‘সিনিয়র অফিসার বলেছিল তুমি চলে যাও’

‘আমাকে এক সিনিয়র অফিসার বলছিল, তুমি এখন চলে যাও। দুই মাস পরে আইসো। তখন মোটামুটি ঠান্ডা হয়ে যাবে,’ ভারতের অভ্যন্তরে খাসিয়াদের হাতে আটক হওয়ার পর তাদের জেরার মুখে এ কথা বলেছেন সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়ির বরখাস্তকৃত ইনচার্জ আকবর হোসেন ভুইয়া।
গত ১১ অক্টোবর ওই ফাঁড়িতে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়ে রায়হান আহমদ নামের এক যুবকের মৃত্যু হলে তিনি গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে গিয়েছিলেন।
আজ সোমবার সকালে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ ইউনিয়নের ডোনা সীমান্তের ওপারে ভারতের অভ্যন্তরে একটি খাসিয়া পল্লীর স্থানীয়রা তাকে আটক করে।
পরে তারা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এক বাসিন্দার কাছে হস্তান্তর করার পর ওই ব্যক্তি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন বলে বিজিবি ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সূত্রে জানা যায়।
এদিকে আকবরের আটকের কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
এরকম একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন খাসিয়া যুবক তাকে বেঁধে দাঁড় করিয়ে রেখে নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে আকবর তার উত্তর দেন।
রায়হানের মৃত্যুর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ইচ্ছা করে মারিনি, একা মারিনি। রিমান্ড দিছিল পাঁচ ছয় জন, এজন্য মরে গেছে।’
সে কী করেছিলো জিজ্ঞেস করা হলে আকবর বলেন, ‘সে টাকা ছিনতাই করেছিল, আমরা তার জান নেইনি। পাবলিক মারছিল, আমরা হাসপাতালে নিয়ে গেছি, ওখানে মারা গেছে’।
তার পালিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘আমারে সাসপেনশন করছে, গ্রেপ্তার করতে পারে। তো বলছে যে দুইমাস পরে ঠান্ডা হয়ে যাবে, ঠান্ডা হয়ে গেলে পরে এটা হ্যান্ডেল করা যাবে’।
পরে আবার বলেন, ‘আমারে এক সিনিয়র অফিসার বলছিল তুমি এখন চলে যাও, দুই মাস পরে আইসো। ততদিনে মোটামুটি এইটা ঠান্ডা হয়ে যাবে’।
ভারতে কোনদিকে কীভাবে পালিয়েছিল জিজ্ঞেস করলে আকবর বলেন, ‘ইন্ডিয়ার একটা পরিবার বলছিলো তুমি এদিকে এসে থাকো এখানে। মাঝেরগাঁও ভোলাগঞ্জ দিয়ে’।
মাঝেরগাঁও ভোলাগঞ্জ সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার একটি এলাকা।
পরের আরেকটা ভিডিওতে দেখা যায় খাসিয়া যুবকদের সাথে বাংলাদেশিও কয়েকজন আছে। আকবরের বাঁধন খুলে দিয়ে নতুন করে হাতে বাঁধা হচ্ছে।
এদিকে আকবরকে আটকের ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে বিকেল ৫টায় সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে।
পিবিআই সিলেটের বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ খালেদ-উজ-জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘জেলা পুলিশ আকবরকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করলে আমরা তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করব’।
আরও পড়ুন-
আকবরনামা: এক অসৎ পুলিশের আখ্যান
পুলিশের নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ: অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা
রায়হান হত্যা: সিসি ক্যামেরার ফুটেজে গণপিটুনির প্রমাণ নেই
রায়হান হত্যা: দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদন হস্তান্তর
রায়হান হত্যা: গ্রেপ্তার পুলিশ কনস্টেবল ৫ দিনের রিমান্ডে
রায়হান হত্যায় পুলিশ কনস্টেবল গ্রেপ্তার
রায়হান হত্যা: পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত কমিটি গঠন
Comments