পরিবর্তন আনাতে পিইসিই ও সমমান এবং জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল করতে পারে সরকার। একই সঙ্গে মাধ্যমিকে বাতিল হতে পারে বিজ্ঞান, মানবিক এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগগুলো।

২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হতে যাওয়া একটি পাঠ্যক্রমের নতুন রূপরেখায় এছাড়াও রয়েছে আরও অনেক পরিবর্তনের প্রস্তাব।

এতে শুধুমাত্র দশম শ্রেণীর পাঠ্যক্রমের ভিত্তিতে মাত্র পাঁচটি বিষয়ে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষা হবে দুটি ভাগে। একটি একাদশ শ্রেণীতে এবং অপরটি দ্বাদশ শ্রেণীতে।

জাতীয় পাঠ্যক্রম এবং পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) খসড়াটিতে অষ্টম শ্রেণীর জেএসসি বা সমমান এবং পঞ্চম শ্রেণীর পিইসিই পরীক্ষা রাখার জন্য কোনও প্রস্তাব দেওয়া হয়নি।

এনসিটিবি সদস্য (পাঠ্যক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা দশম শ্রেণির আগে কোনও পাবলিক পরীক্ষার প্রস্তাব দেইনি। তবে সরকার যদি এর আগে কোনও পাবলিক পরীক্ষা নিতে চায় তো নিতে পারে।’

এনসিটিবির কর্মকর্তারা বলছেন, পিইসিই এবং জেএসসি পরীক্ষা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অনেক চাপের মধ্যে রাখে। এর পরিবর্তে বিদ্যালয়ে নিয়মিত মূল্যায়নের ওপর জোর দেওয়া হবে।

পিইসিই পরীক্ষা চালু হয়েছিল ২০০৯ সালে এবং জেএসসি ২০১০ সালে। অনেক শিক্ষাবিদ এই পরীক্ষা দুটোকে অপ্রয়োজনীয় বলে অভিহিত করেছেন এবং শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি চাপ দেওয়ার সমালোচনা করেছেন।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ বলেন, ‘স্কুলের সব ক্লাস শেষ করে একটি পাবলিক পরীক্ষা হওয়া উচিত। অল্প বয়সী শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষাই যথেষ্ট।’

নতুন প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, এসএসসি পরীক্ষা হবে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সামাজিক বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানের ওপর। বাকি মূল্যায়ন হবে স্কুলেই।

এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে দুটি দফায়। পরবর্তীতে দুটি ফলাফল সমন্বয় করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রস্তুত করা হবে।

নবম ও দশম শ্রেণিতে দুই বছর পড়ার পর ১০টি বিষয়ে শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষা দেয়। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর সিলেবাস শেষ করে মোট ১২টি বিষয়ে শিক্ষার্থীরা এইচএসসি পরীক্ষা দেয়।

কয়েক দশক ধরে নবম শ্রেণী থেকেই শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান, মানবিক এবং ব্যবসায় শিক্ষা থেকে একটি বিভাগ বেছে নিতে হয়। বোর্ড কর্মকর্তাদের মতে, এটি শিক্ষার্থীদের ওপর অপ্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করছে।

একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বাধ্যতামূলক বাংলা, ইংরেজি এবং আইসিটির পাশাপাশি বিজ্ঞান, মানবিক এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে অন্য তিনটি বিষয় বেছে নিতে পারবে। এর পাশাপাশি তারা ভোকেশনাল কোর্স থেকে একটি বিষয় বেছে নেবে।

সর্বশেষ ২০১২ সালে কারিকুলাম সংশোধন করা হয়েছিল।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা জানান, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে স্কুল পর্যায়ে বিজ্ঞান, মানবিক এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ নেই। স্কুল লেভেলের সব শিক্ষার্থীর একই জ্ঞান থাকা উচিত।

নতুন রূপরেখায় স্কুলের সাপ্তাহিক ছুটি শুধুমাত্র শুক্রবারের পরিবর্তে শুক্রবার ও শনিবার করা প্রস্তাব করা হয়েছে।

এনসিটিবি মতামতের অপেক্ষায়

গত বৃহস্পতিবার নিজেদের ওয়েবসাইটে খসড়া প্রস্তাবটি আপলোড করে স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে মতামত চেয়েছে এনসিটিবি।

এনসিটিবি চেয়ারম্যান জানান, যে কেউ ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত ইমেইলের মাধ্যমে তাদের মতামত জানাতে পারবেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা স্টেকহোল্ডারদের মতামত পাওয়ার পরে নতুন পাঠ্যক্রমটি চূড়ান্ত করব এবং জাতীয় পাঠ্যক্রমের সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) কাছে দিব।’

যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম

অধ্যাপক মশিউজ্জামান জানান, নতুন পাঠ্যক্রমটিতে তাত্ত্বিক জ্ঞানের চেয়ে দক্ষতার ওপর বেশি জোর দেওয়া হবে।

শিক্ষার আধুনিকীকরণের কোনও বিকল্প নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Israel's genocide in Gaza

How the US is arming Israel's genocide in Gaza

US weapons, provided with visible enthusiasm to the Israeli occupation forces, are being used to commit war crimes and genocide in Gaza.

10h ago